ধারাবাহিক: নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণ ২০০৯ —এর একটি পর্ব
যাক, ফরেস্টারের থাপ্পড় খেতে হয়নি, কিন্তু যেই ফরেস্টার আর তার সহযোগীর দেখা আমরা পেয়েছি, তাঁদেরকে দেখে হতাশা ঢেকে জায়গা হয়েছে হাসপাতালসদৃশ সাইক্লোন শেল্টারে। আর তাঁরাই আজকে নিয়ে চলেছেন কেওড়ার ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের গভীরে, হরিণ দেখাবেন বলে।
ফরেস্টার আমাদেরকে পথ দেখাচ্ছেন। আর অস্ত্রমানবকে (gunman 😉) তিনি অন্যদিকে যেতে বললেন। তখনও বুঝিনি চাচা মিয়া (আমাদের ফরেস্টার) ঠিক কী করতে চলেছেন। ম্যানগ্রোভ বিশ্রী একটা জঙ্গল। শ্বাসমূলের ভিতর দিয়ে এগোন চাট্টিখানি কথা নয়। চোখ সারাক্ষণ থাকতে হয় নিচের দিকে। তাও আমাদের সাতজনমের ভাগ্য যে, এখানে কাদা, জল কিছুই নেই। শুকনো, কুয়াশাভেজা মাটি দিয়ে হাঁটছি আমরা। কিন্তু তবু, মেঝেতে যদি লাখ লাখ বর্শা গেঁথে কেউ বলে ‘হেঁটে বেড়াও’ তাহলে নিজেকে যেমন সার্কাসের দঁড়াবাজ মনে হবে, তেমনি সুকৌশলে পা তুলে তুলে, শ্বাসমূলের ফাঁকে ফাঁকে পা ফেলে এগোতে হয় ম্যানগ্রোভে। মনুষ্যসৃষ্ট জঙ্গলে যদি এই অবস্থা হয়, প্রাকৃতিক জঙ্গলে কী হবে?
আজকে অবশ্য শীতের পোষাক ছেড়ে এসেছি সবাই-ই। আমার হাতে রিফাতের থেকে ধার করে নেয়া ক্যামেরাটা। নাকিবের সাথে ওর ক্যামেরা। মাঝে মাঝে ছবি তুলছি আর এগোচ্ছি। কোথাও নিচু ডাল নিজেরা নিচু হয়ে পার হচ্ছি। কিন্তু জঙ্গলটা ফাঁকা ফাঁকা। আকাশ দেখা যায় – খাঁটি জঙ্গুলে স্বাদটা ঠিক দিতে পারছে না।
তবে একটা বিষয় উপেক্ষা করা যাবে না, এখানে দাঁড়িয়ে যদি ঐইই যে ওখানটাতে তাকান, দেখবেন গাছের পর গাছ এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করে রেখেছে বাইরের জগত থেকে। অর্থাৎ আপনি জঙ্গলের ভিতরে থাকলে বাইরের জগৎ থেকে কেউ আপনাকে দেখছে না, সুতরাং আপনার বিপদ হলে আপনাকে খুঁজে বের করাও তার জন্য রীতিমতো খড়ের গাঁদায় সূঁচ খোঁজার মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়াবে।
ইদানিং জঙ্গলে ঢোকার পর ডাকাতরা ঘিরে ধরে ছিনতাই করে। বড় দল না হলে কিংবা নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে জঙ্গলে যত্রতত্র বেড়াতে না যাওয়াই উত্তম হবে
আমরা এগোতে থাকলাম। ফরেস্টার আমাদের সাথে নিচু স্বরে কথা বলছেন। আমরাও ইশারা বুঝে নিজেদের সাথে নিচু স্বরে কথা বলছি। কারণ আমাদের অবস্থান হরিণদের বুঝাতে দিতে চাচ্ছি না। হরিণদের কান খুব খাড়া থাকে, সামান্য শব্দে এরা হকচকিয়ে উঠলে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌঁড়ে পালাবে। কোনোভাবেই তাদেরকে আগে থাকতে টের পেতে দেয়া চলবে না। জঙ্গলে মিশে গিয়ে পথ চলার অন্যতম কৌশল তাই, নীরবতা।
আমরা এগিয়ে চললাম। আরেকটু সামনে এগিয়ে মাটিতে হাঁড় পড়ে থাকতে দেখলাম। বুঝলাম এটা হরিণের – সম্ভবত উরুর কোনো হাঁড়। মারাও যেতে পারে, আবার কেউ শিকার করেও খেতে পারে। তবে এই জঙ্গলে, সুন্দরবনের মতো রয়েল বেঙ্গল টাইগার নেই। সম্ভবত বাঘমামাদের কেউই নেই। বনবিড়াল আছে কিনা জিজ্ঞেস করিনি। তাই হরিণটা প্রাকৃতিকভাবেই মারা গেছে ধরে নিয়ে এগোলাম।
