ধারাবাহিক: অজানা লেকের অভিযানে বান্দরবান —এর একটি পর্ব
গভীর রাত, তবে ঘুটঘুটে অন্ধকার নয়। আকাশে শুক্লপক্কের চাঁদ। কিন্তু চাঁদনী রাতের মহিমায় কালিমা লেপে পাড় এক মাতাল ঘুরে বেড়াচ্ছে ঘরের চারপাশময়। ছোট্ট একটা ঘরে গুটিশুটি দিয়ে ১০জন, তার মধ্যে একজন আবার ‘মেয়ে’। হঠাৎই… মাতালটা দরজার ফাঁক গলে ভেতরে ঢুকিয়ে দিলো ধারালো একখান দা…
“ট্যুর ক্যানসেল করা হোক। এতো ঝামেলা করে এতো হিসাব নিকাশ করে ট্যুর হয় না।” —এরকম একটা কথা বলে পুরো ভ্রমণ-পরিকল্পনাটাকেই বাতিল করে দিয়েছিলাম একটা পর্যায়ে। এবং জানার বিষয় হলো, তার মধ্যে কোনো ভুল ছিল না। কেন? জানা যাক—
২০১২ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি যে অফ-ট্র্যাক বান্দরবানের ইতি টেনেছিলাম, সেই ইতি কথার ইতিকথা যে ফুরায়নি, তারই রেশ এবারের পরিকল্পনা। উইকিপিডিয়ান তানভির মোর্শেদ আর তানভির রহমান পাগল করে ফেলছে বাংলাদেশের আনঅফিশিয়ালী সর্বোচ্চ পর্বত সাকা হাফং চূঁড়ায় পদচিহ্ন এঁকে দিবে। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ২১-২২-২৩ ফেব্রুয়ারি সরকারি বন্ধ: শহীদ দিবস-শুক্রবার-শনিবার। এর সাথে আরো দুটো দিন ছুটি নিলেই সাকা হাফং চড়া যায়।
ব্যস, ফেসবুকে ইভেন্ট-গ্রুপ খুলে নানা রকম আলোচনা চলতে থাকলো। সাকা হাফং ৬ দিন ছাড়া সম্ভব না, সেখানে “ভ্রমণ বাংলাদেশ”-এর তুক্খোড় ট্রেকার (শুধু ‘তুখোড়’ বললে অপমান করা হবে) আবু বকর সিদ্দিক আমাদেরকে ৪ দিনে সাকা সামিট করার র্যুট দিলে রীতিমতো পাগল হয়ে গেলাম। কিন্তু যখন আরো বিস্তারিত পরিকল্পনা করতে গেলাম, দেখা গেলো অনেকগুলো “যদি” এবং “কিন্তু”র উপরে ৪ দিনে সাকা সামিটের র্যুট পরিকল্পনাটা সাজানো। ওদিকে সঙ্গী রাসেলের আবার অফিস থেকে মাত্র ১ দিন ছুটি মিলবে।
যাহোক, রাসেলকে, অবিশ্বাস্য হলেও একটা কুবুদ্ধি দিলাম (অবশ্যই অন্যায় করে ফেললাম) যে, তুই ছুটি নে ১ দিন, কিন্তু আমাদের দরকার আরো এক দিন, তুই অফিসে না গিয়ে জানিয়ে দিবি তোর পক্ষে এর আগে ওতো রিমোট এরিয়া থেকে ফেরা সম্ভব হয়নি। (এবং এই কথাটুকু কিন্তু সত্যি, ওখান থেকে ফেরাটা সম্ভব না অত দ্রুত)
নানান রকম ধানাই-ফানাই করে অবশেষে ৪ দিনে সাকা সামিটের পরিকল্পনা গুছিয়ে হাক দিলাম। প্রস্তুত দুই উইকি-তানভির, আমার পরিচিত একজন ফারহান লতিফ, এক ছোট ভাই প্লাস ফটোগ্রাফার সাদাত আহমেদ, আর প্রথম থেকেই জাহিদুল হক রাসেল (অফ-ট্র্যাক বান্দরবানের ভিলেন)।
ওদিকে আমার ঘনিষ্ট বন্ধু, অফ-ট্র্যাক বান্দরবানের সঙ্গী নাকিব আহমেদ আবার বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বগা লেকে^ যেতে চাইছে বার্বিকিউ করে রাত্রিযাপন করতে। তাই তাকেও আরেকটা ফেসবুক গ্রুপ খুলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছিলাম (আমিইবা জানি কী, তার আবার পরামর্শ!)। তবে, পরামর্শটা এজন্য যে, এরা শহুরে, পাহাড়ে নতুন এবং প্রকৃতি-বিধ্বংসী কোনো কাজে যেন এরা অগ্রণী না হয় —এটা তাদেরকে আগেভাগে জানিয়ে দেয়া। শুনলাম ঐ দলে দুজন মেয়েও থাকবে। নাকিবকে সাবধান করে দিলাম, ‘ভাই, মেয়ে নিলে বুঝে-শুনে নিবি; একেতো এতোগুলো ছেলের মাঝে মেয়ে, তার উপর পাহাড়ের কঠোর কষ্টের পথচলা।’ তবে বন্ধু যখন ‘বগায় গাড়িপথ আছে’ বলে যুক্তি দেখালো, আমি আর মানা করলাম না।
