ধারাবাহিক: দূরবীক্ষণ যন্ত্র —এর একটি পর্ব
~ দূরবীক্ষণ পরিচিতি: নিউটন থেকে কেক টেলিস্কোপ ~
টেলিস্কোপ বললেই গ্যালিলিও’র নামটা উঠে আসে সবার আগে। কিন্তু গ্যালিলিও গ্যালিলেই’র সময়কালে টেলিস্কোপ আবিষ্কার হলেও, তিনি কিন্তু এর আবিষ্কর্তা ছিলেন না। এপর্যন্ত (২০১২) পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীর সর্বপ্রথম টেলিস্কোপটি তৈরি হয়েছিল নেদারল্যান্ড্সে ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে।[১] গ্যালিলিও, বরং টেলিস্কোপ কিভাবে বানাতে হয় সেটা জেনে নিয়ে, নিজে একটা টেলিস্কোপ বানিয়ে নিয়েছিলেন। ছোট, বাঁশির মত দেখতে একটা চোঙার ভিতরে উত্তল আর অবতল কাচ বসিয়ে বানানো নিজের ঐ দূরবীক্ষণ দিয়ে তিনি সেই ১৬০০ অব্দেই (আজকের তারিখ থেকে মোটামুটি ৪০০ বছরের বেশি সময় আগে) দেখেছিলেন চাঁদের পাহাড় আর মালভূমিগুলো, বৃহস্পতির [৬৩টির মধ্যে] চারটি উপগ্রহ, চাঁদের পাহাড় ও ছায়াপথের তারা (ছায়াপথের হাল্কা মেঘকে তিনি তারা সমষ্টি বলে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন)। যাহোক, তাঁর সেসব পর্যবেক্ষণ আমাদেরকে কোপার্নিকাসের দেয়া আজকের সৌরজগতের সূর্যকেন্দ্রীক মতবাদকে ফলাও করে প্রচার করে। ধন্যবাদ গ্যালিলিও’র টেবিলের উপরে রাখার উপযোগী ছোট্ট দূরবীক্ষণ যন্ত্রটাকে।
কী এই টেলিস্কোপ? আর কিভাবেইবা কাজ করে? …টেলিস্কোপ, বাংলায় দূরবীক্ষণ (দূরবীণ গোত্রের হলেও এর ক্ষমতা ব্যাপক হওয়ায় নামটাও ব্যতিক্রম, তবে দূরবীণ আর দূরবীক্ষণ – বিষয়টা একই), বলতে বোঝায় উত্তল-অবতল কাঁচের সম্মিলনে তৈরি করা একটা ফাঁপা চোঙ, যার এই দুপ্রকার কাচের কারণে দূরের জিনিস খুব কাছে দেখা যায়। আমরা জানি, কোনো বস্তুর আলো এসে যদি আমাদের চোখে পড়ে, তাহলে আমরা সেটা দেখি— এই সূত্রকে কাজে লাগিয়ে যে বস্তুটা আমরা দেখতে চাচ্ছি, তার আলোটাকে উত্তল আর অবতল লেন্সের ভিতর দিয়ে পার করে যদি আমাদের চোখে ফেলা যায়, তাহলে দেখা যায়, বস্তুটাকে তার দূরত্বের চেয়ে অনেক কাছে দেখা যায়। এই সূত্রে কাজ করে যেসব টেলিস্কোপ, সেগুলোকে বলে প্রতিসরণ টেলিস্কোপ (Refracting Telescope), কেননা এগুলোতে আলোর প্রতিসরণের সূত্র কার্যকর হয় বলে এমন দূর পর্যন্ত দেখা যায়। এই একই প্রক্রিয়ায় কাজ করে দূরবীণও। তবে দূরবীণের উত্তল-অবতল কাচের চেয়েও বেশি দামি উত্তল-অবতল কাচ দিয়ে দূরবীক্ষণ তৈরি হয় বলে এর দাম যেমন বেশি, এর ক্ষমতাও তেমনি বেশি।
