মহাকাশ নিয়ে আমার আগ্রহ সেই ছোটবেলা থেকেই, টেলিস্কোপ (বিস্তারিত) নামক বস্তুটি আমার বড় আরাধ্য, কিন্তু এখনও হয়নি কেনা। তবু মহাকাশ দেখা হয় ফেসবুকে, মহাকাশ দেখা হয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল, হিস্ট্রি চ্যানেল আর নাসার হাত ধরে। লিখেছি বেশ কিছু নিবন্ধও। এরই ধারাবাহিকতায় একদিন দেখলাম ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের একটা ডকুমেন্টারি “Journey to the Edge of the Universe” (“মহাকাশের প্রান্তে যাত্রা”)। এই প্রামাণ্যচিত্রটা দেখার পর ঢাকার নভোথিয়েটারের আকাশ পরিচিতিটা বড় মেকি লেগেছে আমার। এই প্রামাণ্যচিত্রটা এতোটাই জীবন্ত, এতোটাই প্রামাণ্য, এতোটাই গোছানো আর বিজ্ঞানসম্মত যে, সেদিন থেকেই ভাবছিলাম, কিভাবে এই প্রামাণ্যচিত্রটা দেখানো যায় বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে। কিন্তু কোনোভাবেই উদ্যোগটা নিতে পারছি না।
কারণ, বাংলাদেশের মানুষের কাছে তথ্যচিত্রটা বোধগম্য করার জন্য এর ভাষা হওয়া দরকার বাংলা। চিন্তা করলাম এই তথ্যচিত্রটা বাংলায় অনুবাদ করে ডাব করবো। কথা বললাম বন্ধু বোরহান সোহেলের সাথে, সে সখের বশে শর্ট ফিল্ম বানায়। সে আমাকে ধরিয়ে দিল বিষয়টা: একটা প্রচারযোগ্য ভিডিওকে ডাব করতে একটা বড় সমস্যা হলো এতে ভিডিও এবং অডিও লেয়ার দুটো একত্র (merge) করা থাকে। তার কথা থেকে বুঝতে পারলাম আমার উদ্দেশ্য সফল হবে না। কারণগুলো আবিষ্কার করলাম নিজে নিজে: একটা ভিডিওতে কমপক্ষে তিনটা লেয়ার থাকে:
- ভিডিও লেয়ার
- ধারাভাষ্যের বা বক্তব্যের লেয়ার
- এফএক্স লেয়ার বা আনুষঙ্গিক শব্দের লেয়ার
এখানে এই তিনটা লেয়ারই একত্র করা। আমি যদি বাংলায় ডাব করে সেই অডিও ফাইলটা তথ্য-চিত্রে জুড়ে দেই, তাহলে তা ঐ ইংরেজি ধারাভাষ্যের উপরে সুন্দর করেই বাংলা হয়ে যাবে কিন্তু একই সাথে ঢেকে দিবে আনুষঙ্গিক শব্দগুলোও, যেমন: শনির বলয় থেকে বেরোন শব্দ, বৃহস্পতির মেরুতে মেরুজ্যোতির র্যাডিয়েশনের ভোঁতা শব্দ, কিংবা একটা হাইপারনোভার বিকট শব্দও। এই শব্দগুলো ঢেকে গেলে এই ভিডিও’র কোনো মানেই থাকবে না।
কিন্তু আমাকে তো এই ভিডিও বাংলাদেশের মানুষের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে… কী করা যায়?
