এই লেখক কতই না অজ্ঞ! – এমনটাই ভেবেছিলাম প্রথমে।
আমি মাওলানা আশরাফ আলি থানভি’র লেখা/সংকলিত “বেহেশতি জেওর” বইটার নাম শুনেছিলাম। ২০০৭-এ আমি বইটার দুটো খণ্ড হাতে পেয়ে পাতা উল্টে রীতিমতো আহত হলাম: এই লেখকের অকালকুষ্মাণ্ড কাজ-কারবার (!) দেখে। কারণ, তিনি বইতে অবান্তর বিষয়াদির উল্লেখ করেছেন। যেমন-
- কিভাবে কাপড় রং করতে হয়
- কিভাবে মিষ্টি, আচার, জ্যাম, জেলি, বিস্কুট বানাতে হয়
- কিভাবে চুল পড়ো বন্ধ করতে হয়
- কিভাবে ফার্নিচার বার্নিশ করতে হয়
- কিভাবে কান্নারত শিশুর খেয়াল করতে হয়
- কিভাবে চিঠি পোস্ট করতে হয়
- কিভাবে মানি-অর্ডার করতে হয়, ইত্যাদি
অবান্তর না! একজন মানুষ ইসলামী বই নিয়ে বসেছে কি এসব জানার জন্য!! ইসলামী বই মানেই হবে আল্লা-খোদার নাম, কিভাবে সওয়াব পাওয়া যাবে, গুনাহ থেকে বাচা যাবে, বেহেস্ত হাসিল করা যাবে… অথচ একটা ইসলামী বই কিনা শেখাচ্ছে গৃহস্থালী কাজ-কারবার!!
আমি যার-পার-নাই আশ্চর্য! কিংবা বলা যায় – আহত!
কিন্তু…
পরক্ষণেই আমি আসলে শিখলাম। আমি আমার ক্ষীণদৃষ্টি (myopia) থেকে বেরোতে পারলাম। আমি আবারও উপলব্ধি করলাম, ওহো, ইসলামকে তো সবকিছুর চিরন্তন সমাধান বলা হয়! বলা হয়, শুধু নামাজ পড়া আর রোযা রাখাই ইসলাম নয়, বরং জীবনের চলার পথে করা প্রত্যেকটা বৈধ কাজই ইসলামের অনুষঙ্গ। তাহলে একটা ‘ইসলামী বই’ তকমাধারী পুস্তক খুলে আমরা যদি তাতে আল্লাহ-খোদার নাম ছাড়া আর কিছু প্রত্যাশাই না করি, সেটা আমাদের অক্ষমতা, আমাদের ক্ষীণদৃষ্টিজনিত সীমাবদ্ধতা।
আমি স্বীকার করলাম: এই লেখক কতইনা বিজ্ঞ!
আমার অন্য আরেকটা উপলব্ধিও হলো, যেমন: আপনি হয়তো একটা অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছেন, আপনি সমস্যাটার সমাধান খুঁজছেন অর্থনীতির কোনো বইয়ে, কিন্তু হয়তো সমস্যাটার সমাধান আছে মনোবিজ্ঞানের কোনো বইয়ে, কিংবা সামাজিক মূল্যবোধের কোনো বইয়ে – হতে পারে না? খুব হতে পারে।