অনার্সে পড়াকালীন প্রান্তিকের (Prantic) সাথে পরিচয় – ওর নামের ইংরেজি বানানটা এরকমই ছিল। লেখালেখি পছন্দ করে। একদিন জানালো সে নিজে একটা ছন্দ আবিষ্কার করেছে। তখন ছন্দ কী – তাও বুঝতাম না। এখন যা বুঝি, ওর চিন্তা-ভাবনাটা ঠিক “ছন্দ” হয়নি, তবে কবিতা লেখার একটা ঢঙ কিংবা চিন্তা নিশ্চিত। তার চিন্তা-ভাবনাটা কেমন, একটু দেখা যাক। সে তার নিজের নাম দিয়ে ঐ ঢঙে লেখা কবিতার একটা খসড়া দেখালো:
প্রান্তিক
প্র: প্রকৃতিতে প্রকৃত মানুষ প্রভুর প্রিয়তা প্রলোভন পায়
া: তারাই মানব জাতির মাঝে স্বাচ্ছন্দে থাকতে চায়
ন: ন্যূনতম ন্যায়-নীতি নিজেতে নাই যার
ি: তিন দিনেরই ত্রিভুবনে তিনিই হবেন তিরষ্কার
ত: তবু তারা তাদের তরে তেপান্তরে তরী বায়
ক: কথা ও কাজে কষ্ট করে কোনোভাবে কাল কাটায়
কবিতা দিয়েই প্রান্তিক ক্ষ্যান্ত। কিন্তু ওটা আমার ঘুম হারাম করে দিয়েছিল। অকাজ (?) নিয়ে ব্যস্ত থাকাটাই আমার প্রিয় কাজ ছিল। আমি ওটা নিয়ে গবেষণা করে একটা কাঠামোতে আনার চেষ্টা করলাম। ২৯ মার্চ ২০০৬ রাত ২৩:৫৯ কবিতাটা ঘেঁটে একটা নিয়ম দাঁড় করিয়ে ফেললাম:
- ‘প্রান্তিক ঢঙ’-এ যে নামটি নিয়ে লেখা হবে, তা-ই সেই কবিতার নাম হবে।
- যে নাম বিষয়ে লেখা হবে, কবিতায় সেই নামটি বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠবে।
- কবিতার বিষয়বস্তু: মূল শব্দটির প্রতিটি ‘অক্ষর’ ও ‘কার’ আলাদা আলাদা অক্ষরের মর্যাদা পাবে এবং যুক্তাক্ষর বিশ্লিষ্ট হবে, এবং প্রতিটি অক্ষরের জন্য আলাদা আলাদা চরণ রচিত হবে। যেমন: অক্ষর » অ, ক, ষ, র; রাত » রা, া/আ, ত।
- প্রতি চরণে শব্দসংখ্যা কবির ভাবের প্রকাশভঙ্গিমার প্রেক্ষিতে যেকোনো হতে পারে।
- যে শব্দটিকে বিষয়বস্তু ধরা হবে, তার প্রতিটা অক্ষর #৩ নং-এর প্রেক্ষিতে বিশ্লিষ্ট হয়ে উক্ত চরণের প্রতিটি শব্দের প্রথম অক্ষর হবে। প্রয়োজনে অক্ষরটি তার সাথে কার নিতে পারবে।
শব্দটি যেভাবে বিশ্লিষ্ট হলো, তা প্রতি চরণের বাম পাশে উল্লেখ করতে হবে এবং ‘কার’-কে অক্ষর দ্বারা রূপান্তর করে দেখাতে হবে এবং এর পর কোলন (:) দিতে হবে।(এখন লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে এটা অবান্তর। পাঠকের উপরই এই অনুবাদের ভারটা ছেড়ে দেয়া উচিত। এভাবে চরণের আগে কোলন দিয়ে লেখা থাকলে কবিতা পড়ার মজা পাঠক পাবেন না।)- কবিতার অন্তঃতালে কবির সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে।
- মধ্যস্থিত অক্ষরগুলো কোনো চরণ তৈরি করবে না। যেমন: ং, ঃ, ঞ, ড়, ঢ় প্রভৃতি।
যেহেতু এই চিন্তাধারার জনক বন্ধু প্রান্তিক, তাই প্রান্তিকের স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে ওর নামেই এই ঢঙের নাম দিয়েছিলাম: “প্রান্তিক ঢঙ”।
প্রান্তিক ঢঙে আমি পরবর্তিতে দুটো কবিতাও লিখে ফেলেছিলাম উচ্ছাসের ঠ্যালায়। কবিতা দুটো প্রকাশ করছি:
বাংলাদেশ
মঈনুল ইসলাম
বঙ্গদেশ বদ্বীপে বহে বাহিকা।
আজও আচরিত আচরণ আঁকা।
লুপ্ত লালিমা লয়ে লোহিত লীলায় –
আকাশ আন্দোলিত আপন আভায়,
এখানে এসেছে এদের একাত্মতায়।
দশেরে দিলে দিব্য-দয়া দেবতায়;
শত শতাব্দির শরণ শংসায়।
১১ জুন ২০০৫ খ্রিস্টাব্দ রাত ২৩:৫২
রাত
মঈনুল ইসলাম
রবির রথ রাহাজানিতে রহিত রমণে।
আঁধার আমামা আঁকিয়া আয়ত্তি আগুনে।
তপন-তস্কর তাকাইয়া তাপিত-তপনে।
২ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ খ্রিস্টাব্দ রাত ২১:৩৭
এটার ব্যাখ্যা লিখে রেখেছিলাম: রাতের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরলাম। রাত এসে সূর্যের যাত্রাতে যেন রাহাজানি করলো। আঁধারের পাগড়ি পরিয়ে দিলো সূর্যের আগুনে এবং সূর্য-চোর (রাত) তাকিয়ে থাকে পরদিনের সূর্যের দিকপানে। ‘প্রান্তিক ঢঙ’-এ দ্বিতীয় প্রয়াস।
– মঈনুল ইসলাম
_______________________________
শব্দসংকেত
বাহিকা: এখানে প্রবাহিকা অর্থে ব্যবহৃত। প্রবাহিকা বলতে নদী বোঝানো হয়েছে। লুপ্ত: লুণ্ঠিত/বিলীন। দেবতা: প্রভু অর্থে। শরণ: আশ্রয়দাতা। শংসায়: আকাঙ্খায়।
রমণ: পতি (এখানে সূর্যকে দিনের পতিরূপে কল্পনা করা হয়েছে)। আমামা: পাগড়ি; শিরোস্ত্রাণ। তস্কর: চোর; লুণ্ঠনকারী। তপন: সূর্য।
এযে দেখছি কবি মধুসুদন দত্তের ভুত চেপেছে ঘাড়ে। সনেটের মত কবিতার হিসাব বিজ্ঞান।
৬ নং পয়েন্টের প্রথমাংশের দরকার নেই বলে মনে করি,যা কবি নিজেই বর্জন করতে চেয়েছেন।সহমত। নাহলে ওটা আর কবিতা থাকবেনা।
‘বাংলাদেশ’ নামক কবিতাটি পূন যাচাইয়ের অনুরোধ রইলো। এখানে ‘এ’ কারের চরণ ‘দ’ এর আগে চলে এসেছে।নিয়ম অনুযায়ি সেরকম হওয়ার কথা না।
শব্দ প্রয়োগ ভাল হয়েছে।কবিতার চর্চা অব্যাহত থাকুক।
বাংলাদেশ কবিতার ক্রিটিসিযম এক্কেবারে ঠিক। ছাত্রাবস্থার লেখা। ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ।