তাবলীগ – সংঘাত নাকি সম্প্রীতি?

আলহ্বামদুলিল্লাহ, আব্বা তাবলীগের বিদেশী জামা’তের সাথীদের স্বাগত জানানোর (ইস্তেগবাল) দায়িত্ব পালন করেন প্রায় প্রতি বছর। এয়ারপোর্টের ইস্তেগবাল মসজিদে, বিদেশ থেকে আগত সকল তাবলীগি সাথীকে স্বাগত জানানো, পথনির্দেশনা দেয়া তাঁদের কাজ – এটা পুরোপুরি স্বেচ্ছাশ্রমের কাজ, আর আব্বার মতো একাধিক ভাষা জানা লোকেদের তাই সেখানে কদর বেশি। এবং এই দায়িত্ব পালনে তাঁরা ক্বওমিপন্থী কিংবা সা’দপন্থী কোনো ভেদাভেদ করেন না – মেহমানের খেদমত করাই মুখ্য উদ্দেশ্য।

কিন্তু এই একই মসজিদে এখন ক্বওমিপন্থী আর সা’দপন্থীদের মধ্যে ভেদাভেদের দেয়াল তুলে দেয়া হয়েছে: ডেকচি-প্লেট আলাদা, মাশওয়ারার (পরামর্শ সভা) জায়গা আলাদা – সবকিছু আলাদা।

গত ইজতেমার এক জোড়ে (প্রস্তুতি সম্মিলন) আব্বা গিয়েছেন। সেখানে উনার এক পরিচিত সাথীর সাথে উনার দেখা। মুসা’ফা-মু’য়ানাকা (করমর্দন-গলামেলানো) শেষে হাত ধরে পরস্পর কুশল বিনিময় করছেন। এই কুশল বিনিময়ের ছবি তুলেছেন একজন ক্বওমিপন্থী ইমাম সাহেব – উনি একটি মসজিদের বিজ্ঞ খতীব। তারপর আব্বাকে আপত্তি জানিয়েছেন কেন তিনি সা’দপন্থী একজনের সাথে সুসম্পর্ক রাখছেন – এই বলে।

আব্বা পুরো ব্যাপারটায় খুব আশ্চর্য হয়েছেন। …উনি বুঝেই উঠতে পারছেন না সমস্যাটা কোথায়?
সা’দপন্থীরা তো আল্লাহভিন্ন অন্য কাউকে সিজদা করছে না।
সা’দপন্থীরা তো মুহম্মদ [স.]-ভিন্ন অন্য কাউকে আল্লাহ’র বাণীবাহক (রাসুল) মনে করছেন না।

তাহলে এদের মুসলমান হবার ব্যাপারে তো কোনো সন্দেহ নেই।
এই সাক্ষ্য দিয়েই তো একজন অমুসলিম মুসলমান হয়ে যায়…
তাহলে এক মুসলমান কেন আরেক মুসলমানকে বিভেদের চোখে দেখবে?

ক্বওমী মাদ্রাসা’র শিক্ষার সাথে সব সময় ছিলাম, এখনও আছি ইনশাআল্লাহ। আমি প্রতি শুক্রবার কাছের মসজিদ রেখে দূরের ক্বওমী মাদরাসা-মসজিদে জুম’আ পড়তে যাই – শ্রেফ এই সাহচর্য্য ভালো লাগে বলে। তাবলীগ জামা’ত আমার পরিবারে বহু পুরোন। দাদাও ইজতেমায় আসতেন একটা সময়। বাপ-চাচারা দাদা’র পরম্পরায় নয়, নিজেদের ভালোলাগা থেকে তাবলীগ করেছেন।

কিন্তু,
দাদা, বাবা, কিংবা আমার জীবনেও তাবলীগ থেকে একটা শিক্ষা আজীবনই পেয়েছি: মা’ফ করে দাও – ক্ষমা করে দাও।

তাবলীগের মূল কাজটাই হলো: সৎ কাজের পরামর্শ দেয়া, অসৎ কাজে নিষেধ করা।
কিন্তু তাবলীগের মতো এতো সুন্দর একটা আদর্শকে হঠাৎ প্রতিশোধের আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার অর্থ কী আমরা জানি না।

আমার ক্বুরআনও তো এমন শিক্ষাই দিয়েছে:

تَعَالَوْا۟ إِلَىٰ كَلِمَةٍۢ سَوَآءٍۭ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ
“…তোমরা আসো একটি কথার দিকে যা আমাদের আর তোমাদের মধ্যে এক।”

সূরা আল ইমরান: ৬৪

আয়াতের এই কথাটা আহলে হাদিসদের (ইহুদি, খ্রিষ্টান) জন্য প্রযোজ্য – যাদেরকে মুসলমানই বলছেন না আপনি।
তাহলে মুসলমানদেরকে কেন নিজেদের মধ্যকার মিলের জন্য জোটাবদ্ধ না হয়ে আলাদা করে দিচ্ছেন?

এক তাবলীগে দুই পন্থা কেন?

এক আল্লাহ’র জন্য যদি আমাদের কাজ হয়, এক রাসুলের পথানুসারে যদি আমাদের কাজ হয় – তাহলে “আসুন, আমরা দুই পক্ষই নিজেদের মধ্যকার মিলগুলো নিয়েই পরস্পর এক হয়ে যাই।” আমার আল্লাহ এটাই ভালোবাসেন। এটাই তাঁর পক্ষ থেকে নির্দেশনা।

মুসলমান যদি মুসলমানের সাথেই বিভেদের দেয়াল তুলে দেয় – তাহলে আমি বলবো ফিলিস্তিনিদের জন্য মায়াকান্না কাঁদবেন না।

পৃথিবীর সকল মুসলমান এক আল্লাহ আর রাসুলের আদর্শে এক মত, এক পথ হয়ে যাই…

মঈনুল ইসলাম

(ছবি: প্রতীকি – AI-Generated)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল প্রকাশ করা হবে না

আপনি এই HTML ট্যাগ এবং মার্কআপগুলো ব্যবহার করতে পারেন: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

*