যেহেতু দূরবীক্ষণের ক্ষমতা খুব বেশি থাকে, তাই তা দিয়ে অনেক অনেক অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। ধরা যাক, আমি একটা দূরবীক্ষণ, আমার বাসায় বসে তাক করতে পারলাম ঢাকার আরেক প্রান্তে মতিঝিলের দিকে। আমি দেখতে পাবো, বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাদে গভর্ণর হাঁটাহাঁটি করছেন, আমি দেখতে পাব তিনি হাতে একটা ঘড়ি পরেছেন কিনা— আশা করি বোঝাতে পারছি কতটা দূর দেখা যায়, আর সেই দূরত্বের বস্তুটা কত পরিষ্কার। এবার একটু চিন্তা করেন এই দূরবীক্ষণকে আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে আপনি সেটাকে চাঁদ কিংবা মঙ্গল গ্রহের দিকে তাক করলেন। ঠিক এভাবেই চাঁদ কিংবা মঙ্গলের অনেক নিখুঁত দৃশ্য আপনি স্বচক্ষে দেখতে পারবেন। এই এত্তো দূরের জিনিস দেখা যায় যে বস্তুটি দিয়ে, তা যদি মাত্র এক মিলিমিটার বা এক সুতা নড়ে যায়, তাহলে কিন্তু আপনার দৃষ্টি কয়েক কোটি কিলোমিটার সরে যেতে পারে।
এই চিত্র দেখলেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আপনি ০ থেকে চোখ রেখেছেন ক’র দিকে। হঠাৎ দূরবীণটা নড়ে উঠলো, তাই আপনার দৃষ্টি চলে গেল ক১-এর দিকে। ক থেকে ক১-এর দূরত্ব খুব বেশি না। কিন্তু ধরা যাক, আপনি চোখ রেখেছেন খ’র দিকে, আর ঠিক একই পরিমাণ সরে গেল দূরবীণ, দেখুন, কত দূরে চলে গেল আপনার দৃষ্টি, মানে খ থেকে খ১-এর দূরত্ব অনেক বেশি। এখানেই এতটুকু দূরে সরে গেলে মঙ্গলগ্রহে চোখ রাখলে সেসময় সরে যাবার ফলে আপনার দৃষ্টি কোথায় যাবে, আশা করি আর আন্দাজ করতে পারছেন।
এটা বোঝানোর মূল কারণ হলো: একটা দূরবীক্ষণ যন্ত্র কেন ট্রাইপডের বা স্ট্যান্ডের উপর নাট-বল্টু দিয়ে খুব দৃঢ়ভাবে আটকানো থাকে, সেটা বোঝানো। আর ঐ স্ট্যান্ডের উপর দূরবীক্ষণ যন্ত্রটা ঘোরাবার জন্য ব্যবহৃত হয় খুব নিখুঁত গিয়ার চাকা। মিলিমিটার মিলিমিটার করে যন্ত্রটা ঘোরাতে হয়।
একটা ছোট্ট দূরবীক্ষণের ক্ষমতা আর কতটুকু? মহাকাশ বিজ্ঞানী আর গবেষকদের জন্য এটা নিতান্তই একটা খেলনা। তাই তাদের দরকার পড়লো আরো বেশি দূরত্বে দেখার কোনো কিছু। একদিকে যেমন দরকার আরো নিখুঁত উত্তল-অবতল কাচ, তেমনি দরকার আরো বড় আকারের আর বড় চোঙার টেলিস্কোপ। আর এভাবেই প্রয়োজনের তাগিদে আবির্ভাব হলো বড় বড় টেলিস্কোপের, আর সেগুলোকে স্থান দেয়ার জন্য তৈরি করা হলো আলাদা একেকটা বিশাল ঘর, যেগুলোকে আমরা আদর করে ডাকি অবযারভেটরি (Astronomical Observatory)।
এইসকল শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে চাঁদ আর মঙ্গল পেরিয়ে চোখ রাখা যায় আরো আরো দূরের আকাশে। আমাদের সৌরজগত এখন অনেকটাই ছেলেখেলা হয়ে গেছে তাদের জন্য, তাই তাদের দৃষ্টি আরো আরো দূরে প্রসারিত। কিন্তু পৃথিবীতে বসে দূরবীক্ষণ তাক করায় কতগুলো বাধা আছে। প্রথম বাধা হলো ধুলিকণা, আর দ্বিতীয় বাধা হলো আলো। ব্যাপারটা কীরকম, বুঝে নেয়া যাক—