আরো সামনে এগিয়ে মাটিতে বেশ কিছু পায়ের ছাপ দেখতে পেলাম। তবে তুলনামূলক শক্ত মাটিতে হওয়ায়, মনে হচ্ছে প্রচুর আঁচড়ের দাগ। আসলে হরিণের পালের চলার পথ এটি। অনেকগুলো হরিণের পায়ের ছাপ একটা আরেকটাকে মাড়িয়ে দিয়েছে। তারমানে আমরা হয়তো পালের কাছাকাছি আছি।
আরো সামনে এগিয়ে পড়লো একটা নালা। নালায় পানি আছে। নালার উপরে একটা গাছের গুঁড়ি পড়ে আছে কিংবা ফেলা হয়েছে। ওটার উপর দিয়ে কোনো কিছু না ধরেই পেরিয়ে যেতে হয়। দলের সবাই-ই দারুণভাবে পার হয়ে গেলো। কোথাও মাকড়সার জাল শীতের সূর্যের আলোয় চকচক করছে, আর কোথাওবা মুখেই প্যাঁচিয়ে গেলো মাকড়সার জাল।
একটা পর্যায়ে আমরা খোলা জায়গামতো একটা স্থানের কাছাকাছি আসতেই চাচামিয়া আমাদেরকে ধীর হতে বললেন। জায়গাটার মাঝখানে চ্যানেলের মতো, কিন্তু তলাটা প্যাঁচপ্যাচে কাদাময়। বোঝাই যায়, শীতকাল বলে জোয়ারের পানি অল্পই আসে এখানে। কিংবা মিষ্টি জলই হয়তো বেরিয়ে যায় এখান দিয়ে। এই প্যাঁচপ্যাঁচে কাদায় আমরা নামলাম না, কিন্তু দেখতে পেলাম ওখানটাতে হরিণের পায়ের ছাপ প্রচুর। এই চ্যানেল ধরেই হাঁটলাম আমরা কিছুক্ষণ। তারপরই একটা সময়…
আমরা হরিণের দেখা পেলাম। ঐইইই যে, ঐ গাছগুলোর আড়ালে আড়ালে বাদামি শরীরের সাদা ফুটফুট ডোরাকাটা চলমান প্রাণীগুলো ডান থেকে বাম দিকে দৌঁড়ে চলেছে। নাকিব ওর ক্যামেরার যুম কাজে লাগিয়ে কয়েকটা ছবি তুলতে পারলো অবশ্য। কোনো কোনোটা আবার সাহসী, দাঁড়িয়ে কান খাড়া করে আমাদের দিকে তাকায়। তারপর আবার স্বপথ ধরে।
ব্যস, আমাদের হরিণ দেখা শেষ। ঐতো হরিণ দেখলাম। আমি অন্তত তৃপ্ত। আমরা আবার জঙ্গলের কিছুটা ভিতর দিয়ে চলতে থাকলাম। বুঝলাম বেরোবার জন্য যাচ্ছি।
কিন্তু আমাদের হরিণ দেখা যে এখনও বাকি, সেটা আমার জানা ছিল না। চাচা মিয়ার প্ল্যান ছিল ভিন্ন। তিনি অস্ত্রমানবকে পাঠিয়েছেন আরেকদিকে, যাতে ঐ ব্যক্তি হরিণদেরকে তাড়িয়ে আমাদের দিকে নিয়ে আসতে পারেন। সেটা বুঝলাম আরো বেশ খানিকটা সময় পরে।
এবং হঠাৎই দূউউর দিয়ে এক ঝাঁক হরিণের আসার শব্দ আমরা পেতে শুরু করলাম। আমি কিভাবে যেন বুঝে ফেললাম হরিণগুলো কোনদিকে যাবে। সাথে সাথে আমি অদ্ভূত একটা কাজ করে বসলাম, যা কোনো সুস্থ মস্তিষ্ক মানুষ কখনও করবে কিনা আমি জানি না।
আমি শ্বাসমূলের সূঁচালো বর্শার বিছানার মধ্যেই দৌঁড় দিলাম। ঝাড়া দৌঁড়…