এদিকে, সাকা হাফং-কে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত হিসেবে দাবিকারী প্রথমদিককার এক্সপেডিটরদের মধ্যে অন্যতম “নেচার অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব”-এর, বন্ধুবর সাজ্জাদ হোসেন তখন বেশ কিছুদিন ফিনল্যান্ডে কাটিয়ে বাংলাদেশে। সাকায় যাচ্ছি আর তার সাথে পরামর্শ করবো না, তা হতে পারে না। কিন্তু তার সাথে পরামর্শ করে ঐসব ‘কিন্তু’ আর ‘যদি’গুলো দূর হবার বদলে আরো যেন পাকাপোক্ত হলো।
শেষ পর্যন্ত তানভির রহমানের ‘বাধাতো আসবেই, তবু কিছুটা বাজি ধরেই বেরিয়ে পড়তে হবে মঈনুল ভাই’ কথাগুলো বেশ উদ্যোম দিলো। শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো আমরা বেরোচ্ছি অনিশ্চিতকে মাথায় নিয়েই।
এবারে পরিকল্পনা গোছানোর সময়:
দুটো দলই ঢাকা থেকে একসাথে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে রওয়ানা করবে। ২১ তারিখ ভোরে বান্দরবান পৌঁছাবে, তারপর দুই দলই একটা চান্দের গাড়ি ভাড়া করে রুমা হয়ে চলে যাবে বগায়। রুমা থেকে একজন গাইড নিয়ে নিতে হবে, আর তালিকায় নাম থাকবে সবার। তখনও বিষয়টা হবে, আমরা বগায় যাচ্ছি। কিন্তু বগাকাইন হ্রদে গিয়ে সাকা-দল চুপিচুপি বেরিয়ে যাবে কিওক্রাডাং-এর দিকে। সেখান থেকে রাতে ট্রেক করে হলেও কিওক্রাডাং^ পাড়ি দিয়ে, পাসিং পাড়া পার হয়ে ওপাশে গিয়ে নামবে সুনসান পাড়ায়। তারপর সেখান থেকে পরদিন ট্র্যাক শুরু হবে এ-দলের। এই দল সাকা হাফং সামিট করার পাশাপাশি নিকটবর্তি কয়েকটা খুম দেখে ফিরে আসবে।
এছাড়াও গুগল আর্থের মানচিত্রে একটা বিশেষ স্থানে একটা লেকমতো পানির আধার নজরে এসেছে আমার। যতদূর খবর জেনেছি ওদিকে কেউ যায়নি এখনও। তাই অজানা সেই লেক আবিষ্কারের একটা অভিপ্রায়ও আছে সাকায় যাওয়া দলটির, বিশেষ করে আমার।
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী যখন সব প্রস্তুত, তখন আমি কোনো এক অযাচিত দুর্ঘটনায় পড়ে মচকে ফেললাম ডান পায়ের গোড়ালি। ওদিকে সাদাতের মা অসুস্থ। আবু বকর আর সাজ্জাদ জানালো মেঘনা-গোমতী সেতু মেরামতের কাজের জন্য ফেব্রুয়ারির ১৬ থেকে ২২ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে, তাই বাস ঘুরে যাবে কুমিল্লার ভিতর দিয়ে: সুতরাং অতিরিক্ত সময় লাগবে কমপক্ষে আরো ৩ ঘন্টা। চারদিক থেকে যেন সমস্যাগুলো ঘিরে ধরতে থাকলো। তাই বিকল্প পরিকল্পনা করতে থাকলাম একের পর এক— এ-ই এক পরিকল্পনা, তো আধা ঘন্টা পরে আরেকটা; নিজেদেরকে স্থির রাখা যাচ্ছিল না কোনো সিদ্ধান্তে। পরিস্থিতিই বাধ্য করছিল এমনটা করতে। যেমন:
ফযরের নামাজ পড়ে গিয়ে ৩জন ট্রেনের টিকেটের জন্য দাঁড়ালাম যাত্রার তারিখের ১০দিন আগে। কাউন্টার থেকে জানালো ৯টার পরে। সকাল ৯টায় কাউন্টারে গিয়ে শোনা গেলো টিকেট শেষ। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি, রাসেল, আর ও’দলের নাকিব, ইফতি গেলাম ফকিরাপুলে। সেখানে সবাই প্রমাণসমেত জানালো তাদের কোনো সীট খালি নেই। আমাদের বড় একটা দল থাকাসত্ত্বেয় তারা আলাদা গাড়িও ব্যবস্থা করে দিতে পারবে না। শেষটায় রাস্তার এপারে এসে ঢুকলাম “রুপসী বাংলা”র কাউন্টারে, এবং গললো এবার বরফ: জানা গেলো তাদের নিজস্ব গাড়ি নয়, কিন্তু একটা গাড়ি ভাড়া করে দিচ্ছে তারা, ওটার টিকেট পাওয়া যাবে। সেই বাসটা যে ভালো হবে না, তা বুঝতে জ্যোতিষবিদ হতে হয় না; তা জেনেও সবাই টিকেট করে ফেলা মনস্থ করলো, এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি টিকেট নিশ্চিত করার কথা বলে ১৫টা সীটের বুকিং দেয়া হলো। এখানেও সমস্যা পিছ ছাড়লো না, বাস ঘুরপথে যাবে বলে টিকেটপ্রতি বাড়তি গুণতে হবে ৳৫০ [টাকা]। তাই জনপ্রতি ৳৬২০ [টাকার] টিকেট কাটা হলো ৳৬৭০ [টাকা] দিয়ে।
এবারে বান্দরবান থেকে রুমা বাজার কিংবা বগালেক পর্যন্ত চান্দের গাড়ি ভাড়া করার জন্য ফোন দিলাম আবু বকরের দেয়া পরিচিত ফোন নাম্বারে। ৳১০,০০০’র নিচে ঐসময় কোনো ড্রাইভার গাড়ি ছাড়বে না। সাজ্জাদ তখন তার লিংক কাজে লাগিয়ে ৳৭,০০০’য় একটা গাড়ির খবর দিলো, কিন্তু দুটো দলই মনে করলো সেটাও অনেক বেশি— ৳৪,০০০-এর উপর গাড়িভাড়া হওয়াই উচিত না। তাই আরেকটা পরিকল্পনা করলাম, বান্দরবান থেকে বাসে, আর বাস না পেলে হেঁটে হলেও রুমা যাবো, তবু দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে ঘুরতে যাবো না।
পরিকল্পনা এতোই ড্রামাটিক টার্ন নিচ্ছিলো যে, আমি শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত উত্তেজিত হয়ে প্রয়োজনে অতি সাধারণ লীনটু তাবু (Poncho lean-to shelter : পানি নিরোধক হেলানঘর) বানিয়ে জঙ্গলে থাকার জন্যও প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম; আর নিজেকে পরিপূর্ণভাবে সার্ভাইভাল পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়ার মতো করে প্রস্তুত করতে থাকলাম। বিয়ার গ্রিল্সের^ সার্ভাইভাল আমার রক্তে মেশানো।
এবারে গাইড ঠিক করা: পরিচিত গাইডদের ফোন দিলাম, তারাও ছুটির দিনগুলো সামনে রেখে গলা কাটার জন্য প্রস্তুত, বন্ধুদের দুঃসংবাদটা জানালাম এভাবে:
গাইডের চাকরি নিয়া বান্দরবান চলে যাওয়া দরকার। বহু পরিচিত গাইড বিকাশ এখন বগায়, তাই তাকে পাওয়া গেল না। তার বড় ভাই সুমনকে ফোন দিলাম, সাকা শুনে বললো ৳৬,০০০ (অবশ্যই প্যাকেজ)। তারপর বিকালে ফোন দিয়ে বললো, আমারে ফোন দেন, ট্যাকা নাই। ফোন দিলাম, সে ঠিক করে দিলো আমাদের বহুল পরিচিত আরেক গাইড আপেলকে। সাকা+খুম মিলিয়ে প্যাকেজে ডিমান্ড এবার ৳১৩,০০০। দুজনের সাথে ৳৩০ খুইয়ে, পামপট্টি দিয়ে, র্যুটের প্রত্যেকটা পাড়ার বিবরণ দিয়েও, রাতে ট্রেক করার বিবরণ দিয়েও নিরস্ত করা গেল না। “বহুল পরিচিতি” এবং “ভবিষ্যত ট্রেকারদের নিশ্চয়তা” দেয়াসত্ত্বেয় আপেল বাবাজি এক হাজার টাকা দয়া করে ৳১২,০০০ জানিয়ে দিল। লাইন কেটে গেল ট্যুঁট ট্যুঁট…।