আপনি শ্রেফ একটা দূরবীণ (দূরবীক্ষণ না হলেও চলবে) নিয়ে সেটা চোখে লাগিয়ে দূরে কোথাও তাকান। অনেক দূরের কিছু একটা দেখতে পাচ্ছেন। এবার দূরবীণে চোখ রেখেই হঠাৎ আপনার একটা আঙ্গুল নিয়ে আসুন দূরবীণের সামনে। আশ্চর্য হয়ে দেখবেন, ওটা অনেক বড় দেখাচ্ছে, আর আপনার দৃশ্যপটের অনেকটাই ঢেকে দিয়েছে। ঠিক একই ঘটনা ঘটে দূরবীক্ষণের বেলায়। আশা করি বুঝতে পারছেন, ক্ষমতা যত বেশি হচ্ছে, ছোট জিনিস তত বড় হয়ে চোখের সামনে ধরা দিচ্ছে। তাই ছোট্ট, এই এত্তটুকুন একটা ধুলিকণা, যা খালি চোখে আপনার স্বপ্নেও দেখার বিষয় না, সেটা দূরবীক্ষণে একটা কিংকং হয়ে ধরা না দিলেও সেরকম কাজ করে। আর এর সাথে এটাও দেখুন যে, ঢাকায় আপনার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আপনি খালি চোখে আকাশের যতগুলো তারা দেখতে পাবেন, ঢাকার বাইরে কোনো গ্রামে গিয়ে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে তার প্রায় তিন-চারগুণ বেশি তারা আপনি অনায়াসে দেখতে পাবেন। উদাহরণটা দেয়ার মূল কারণ হলো এটা বোঝানো যে, অনেক অনেক ধুলিকণা আপনার দৃষ্টির সামনে থাকলে সবে মিলে একটা পাতলা পর্দার মতো কাজ করে, এতে দৃশ্যপটের অনেক ডিটেইল বা বিস্তারিত রূপ ঢেকে দেয়। তাই ধূলিকণা একটা বাধা।
এবার আসা যাক আলো’র প্রসঙ্গে। আমরা জানি, আলো কোথাও প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আমাদের চোখে এসে পড়লে, তখন আমরা ঐ বস্তুটাকে দেখি। তাহলে আলো এখানে বাধা হচ্ছে কেন? বাধা হচ্ছে এজন্য, আপনি দিনের বেলা আকাশে তাকিয়ে আকাশের তারা দেখার চেষ্টা করবেন। আপনি হাজার-কোটি চেষ্টাসত্ত্বেয় একটাও তারা দেখতে পাবেন না। অনেক দূরের গ্রামে একটা কুপি জ্বলছে, আপনি রাতের অন্ধকারে যত স্পষ্ট দেখবেন, দিনে তারা সিকিভাগও দেখবেন না। তার কারণ অনেক দূর থেকে আলোটা আসছে বলে ওটার তীব্রতা খুব কম। সেই তুলনায় সূর্যের আলোর তীব্রতা বেশি বলে তা ঐ আলোকে ম্লান করে দিচ্ছে। এভাবেই কয়েক কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত তারা বা নক্ষত্রগুলোর আলো’র তীব্রতা আমাদের নিকটবর্তি নক্ষত্র সূর্যের আলোর তীব্রতার তুলনায় খুব নগন্য। তাই চোখের সামনে তীব্র আলো থাকলে তাদের দেখা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এজন্য তারা দেখার উত্তম সময় হলো রাতের বেলা। কিন্তু সেখানেও সমস্যা— নগরায়ন আর বিদ্যুতায়নের চলমান গতির কারণে উজ্জ্বল বাতির ব্যবহার, রাতের আকাশকেও করে তুলছে জ্বলজ্বলে। মানে শহরে জ্বালানো আলো উপরের বায়ুমণ্ডলে গিয়ে আঘাত করছে, ফলে ঠিক ধুলিকণার মতোই আলোর একটা চাদর চোখের সামনে সৃষ্টি হচ্ছে, যাকে ইংরেজিতে বলে Sky Glow। এর ফলে ডিটেল লোপ পায়। তাই মহাকাশের দিকে তাকাতে আলোও একটা বাধা।