আমার হাতে ধরা রিফাতের ছোট্ট ক্যামেরাটা। শ্বাসমূলের ভিতর দিয়ে দৌঁড়াচ্ছি – এই ব্যাপারটাই আমার মাথায় নেই তখন। শ্রেফ মস্তিষ্কটা একটা বানরের কাছাকাছি চলে গেছিলো বলা যায়। মানে বানররা একটা গাছের ডাল ছেঁড়ে দিলে সেকেন্ডের ভগ্নাংশের ভিতর আরেকটা গাছের ডাল খুঁজে নেয় সাপোর্ট নেয়ার জন্য, তেমনি আমারও, একঝাঁকের পর একঝাঁক শ্বাসমূলের ফাঁকে পা ফেলার ফাঁক খুঁজে বের করছে চোখ সেকেন্ডের ভগ্নাংশে আর শরীরকে নির্দেশ দিচ্ছে পা কোন ফাঁকে ফেলবে। আমার চোখ নিচের দিকে কিন্তু লক্ষ্য সামনে। আমি যেদিকে যাচ্ছি, আর হরিণের আওয়াজটা যেদিকে এগিয়ে আসছে, আমাদের দুপক্ষের দেখা হবে সামনে। আমিও প্রাণপণে দৌঁড়ে চলেছি, কোথায় দৌঁড়াচ্ছি, কোথায় পা ফেলছি – এসব বিবেচনা করবার মতো চিন্তাটাও মাথার কোণায় নেই। সামনে হরিণেরা আসছে, ওদের সাথে মোলাকাত করতে হবে।
এভাবে ১ মিনিটমতো দৌঁড়েছি মনে হয়, যদিও মনে হচ্ছে ১ ঘন্টা দৌঁড়েছি, সামনে একটা খোলামতো জায়গা দেখতে পাচ্ছি মনে হলো – ঠিক ঐ চ্যানেলের মতো আরকি। আমি দৌঁড়ে চলেছি শ্বাসমূলের ভিতর দিয়ে। তখন আমি আড়চোখে দেখলাম, বিশাল একটা হরিণের পাল এগিয়ে আসছে…। আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতেই হাতে ধরা ক্যামেরাটা অন করার জন্য মুহূর্তের জন্য চোখটা মেঝে থেকে সরিয়েছি, আর অমনি…
যা ঘটার, তা ঘটে গেলো। শ্বাসমূলে পা আটকে, ক্যামেরাসুদ্ধ আমি ধুড়ুম করে একটা আছাড় খেলাম। আছাড় খেয়েও হাঁটু মুড়ে উঠে বসেছি সাথে সাথে। হাতে ফিতা দিয়ে প্যাঁচানো ছিল বলে ক্যামেরাটা আছাড় খেয়েও উড়ে চলে যায়নি। ক্ষুরের টগোডো টগোডো আওয়াজ তুলে হরিণের বিশা-ল একটা পাল জান বাঁচাতে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌঁড়ে চলেছে আমার ঠিক দুই হাত দূর দিয়ে। এই দৃশ্য দেখছি কাউকে বললে বিশ্বাস করবে না। সাথে সাথে ক্যামেরাটা অন করতে বোতামে চাপ দিলাম। কিন্তু বিধি বাম। ক্যামেরাটা বোধহয় নষ্ট হয়ে গেছে আছাড় খেয়ে। কোনোভাবেই অন করতে পারলাম না। পাক্কা দশ থেকে পনেরো সেকেন্ডের মতো সময় ধরে বিশাল হরিণের পালটা আমাকে পাশ কাটিয়ে গেলো। আমি যদি ক্যামেরা তাক করার দিকে মনোযোগ না দিতাম, তাহলে অন্তত প্রাণ ভরে হরিণের পালকে কাছ থেকে দেখতে পারতাম। কিন্তু ক্যামেরাটার কী হলো সেদিকে খেয়াল করায় হরিণের বিশাল পাল শ্রেফ আমার সামনে দিয়েই গেল, উপভোগ আর করা হলো না। ক্যামেরাটা অন হলোই না। হরিণেরা স-ব চলে গেলো। হারিয়ে গেলো জঙ্গলে।
আমি এবার শরীরে ব্যথা অনুভব করলাম। তাকিয়ে দেখলাম, জীবনে নিশ্চয়ই কোনো পূণ্য করেছিলাম, নাহলে আমার নিচে শ্বাসমূলগুলো কমে এসেছিল কেন? আসলে খোলা জায়গার কাছাকাছি চলে এসেছিলাম বলে এখানে শ্বাসমূলগুলো বেশ ছোট, কোনো কোনোটা একটু নরম। আমার সাথে সংঘর্ষে কোনো কোনোটা ভেঙে গেছে। আমার ভাগ্য ভালো, ওগুলো না ভাঙলে আমাকে বাজেভাবে জখম করতো। বলতে গেলে কিছুই হয়নি। হাতে সামান্য ছড়ে গেছে – ব্যস, আর জোরে আছাড় খাওয়ায় শরীরে ব্যাথা পেয়েছি – এর বেশি কিছু না। কিন্তু তারও চেয়ে ব্যথা পেয়েছি মনে – এতোগুলো হরিণকে এতোটা কাছে পেয়েও না পারলাম একটা ছবি তুলতে, না পারলাম মন ভরে উপভোগ করতে। আর রিফাতের ক্যামেরাটার কথা যদি বলি, তাহলে আমার এখন মাটির তিনহাত নিচে সেঁধিয়ে যাওয়া উচিত। বন্ধুকে গিয়ে কী জবাব দিবো?