মাথা যখন পুরোই বাক্সবন্দী, পরিকল্পনা সব তখন টালমাটাল; কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে থাকলাম।
এদিকে অফিসের কাজে আমাকে কয়েকদিন আগেই চলে যেতে হবে চট্টগ্রাম শহরে। ঠিক করলাম, আমি আর ফিরবো না, ওখান থেকেই দলের সাথে যোগ দিবো। সেখানে দুপুর-প্রায় ১১টা, অফিসের কাজে যখন মাথা কাজ করছে না, তখন আবু বকর ফোন দিয়ে জানালেন: “কী করবেন সবার সাথে পরামর্শ করেন; কাল রাত ঠিক ১০টায় যে বাস ছেড়ে গেছে, সেটা এখনও কুমিল্লা”।
মাথাটা এবার সত্যিই আর কাজ করতে চাইলো না। যাবার আগে আবু বকরকে বলছিলাম, ‘আমি খুব ভালো একজন ফলোয়ার, কিন্তু লীডার নই; এবারের ট্যুরে লীডার ছাড়া যেতে হবে মনে হলেই দুশ্চিন্তা হয়।’ তাই আগে অফ-ট্র্যাকে ট্রেক করা, এবং জানা-শোনা মানুষগুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা ‘আমার’ মাথাটা একটু বেশিই গরম হয়ে আছে ভ্রমণ-পরিকল্পনায়। কাটায় কাটায় সময় হিসাব করে যে ভ্রমণের পরিকল্পনা করা, সেখানে এভাবে মিস-শিডিউলিং, একের পর এক ঝামেলা, একের পর এক বিরক্তিজনক ন্যাইগেটিভ খবর দেখে দেখে আমি ত্যক্ত-বিরক্ত। ফেসবুকে জানিয়ে দিলাম এভাবে সাকা সম্ভব না, ভ্রমণ বাতিল করা হোক।
এই ধাক্কায় যুক্তিগ্রাহ্য সিদ্ধান্তে ট্যুর থেকে ছিটকে গেলো তানভির রহমান; ওদিকে তানভির মোর্শেদের শুরু হয়ে গেল বুয়েটের ক্লাস। আর সাদাতের জায়গা জুড়ে নিলো আরেকজন: তানভির মোকাম্মেল।রাসেল আর তানভির মোকাম্মেল জানালো ঘর থেকে বেরোন দরকার, জাহান্নামে হলে সেখানেও যাওয়া দরকার। তাই শেষ পর্যন্ত সাকা-দলে আমি, রাসেল, তানভির মোকাম্মেল আর ফারহান লতিফকে ধরে টীম সেট করে ট্যুর চূড়ান্ত করা হলো, তবে সাকা হবে না, হয়তো বগা লেকে ঘুরেফিরে ঢাকা ফিরতে হবে; সবাই সে মর্মেই রাজি।
২০ তারিখ রাতে ১০টার সময় বাসস্ট্যান্ডে সবাই: বগা’র দলের হয়ে গেলো ৬জন, শেষ মুহূর্তে যোগ হলো আরেকজন: সবে মিলে ৭জন। আর সাকা’র দলের হলো দুজন: রাসেল আর তানভির মোকাম্মেল। ফারহান লতিফ শেষ মুহূর্তে আটকে গেলেন তাঁর ক্যান্সার আক্রান্ত ফুফু’র শুশ্রূষায়— এজন্য তাঁর অনেক আফসোস। সাকা-দলে তাই আমি বাদে দুজন। চট্টগ্রাম থেকে সব খবরই নিচ্ছিলাম আমি ফোনে।
২০ তারিখ রাতটা থাকলাম চট্টগ্রামে কর্মরত ব্যাংকার বন্ধু নাজমুর রশিদের বাসায়। আন্টির আদর-যত্নের কমতি রইলো না। সকালে উঠে বন্ধুর স্পেশাল ডিমভাজা দিয়ে পেটপুরে নাস্তা খেয়ে বন্ধুকে নিয়ে প্রস্তুত হয়ে চলে এলাম চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে। এদিক দিয়েই যাবে ওদের বাস, ওদের সাথে একসাথে বান্দরবান যাবো আমিও। সাড়ে ১২টার দিকে বাস জিইসি পৌঁছালো। বান্দরবান পৌঁছাতে আল্লা’ মালুম কতক্ষণ…