একদিন বন্ধু সাজ্জাদের কাছ থেকে বুঝে নিচ্ছিলাম টোরেন্ট জিনিসটা কী? তখনই সে আমাকে বলে দেয় মুভির ফাইল ডাউনলোড করার সময় .srt
(ডটএসআরটি) ফাইল থাকলে সেটাও ডাউনলোড করে নিস, এটা হলো সাবটাইটেল ফাইল। …জুম’আর নামাজে গেছি, আর তখনই হঠাৎ মাথায় খেলে গেল বুদ্ধিটা: আমি তো বাংলায় সাব টাইটেল তৈরি করতে পারি…
বাসায় ফিরেই গুগল করে জানলাম বাংলায় সাব টাইটেল পাওয়া যায়। কিন্তু কিভাবে কী? অনেক খুঁজেও সহজে উত্তর পেলাম না। তারপর যে উত্তর পেলাম, সেটা নিয়ে সাথে সাথে একটা ব্লগ পোস্ট^ দিলাম nanodesigns থেকে, আর সে অনুযায়ী কাজে নেমে গেলাম। এবং ফলাফলটা… আলহ্বামদুলিল্লাহ সফল! এক সপ্তাহের মধ্যেই বাংলায় অনুবাদ করতে সমর্থ হলাম পুরো দেড় ঘন্টার সব সাবটাইটেল।
পুরো তথ্যচিত্রের সাবটাইটেল বাংলায় অনুবাদ করেছি। এজন্য আমার জ্যোতির্বিজ্ঞানের তুচ্ছ জ্ঞান কাজে লাগাতে হয়েছে। আর সাথে বিভিন্ন পরিভাষার জন্য ব্যবহার করেছি Bangla Academy English to Bengali Dictionary, এবং বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত ফারসিম মান্নান মোহাম্মদী স্যারের জ্যোতির্বিজ্ঞান শব্দকোষ বইটি। পুরো অনুবাদকেই যথেষ্ট প্রাঞ্জল করার চেষ্টা করা হয়েছে যেন, আমজনতাও কটমটে জ্যোতির্বিজ্ঞান খুব সহজে বুঝতে পারেন। মিলিয়ন, বিলিয়ন, ট্রিলিয়ন ইত্যাদি মার্কিনী শব্দকে ব্রিটিশ পদ্ধতিতে লাখ-কোটিতে রূপান্তর করে লেখার চেষ্টা করেছি। এছাড়া জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিভিন্ন টার্ম-এর পাশে বন্ধনীতে ইংরেজিতে নামটা উল্লেখের চেষ্টা করেছি, যাতে জ্ঞানার্জনের জন্য আরো বেশি তথ্য সংগ্রহ সহজ অনুসন্ধানীর জন্য।
যেভাবে ব্যবহার করতে হবে
ধাপ ১: সংগ্রহ করে নিতে হবে “Journey to the Edge of the Universe” তথ্যচিত্রটি, কিংবা কিনে আনতে পারেন ডিভিডি আপনার আশপাশ থেকে। (ইউটিউবে সার্চ করে দেখা যেতে পারে, কিন্তু যেহেতু এটা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের কপিরাইটেড ভিডিও, তাই এটি অনেকেই আপ করলেও, বেশিদিন টিকতে পারে না, কপিরাইট লঙ্ঘনের কারণে ইউটিউব তা মুছে ফেলে)
ধাপ ২: আমার তৈরি Journey to the edge of the Universe – Bangla subtitle ফাইলটি বিনামূল্যে ডানের লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিন। (Size: 169 KB) এবারে KM Player-এ ভিডিওটি চালু করে, মাউসের রাইট বাটন ক্লিক করে Subtitle > Load Subtitle চাপুন অথবা কীবোর্ডে Alt + O চাপুন। এবারে ডাউনলোড করা SRT ফাইলটি দেখিয়ে দিন। ব্যস, কাজ শেষ। (অথবা, সাবটাইটেল ফাইলটি, ভিডিও প্লেয়ারের উপর টেনে এনে ছেড়ে দিন, মানে drag-drop করুন।)