আমার ভ্রমণসঙ্গীদের কাছে ফিরে গিয়ে নিজের দুর্দশার কথা বললাম। কেউ বিশ্বাস করলো কিনা জানি না। কিন্তু পাগলের মতো আমাকে দৌঁড়াতে সবাই-ই দেখেছে। ওরা হয়তো দূর থেকে হরিণের আবছা অবয়ব দেখলেও দেখতে পারে, গাছপালার ফাঁক দিয়ে যদি কিছু দেখা যায়। যাহোক, ব্যর্থ মনোরথ আমরা এবার জঙ্গল থেকে বেরোবার উদ্যোগ নিলাম। পথ দেখালেন আমাদের চাচামিয়া অরফে ফরেস্টার। হাঁটতে হাঁটতে একসময় আমরা একটা চ্যানেল ধরে হেঁটে রাস্তায় উঠে এলাম।
আমি হাঁটছি আর ক্যামেরাটা গুতাচ্ছি। কী জবাব দিবো বন্ধুকে? এবং একসময় ক্যামেরাটা আমাকে আশ্চর্য করে দিয়ে হঠাৎই চালু হয়ে গেলো। একটা ছবি তুলে দেখলাম ছবিও উঠছে। ডিসপ্লেতে দেখাও যাচ্ছে। তারমানে ক্যামেরাটা ঠিক হয়ে গেছে। আমি যার-পর-নাই আশ্চর্য হলাম। একদিকে যেমন খুশিতে ডগোমগো হয়ে গেলাম, অন্যদিকে প্রচণ্ড বিষাদে মনটা ভরে উঠলো: ইশ্, ঠিকই যদি আছিস, তো সময়মতো কেন চালু হলি না? এই আক্ষেপ আমার আজীবনেও যাবে না।
আমরা রাস্তায় উঠে এলাম। এখান দিয়ে একটা বড়সড় খাল বয়ে যাচ্ছে। এটাই ম্যানগ্রোভে গিয়ে খাড়িমতো হয়ে গেছে। রাস্তায় খালের উপরে একটা পাকা করা কালভার্ড। কালভার্ডের কাছেই কয়েকটা শিশুকে পাওয়া গেলো, ওরা ছোট ঠ্যালা জাল দিয়ে মাছ ধরছিলো। নাকিব ওদের একটা ছবি তুলে নিলো একত্র করে। ওরাও খুশি।
চাচামিয়াসহ আমরা সবাই-ই কালভার্ডে, বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলাম। এমন সময় অনেকগুলো গরুর একটা দলকে তাড়িয়ে নিয়ে আসছিলো এক রাখাল। রাস্তাটা পার হয়ে তারা জঙ্গলের ওদিকটায় যাচ্ছে ঘাস খেতে। জিরিয়ে নিয়ে আমরাও উঠে পড়লাম। গোসল করতে হবে…
দ্বীপে এসেছি, আর গোসল যদি করি বাথরুমে, তাহলে তো কিছুই হলো না – নদীর জলে গোসল না হলে আর চলে না। আমার এখন আর মনে পড়ছে না, আমরা বোধহয় সকালে আসার সময়ই নিজেদের জামাকাপড় সাথে করে একটা ব্যাগে নিয়ে এসেছিলাম, একবারেই গোসল করে যাবো। চাচামিয়াকে নাকিব আমাদের মনোবাঞ্ছা বলার সাথে সাথেই চাচামিয়া বললেন, গোসল করা যাবে। যাবে – তো পথ দেখান।
চাচা মিয়া আমাদেরকে নিয়ে, তার ঘরের কাছাকাছি, রাস্তার ডানদিকে নেমে গেলেন। শুরু হলো ধানী জমি ধরে আমাদের হাঁটা। চাচামিয়া – দ্যা গ্রেট লীডার আমাদেরকে নদীতে নিয়ে যাচ্ছেন গোসল করার ব্যবস্থা করে দিতে। আমি আর আফজাল ভাই সামনে থেকে তাঁকে অনুসরণ করছি। মাথার উপরে শীতের রোদ, তার মধ্যে আমরা এতক্ষণ জঙ্গলে ঘুরে ঘর্মাক্ত, তার উপর এই ধানী জমিতে অ্যাবড়োখেবড়ো মাটিতে হাঁটা – সুখকর হবার কথা না।