তবে ড. দীপেন ভট্টাচার্য আমার এই লেখায় একটা সংশোধন (২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪) জানিয়েছেন যে, এই যুক্তিটা শুধুমাত্র পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের মধ্যে থাকলে ঠিক আছে। কারণ সূর্যের আলো সরাসরি দূরবর্তি তারাদের আলোকে ম্লান করে না। সূর্যের আলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে এসে যখন ধাক্কা খায়, তখন বায়ুমন্ডল প্রিজমের মতো কাজ করে, সাদা আলোকে নীলাভ দ্যূতিতে ছড়িয়ে দেয়। একারণে এই নীলাভ দ্যূতি বা নীল রঙের তীব্রতা আমাদেরকে দূরবর্তি তারাদের দেখতে বাধা দেয়। যদি বায়ুমন্ডল না থাকতো, তাহলে আমরা দিনের বেলাতেও তারাদের দেখতে পেতাম। মহাকাশচারীরা একারণেই বায়ুমন্ডল ছাড়িয়ে মহাকাশে উঠতে পারলেই সূর্যের আলোর মধ্যেও তারাদের দেখতে পান।
যাহোক, বায়ুমন্ডলজনিত বাধা কিংবা আলোর নীলাভ দ্যূতির বাধাজনিত সমস্যা থেকে মুক্ত হতে বিজ্ঞানীরা স্থান খুঁজে নিলেন সমুদ্র সমতল থেকে হাজার হাজার ফুট উঁচু কোনো স্থান, যেখানে ধূলাবালি নেই বললেই চলে, আর আশেপাশে শহর না থাকায় আকাশে স্কাই গ্লো বা আলোর চাদরও থাকবে না। তাই সেরকম উচ্চতায় অবযারভেটরি স্থাপন করে টেলিস্কোপ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হলো।
অন্যদিকে, নতুন ধরণের টেলিস্কোপ বেশ সমাদৃত হয়ে উঠলো। দূরবীণের মতো সোজা একটা চোঙের ভিতরের উত্তল-অবতল লেন্সের মধ্যে দিয়ে সামনে তাকানোর বদলে লেন্সের জায়গায় আয়না বসিয়ে উল্টোদিকে বসে দূরবীক্ষণ দিয়ে সর্বপ্রথম আকাশ পর্যবেক্ষণ করে স্যার আইয্যাক নিউটন একটা উদ্ভট ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম ১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দে গ্যালিলিও থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে অবতল আয়না বসিয়ে দূরবীক্ষণ বানানোর কাজটি করে ইতিহাস সৃষ্টি করে যান। এই পদ্ধতিতে দৃশ্যমান বস্তু আরো স্পষ্ট দেখা যায়। নিউটনের এজাতীয় দূরবীক্ষণকে বলে প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্র (Reflecting Telescope)।
এই প্রতিফলন টেলিস্কোপের পথ ধরে হাওয়াই-এর মো’না কী মৃত আগ্নেয়গিরির চূড়ায় স্থাপন করা হয় পৃথিবীবিখ্যাত ‘কেক টেলিস্কোপ’ (Keck Telescope)। আসলে এরা টুইন বা জময। এদের একেকটার আয়না তৈরি হয়েছে ৩৩ ফুট চওড়া এরকম ৩৬ টুকরা আয়না জোড়া লাগিয়ে। আশা করি এদের বিশালায়তন আর বলে বোঝানো লাগবে না। এরা দুজনে একসাথে বিশালতর টেলিস্কোপের কাজ করে। কিন্তু সত্যি করে বলতে কি, এর চেয়েও বিশাল টেলিস্কোপ আছে চিলিতে, যাকে বলা হয় ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ, সংক্ষেপে ভিএলটি। চারটে বিশাল আর তিনটা ছোট আকৃতির টেলিস্কোপের সমন্বয়ে একটা বিশাল চোখ— মহাকাশের দিকে…।
