পাথারিয়ার টিকে থাকা শেষ জঙ্গল লাঠিটিলা – মানে এই জঙ্গল মারা গেলে মারা যাবে পাথারিয়া। কিন্তু সেখানেই বন অধিদপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাফারি পার্ক করবার। তাই সাফারি পার্ক করবার আগেই সেই বনের প্রাণপ্রকৃতি আর জীববৈচিত্র্য দেখবার জন্য আমরা ৩ জনের একটি দল গিয়েছিলাম সেখান গত ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর তারিখে।
জঙ্গলের গভীরে, প্রাকৃতিক বন যেখানে এখনও কিছুটা টিকে আছে, সেখানেই অপ্রত্যাশিতভাবে দেখা পেয়ে যাই একটা অজগর সাপের। আমাদের সাত জনমের ভাগ্য, এইমাত্র ১ মিনিট আগেই অজগর সাপ যে ঝোঁপের ভিতর ছিলো, সেই ঝোঁপের উপর পা দিয়েই গাইডসহ আমরা ৪ জন পেরিয়ে এসেছি। ভাগ্য ভালো ছিলো বলা যায় যে, সাপটির পেট ভরা ছিলো।
অজগর সাপকে জীবনে প্রথম দেখেছিলাম দুবাইতে, চিড়িয়াখানায়। কিন্তু এভাবে জঙ্গলের পরিবেশে একেবারে প্রাকৃতিক বিচরণক্ষেত্রে তাদেরকে দেখা আমাদের দলের প্রত্যেকের জীবনে এই প্রথম। সমস্যা হলো, আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম, সেখান থেকে ভালো করে দেখা যাচ্ছিলো না সাপটিকে। তাই তড়াক করে সামনেরই একটা ছোট গাছের ডালে ক্যামেরা আর পিঠের ব্যাগসুদ্ধ উঠে পড়লাম লাফ দিয়ে। তারপর কিছুটা বেয়ারিং পাওয়ায়, একহাতে গাছের ডাল ধরে নিজের পতন রোধ করে, অন্য হাতে ক্যামেরা ধরে, ওখান থেকে অটোফোকাসে ভিডিও ধারণ করবার চেষ্টা করলাম।
সমস্যা হলো সামনের ‘থইরল গাছ’ (স্থানীয় নাম) প্যাঁচিয়ে সাপটা উপরের দিকে উঠছে, সেটা আমাদের খুব কাছেই। তার উপর গাছটাতে লতানো পরগাছা গজিয়েছে ঘন হয়ে। ক্যামেরার অটোফোকাস বুঝতেই পারছে না কিসে ফোকাস করবে। পাতার ফাঁক দিয়ে কোনোরকমে ভিডিও ধারণ করতে থাকলাম আমি। দুই হাত উন্মুক্ত না থাকায়, ম্যানুয়াল ফোকাসও করতে পারছিলাম না। গাইডের চোখের আন্দাজে সাপটা কমপক্ষে ১০-১৫ হাত লম্বা হবে। পেট ভর্তি ছিলো বলে ফোলা ছিলো পেট। এই ভারি শরীর নিয়েও সাপটা গাছ বেয়ে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছিলো।
ওদিকে সাপের গন্ধের কারণেই কিনা জানি না, কিছু মাছি এসে আমাকে খুব উৎপাত করতে শুরু করলো। বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে সাপটা অবশেষে গাছের উপরের দিকে একটা জায়গা বেছে নিয়ে নিজের শীতল রক্তের শান্তির জন্য শীতের মিষ্টি রোদ পোহাতে শুরু করলো। শান্ত হয়ে শুয়ে পড়লো একটা পর্যায়ে। আমরাও ওকে শান্তিতে ঘুমাতে দিয়ে ওখান থেকে প্রাণ নিয়ে সরে পড়লাম।
ধারণ করা ভিডিওটি দেখা যাবে এখানে:
দলে আমার সাথে আরো ছিলেন: আজিজুল কাদির, মোঃ মোত্তাকিন। আমাদের গাইড ছিলেন এখলাস উদ্দিন। আমাদের এই অভিযানের আগে-পরে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিয়ে আলোকিত করেছেন ক্রিয়েটিভ কনযার্ভেশন অ্যালায়েন্স-এর সিইও শাহরিয়ার সীজার রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মুনতাসির আকাশ। এছাড়া পুরো অভিযানে বিভিন্নভাবে সহায়তা করার জন্য সাংবাদিক তানজিমুল ইসলাম, এবং সাংবাদিক ও প্রকৃতি-অনুরাগী ইশতিয়াক হাসান এবং খুরশেদ আলম-এরও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।
– মঈনুল ইসলাম