জুতা পরে নামায আদায়, নাকি জুতা খুলে

জানাযার নামাযে একটা সাধারণ দৃশ্য হলো সবাই নিজের পায়ের জুতা খুলে সামনে রেখে খালি পায়ে দাঁড়াচ্ছেন, কিংবা জুতা খুলে তার উপরই দাঁড়াচ্ছেন। তেমনি, বাসে, ট্রেনে যারা সিটে বসে নামাজ পড়ছেন, দেখা যাচ্ছে, সিটে বসে আবার পা থেকে জুতা খুলে নিয়ে জুতার উপর পা রেখে নামায শুরু করছেন। এই কাজটির আসলে প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা, তা ইসলামের নিরিখে দেখে নেয়া যেতে পারে:

হাদিস ১:

যখন তোমরা কেউ মসজিদে আসবে তখন সে দেখবে, যদি সে তার পাদুকায় কোনো ময়লা বা নাপাকি দেখতে পায় তাহলে তা মুছে ফেলবে এবং পাদুকা পরেই সালাত আদায় করবে।

(উৎস: আবু দাউদ, আস-সুনান, ১/১৭৫; ইবন খুযাইমা, আস সহীহ, ১/৩৮৪; ইবন হিব্বান, আস সহীহ, ৫/৫৫৮-৫৬০; আলবানী, সহীহুল জামিয়, ১/১৪২, নং ৪৬১)

হাদিস ২:

তোমরা ইহুদী-খ্রিস্টানদের বিরোধিতা করবে; কারণ তারা পাদুকা পায়ে এবং জুতাজাতীয় চামড়ার মোজা পায়ে দিয়ে সালাত আদায় করে না।

(উৎস: আবু দাউদ, আস-সুনান, ১/১৭৬; ইবন হিব্বান, আস সহীহ, ৫/৫৬১; আল-মুসতারাক, ১/৩৯১; আলবানী, সহিহুল জামিয়, ১/৬১১, নং ৩২১০)

ওলামাদের বক্তব্য হচ্ছে, ক্বোরআনে সূরা (২০) ত্বা-হা’র ১২ নম্বর আয়াতে উল্লেখ, জনাব মুসা [আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন] আল্লাহর নির্দেশে পাদুকা খুলে তুয়া প্রান্তরে প্রবেশ করার ফলে ইহুদিরা সিনাগগে (ইহুদিদের ধর্মালয়) জুতা খুলে প্রবেশ করাকে পবিত্রতার নিদর্শন গণ্য করেন। ঠিক এমন ভক্তির নিদর্শনই আমরা শহীদ মিনার কিংবা স্মৃতিসৌধেও দেখি, সবাই পবিত্রতা কিংবা ভক্তির নিদর্শন হিসেবে জুতা খুলে শহীদ বেদিতে উঠেন। কিন্তু ইসলাম এখানে জুতা, পবিত্রতার (holiness, sanctity, sacredness) স্বার্থে নয়, বরং পরিচ্ছন্নতার (cleanliness) স্বার্থে হলে খোলার অনুমতি দিয়েছে। যদি জুতা পরিষ্কার হয়, তবে পরিধেয় অবস্থায়ও তা পবিত্রতা নিশ্চিত করে —এমনটাই বিশুদ্ধ হাদিসের নির্দেশে আদিষ্ট বলে প্রতীয়মান হয়।

এই আলোচনা থেকে আমরা কিন্তু দুটো শব্দ সম্পর্কে এবং তাদের মধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল হলাম। আমরা এখন জানি “পরিচ্ছন্নতা” এবং “পবিত্রতা” এক বিষয় নয়। পরিচ্ছন্নতা হলো দৃশ্যমান সুচিতা, যা মানবসৃষ্ট বিধিবিধান দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে, আর পবিত্রতা হলো ধর্মীয় বিধানে উল্লেখিত কার্যাবলী সাধনে অর্জিত বিশেষ অবস্থা।

-মঈনুল ইসলাম

তথ্যসূত্র

রাসূলুল্লাহ (সা)-এর পোশাক ও পোশাকের ইসলামী বিধান, ড. খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা থেকে জানুয়ারি ২০০৮ প্রকাশিত। পৃষ্ঠা ১৬৮-১৬৯: ‘জুতা খুলায় অনুকরণ বর্জন’ অনুচ্ছেদ।)

৪ thoughts on “জুতা পরে নামায আদায়, নাকি জুতা খুলে

  1. প্রায় ৫ বছর আগে মিশকাত শরীফে আমি এই সংক্রান্ত একটা হাদিস পড়েছিলাম, এখনো মনে আছে সেটি। হাদিসটি হলো-

    একবার রাসুল (স) সাহাবাদের নিয়ে নামাজের ইমামতি করছিলেন। নামাজরত অবস্থায় ফেরেশতা জিব্রাইল (আ) রাসুল (স) কে জানালেন- “ইয়া রাসুলুল্লাহ (স), আপনার জুতায় নাপাকী রয়েছে”। তখন রাসুল (স) সাথে সাথে জুতা খুলে রাখলেন এবং নামাজের সালাম ফেরানোর পর সাহাবীদের জুতা খোলা অবস্থায় দেখলেন। তখন তিনি সাহাবীদের জিজ্ঞেস করলেন- “তোমরা কেন জুতা খুলেছিলে?” সাহাবীরা উত্তরে বললেন- “আপনাকে জুতা খুলতে দেখে আমরাও জুতা খুলে রেখেছিলাম”। তখন রাসুল (স) বললেন- “ফেরেশতা জিব্রাইল এসে আমাকে জানালেন যে আমার জুতায় নাপাকী আছে, সে কারণে আমি সংগে সংগে জুতা খুলে ফেলেছিলাম। কিন্তু তোমাদের জুতায়তো নাপাকী ছিলোনা”।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল প্রকাশ করা হবে না

আপনি এই HTML ট্যাগ এবং মার্কআপগুলো ব্যবহার করতে পারেন: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

*