এবারে আমাদের আকাশের দিকে তাকানোর পালা। আমরা মানুষেরা সাধারণত কোনো কিছু দেখি দৃশ্যমান আলোর প্রতিফলনে। কিন্তু একটা বাঁদুড় কিভাবে দেখে? বাঁদুড় ঐ ঘুটঘুটে অন্ধকারে দেখে ইনফ্রারেড বা অবলোহিত আলোর প্রতিফলনে। আবার একজন হাঁড়ের ডাক্তার আমাদের শরীরের ভিতর পর্যন্ত দেখতে পারেন এক্স-রে’র প্রতিফলনে। এভাবে বিজ্ঞানীরা খুঁজে দেখলেন এই তিনটে ছাড়াও কোনো একটা জিনিসকে আলোর আরো বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে দেখা যায়। আর এভাবে একটা বিষয়বস্তুর আরো ডিটেল দেখার অভিজ্ঞতা হয়, আরো বিস্তারিত জানা যায় ঐ বস্তু সম্পর্কে। যেমন: একজন মানুষকে দৃশ্যমান আলোয় দেখলে চেনা যায়, এক্স-রে দিয়ে দেখলে শরীরের হাঁড়গোড় পর্যন্ত দেখা যায়, ইনফ্রারেড দিয়ে দেখলে তাপমাত্রা পর্যন্ত দূর থেকে আঁচ করা যায় ইত্যাদি।
তাঁরা হিসাব করে দেখলেন বস্তুকে দেখা যায়:
- এক্স-রে দিয়ে,
- দৃশ্যমান আলোয়,
- হাইড্রোজেন আলফা তরঙ্গদৈর্ঘ্যে,
- ইনফ্রারেড বা অবলোহিত আলোয়,
- মাইক্রোওয়েভ দিয়ে, আর
- রেডিও তরঙ্গ দিয়ে।
তাই প্রচলিত দৃশ্যমান আলো’র দূরবীক্ষণের পাশাপাশি স্থাপন করা হলো এরকম বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে দেখার সক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন দূরবীক্ষণ যন্ত্র। না বললেও বোঝা যাচ্ছে যে, উপরের আলোচনায় পাওয়া টেলিস্কোপগুলো দৃশ্যমান আলোয় দেখার টেলিস্কোপ। রেডিও তরঙ্গের টেলিস্কোপ কিন্তু শুধুমাত্র একটা ডিশ এন্টেনার মতো, যা রেডিও তরঙ্গের গ্রহ-নক্ষত্র-উপগ্রহ ইত্যাদি থেকে আসা তরঙ্গের উত্থান-পতনগুলো গ্রহণ করে আমাদেরকে একপ্রকার দেখার ক্ষমতা দেয়। এভাবে বিভিন্ন ধরণের টেলিস্কোপ ব্যবহার করে দেখা গেল, শ্রেফ মঙ্গল গ্রহই এখন আরো বেশি উন্মোচিত হয়ে গেল আমাদের সামনে।
তবে এপর্যন্ত আলোচিত সবগুলো টেলিস্কোপই আমরা, কখনও বসিয়েছি টেবিলের উপর, কখনও বারান্দায় কিংবা ছাদে, কিংবা কখনও কোনো সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গে। সময়ের প্রবাহমানতায় কিংবা সময়ের প্রয়োজনেই গ্যালিলিও’র ছোট্ট বাঁশি আকৃতির দৃশ্যমান আলো’র দূরবীক্ষণ আজ অনেক রকমের আলোয় দেখার ক্ষমতাসম্পন্ন বিশাল অবযারভেটরিতে থাকা বিশালাকৃতির দূরবীক্ষণে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর মাটিতে দূরবীক্ষণের এই সময় পরিভ্রমণ যেমন রোমাঞ্চকর, তার চেয়েও রোমাঞ্চকর ভূমণ্ডলের এই দূরবীক্ষণের মহাকাশে উঠে যাওয়া। …হ্যা! সত্যি বলছি! বাসায় নয়, ছাদে নয়, নয় কোনো পাহাড় কিংবা পর্বতে, এক্কেবারে মহাকাশেই একটা টেলিস্কোপ।
আগামী পর্বে আদ্যোপান্ত…
-মঈনুল ইসলাম
কৃতজ্ঞতা