আমরা যত সামনে এগোচ্ছি, মাটি নরম হতে শুরু করলো। একটা পর্যায়ে আমাদের চামড়ার স্যান্ডেলগুলো হাতে তুলে নিতে বাধ্য হলাম আমরা। সামনের ঐইই লতাগুল্মগুলো যা-ই নজরে আসছে স্পষ্ট একটা কাদার স্তর দেখতে পাচ্ছি আমরা সেগুলোতে। তারমানে ওখানে পানি আসে, আর সেই পানির কাদা লেগে আছে লতাপাতায়। চাচামিয়াও স্যান্ডেল খুলে হাতে নিলেন, প্যান্ট সামান্য উপরে তুলে নিলেন, সামনে কাদা…।
কাদায় পা রেখে হাঁটছিলাম আমরা ঠিকই, কিন্তু সামনে এখনও যতটা পথ আছে, আর যেদিকে চাচামিয়া নিয়ে যাচ্ছেন আমাদেরকে তাতে ব্যাপারটা আমাদের কাছে খুব একটা সুখকর মনে হলো না।
আমরা সবাই-ই বুঝতে পারছিলাম, ব্যাটা ফরেস্টার আমাদেরকে গোসলে নিয়ে যাচ্ছে না, নিয়ে যাচ্ছে কাদায় ডুবিয়ে মারতে…
(আগামী পর্বে সমাপ্য…)
এবারই প্রথম পর পর ৪ দিনে প্রকাশিত হচ্ছে ৪টি পর্ব। চোখ রাখুন নিশাচর-এ। প্রতিদিন রাত ১০টায়। শেষ পর্ব আগামী কাল, ইনশাল্লাহ।
এই পর্বে, বিশেষ করে শুরুর দিকে লেখায় কিছুটা কাব্যিক ছন্দের ছোঁয়া পেলাম। গল্পের চাকা চলতে চলতে মাঝ পথে ঘটনার প্রভাবে দ্রুত চলতে থাকলো। তারপর……….আকাম! অতঃপর ঘটনার প্রভাবে হতাশা, অপরাধবোধ, অবসন্নতায় প্যাঁচপ্যাঁচে কাদায় স্নানের উদ্যেশে নদীর খোজে চলা; ধীর লয়ে। এই পর্বে নদী দেখা না গেলেও পরের পর্বে দেখা যাবে এবং বলা যাবে আরও কিছু। এই আশ্বাস দিয়ে পাঠককে খানিকটা বিরতি নিতে বলে এই পর্বের ইতি টানা। ভালো। দিকবিদিক শূন্য হয়ে দৌড়ালেও গল্পের গাড়ি মুখ থুবড়ে পড়েনি বরং চলাটা ছিলো রিদমিক, মোনোটোনাস নয়।
যা ধারনা করেছিলাম তাই। আকাম একটা ঘটিয়েই ছেড়েছেন এই পর্বে। দেখলেনতো, প্রকৃতি যেমন সুন্দর তেমনই প্রতিশোধ পরায়নও কখনো। তবে আপনার অন্তরে অপরাধ বোধের বীজ সুপ্তাবস্তায় ছিলো বলেই হয়তো প্রকৃতি আপনাকে ভালোবেশে অল্প ব্যাথার শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। যাতে পরবর্তীতে আপনার দ্বারা অনেকের মাঝে সতর্কতা জেগে ওঠে। এবং আপনিও একসময় কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ পান। নয়তো এমন অকপটে কয়জন নিজের ভুল স্বীকার করতে পারে? সাধুবাদ জানাই ভাই।
আরও কথা রয়েছে, জানার আছে কিছু। মোবাইলের চার্জ ২% দেখাচ্ছে। তাই আপাতত বিদায়।
শেষ পর্ব পড়ার জন্য বিশেষ আমন্ত্রণ, ভাই।