আমি KM Player 3.2.0.19 দিয়ে পরীক্ষা করেছি (বিনামূল্যে ডাউনলোড লিংক^), সময়গুলো নিখুঁতভাবে কাজ করে। অন্যান্য প্লেয়ারে প্রয়োজনে একটু কনফিগার করে নিতে হতে পারে। সাবটাইটেল ফাইল সাপোর্ট করে এরকম যেকোনো প্লেয়ার দিয়েই বাংলা সাবটাইটেল লোড করে এটি দেখা যাবে। প্লেয়ারে সাবটাইটেলের জন্য SiyamRupali ফন্টটি বাছাই করলে সাবটাইটেলের গুণাগুণ সুন্দর থাকে (এখান থেকে^ বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে পারেন ফন্টটি)। আরো কোনো প্রশ্ন থাকলে মন্তব্য অংশে উল্লেখ করুন, আমি চেষ্টা করবো যথাসাধ্য উত্তর দিতে।
আমার খুব ইচ্ছা, একটা প্রোজেক্টর পেলে, আমার এলাকাতেই প্রথম প্রদর্শনীটা করা। প্রোজেক্টর এখনও পাইনি। সবার কাছে এজন্য দোয়াপ্রার্থী। যাহোক, সর্বোপরি, এই প্রামাণ্যচিত্রটি আপনাদের জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হোক -এই কামনা।
-মঈনুল ইসলাম
ইশশশ…দেখার খুব ইচ্ছা ছিল।কিন্তু কিউবির লিমিটেড ডাটা আর স্পিড এর কারনে অপারগতা প্রকাশ করা ছাড়া আর কি বা করার আছে? যাই হোক সুন্দর পোস্ট আর উদ্যমী প্রচেষ্টার জন্য অভিনন্দন রইল।যদি কখনও ডিভিটি টা জোগাড় করতে পারি তাহলে বাংলা সাব টাইটেলটা কোথা থেকে নিতে হবে টা তো জানাই আছে… 🙂
ভিডিওটি ইউটিউব থেকে অপসারণ করা হয়েছে, কপিরাইট সমস্যার কারণে। তাই, আপাতত দেখা হলো না। সংগ্রহ করে দেখার ইচ্ছে রইলো।
ইশশ! বিনামূল্যের জগতটা কপিরাইটের কড়া নজরদারিতে আটকে গেলো। কে জানে আশেপাশের ডিভিডি’র দোকানগুলো এগুলো রাখে কিনা… 🙁
http://www.youtube.com/watch?v=N-fe9TkeItc এখানে যান।
অথবা, “Journey to the edge of the Universe” দিয়ে সার্চ দিন
ভিডিওটা পেয়ে যাবেন।
অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমি আপনার মন্তব্যে দেয়া লিংকটি ভিডিও লিংকে সংযোগ করে দিচ্ছি।
অসংখ্য ধন্যবাদ, এরকম আরও চাই। খুব শিগগীর Journey to the Edge of the Universe দেখে ফেলব
It is a great artical .thank you for this artical. there was a unknown error in Utube link . can you give anather link of this video.
এই ভিডিওটা উন্মুক্ত নয়। তাই ইউটিউবে পাওয়ার কথা না। তারপরও মাঝে মাঝে কেউ কেউ এটা কপিরাইট ভায়োলেট করে আপলোড করে থাকেন। সেক্ষেত্রে পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো গুগল করে দেখা^।
কিন্তু এভাবে কপিরাইট ইনফ্রিগমেন্ট করলে ভিডিওটা ডিলিট করে ফেলা হয়। তাই আবারও সেই লিংক হারিয়ে যায়।
আমি দুঃখিত, ভিডিওটা নিজ দায়িত্বে সংগ্রহ করে নিতে হবে। 🙁
many many thx bi
The original video is now available in YouTube
যতক্ষণ পর্যন্ত না এটা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক উন্মুক্ত করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই অ্যাভেলেভিলিটি ক্ষণিকের।
যেকোনো সময় কপিরাইটের দোহাই দিয়ে ভিডিওটা ডিলিট করে দেয়া হবে, নিশ্চিত থাকুন।
অসংখ্য ধন্যবাদ অসাধারন এই ডকুমেন্টারীর বাংলা অনুবাদ সাবটাইটেল হিসেবে প্রকাশ করার জন্য