ড. দীপেন ভট্টাচার্য – ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ২০ ফেব্রুয়ারি আমার অনুরোধে এই নিবন্ধে বেশ কিছু সংশোধন জানিয়েছেন। আমি স্যারের প্রতি সেজন্য আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ – খুবই সূক্ষ্ম (সামান্য নয়), কিন্তু বিজ্ঞানতো… সামান্য কথায় অনেক কিছু এসে যায়। ধন্যবাদ, স্যার – অশেষ ধন্যবাদ।
তথ্যসূত্র
- The Telescope^, The Galileo Project। সংগ্রহের তারিখ: ৮ জুন ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
- Discovery Channel Young Discoverer Series: Universe. Discovery Communications Inc. ISBN: 81-7991-180-2. Printed in Malaysia. (এই অপূর্ব বইটা আমাকে পড়তে দিয়েছে আমার বন্ধু মোহাম্মদ শামসুল আরেফিন ভূইয়াঁ, তার পূর্ণ কৃতজ্ঞতা স্মরণ করছি এবং তার ভালো’র জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থণা করছি)
jotil jinish!!!!!!!!!
চমৎকার তথ্য জানলাম…। ছবি গুলো দেখতে পারছি না।
শুভেচ্ছা।
আপনাকেও শুভেচ্ছা!
আমি তো কয়েক জায়গায় ছবি দেখতে পেলাম। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আপনার ব্রাউযারে ছবি ব্লক করা নেই তো? মযিলা হলে Tools > Options-এ গেলে দেখতে পাবেন Load images automatically, সেখানে টিক চিহ্ন দিয়ে দিন।
অপেরা হলে View > Images > Show images।
তারপরও সমস্যা হলে জানান।
ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
এই ব্লগ সাইটি আগে চোখে পরে নাই। এটা দারুন হচ্ছে, অন্য লেখা গুলোর উপরেও চোখ বুলিয়ে নিলাম, সময় করে পড়তে হবে। আরো লেখা পাওয়ার আসায় রইলাম 🙂
ভালো লেগেছে
ধন্যবাদ আপনাকে
আশাকরি আরো অনেক কিছুই পাবো ।
Telescope kinte cai o bebohar jante cai….jemon kokhon dekha/ bebohar kora valo, chukher kono khoti hobe ki na, akas e kothay kon groho o tara dekha jay etc?
rhjony_bd_13@yahoo.com
Rokibul Hassan
কিনলে, আসলে, কিনে ফেলতে হবে। 🙂
আর কিনে ফেললেই ব্যবহারও জানা হয়ে যাবে, তাছাড়া ইউটিউবে প্রচুর ভিডিও পাবেন, তখন সাথে ম্যানুয়্যালও পাবেন, জানা এমনিতেই হয়ে যাবে। আমার নিজেরই টেলিস্কোপ নেই। 🙁
চোখের ক্ষতি হবার তো কোনো কারণ দেখি না, যদি না আপনি সরাসরি সূর্য কিংবা কোনো জ্যোতিষ্ক’র দিকে সরাসরি তাকান…
শুধু একটা কথা বলতে চাই, একটা দূরবীণ দিয়ে দেখার ব্যাপারটা যা, একটা দৃশ্যমান আলো’র টেলিস্কোপ দিয়ে দেখার ব্যাপারটা একই। 🙂
আকাশে কোথায় কোন গ্রহ, তারা দেখা যায়, এটা জানতে হলে তারাচিত্র (star chart) আপনাকে সহায়তা করতে পারে। তবে টেলিস্কোপ ব্যবহারকারীরা উচ্চতা বুঝতে কী ব্যবহার করেন, আমি জানি না।
তবে অনেক মোবাইল অ্যাপ আছে, যা দিয়ে নির্দিষ্ট দিকে তাক করলে কোথায় কোন তারা, গ্রহ ইত্যাদি আছে, তা দেখায়।
Stellariam mobile অ্যাপস বেশভাল। আমি নিজে ব্যবহার করি।
+1