বাসেই পরিচয় হলো মোট ১১ জনের সাথে: নাকিবের অফিসেরই ৪ কলিগের আরেকটা দলও একই বাসে করে বান্দরবান যাচ্ছে। আমি আর রাসেল চলন্ত বাসেই নিজেদের পরিকল্পনাটা গুছিয়ে নিতে চাইলাম। ব্যাগ থেকে গুগল আর্থ থেকে মার্ক করে প্রিন্ট করা ম্যাপটা বের করে আলোচনা করতে থাকলাম কোনদিকে যেতে হবে, কিভাবে সময়ের হিসাব মিলাতে হবে ইত্যাদি।
এই আলোচনা শেষ হলো কি হলো না, একসাথে দুই দুইটা দুঃসংবাদ:
- আমাদের বাসটা রাস্তার একপাশে এমনভাবে চেপে বাঁক ঘুরেছে যে, সামনে থেকে আগত একটা সিএনজিকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তা থেকে ছিটকে পাশের জমিতে ফেলে দিয়েছে। সোজা বাংলায়: একটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
- বগালেক থেকে সাজ্জাদের পরিচিত ছোট ভাই, যার কটেজ বুক করেছে নাকিবরা, সেই রবার্ট ফোন দিলো নাকিবকে: বগা লেকে আসবেন না, প্রধানমন্ত্রী বান্দরবান আসছেন, তাই বগা বন্ধ। আজকে রুমা থেকেও অনেক ট্যুরিস্টকে বিদায় করে দেয়া হয়েছে। (ঠিক একই রকমের একটা বিপদে পড়েছিলাম ২০০৮-এর বান্দরবান ভ্রমণে আমরা ৩ জন)
মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো: শুরু থেকেই এতো এতো এত্তো ঝামেলা এর আগে আর কোনো ভ্রমণে হয়নি। আর এই ভ্রমণে যেন এই ঝামেলা পিছুই ছাড়ছে না। …এখন কী করণীয়? এতোগুলো মানুষ, এতোটা স্বপ্ন, এতোগুলো অর্থ ব্যয়, সারা রাত ঘুরপথে কত কষ্ট করে আঁটোসাটো একটা বাসে করে এতটা দূরে পাড়ি জমানো – সব কি বৃথা হয়ে যাবে? শেষ পর্যন্ত বান্দরবান শহরে তিনগুণ ভাড়া দিয়ে ‘ফিডার খাওয়া’ (গাইডেড) ট্যুরিস্ট ট্যুর দিয়ে ফিরতে হবে? এক জনারণ্য থেকে আরেক জনারণ্যে গিয়ে হাঁস-ফাঁস করতে হবে?
না, যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ: সার্ভাইভাল গাইড থেকে বিপদে উপায় বের করার দীক্ষা নিয়েছি; এবার তার বাস্তব পরীক্ষা দিতে হলো— উপায় একটা বের হলোও… কিন্তু…
(চলবে…)
-মঈনুল ইসলাম
wz.islam@gmail.com
সত্যি অসাধারণ হইসে ভাই… একটা ছোট correction: সিএনজি টা ‘দিগবিদিক জ্ঞান হারিয়ে’ পরে যায় নাই, আমাদের মাতাল ড্রাইভার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিসে…eyewitness আমি আর দিবারা মাহবুব…পরের পর্বগুলোর জন্য অপেক্ষায় রইলাম
ধন্যবাদ আবির। বাংলায় লিখছো দেখে বেশি ভালো লাগলো।
উদ্ধৃতি অংশটুকু তোমাদের দুজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যের প্রেক্ষিতে “দিগবিদিক জ্ঞান হারিয়ে” থেকে বদলে “সিএনজিকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তা থেকে ছিটকে পাশের জমিতে ফেলে দিয়েছে” করা হলো। অনেক ধন্যবাদ সংশোধনের জন্য।
এত মজার মজার লেখা এখানে আর এতদিন জানতেই পারলাম না। মজা পাচ্ছি.