ধারাবাহিক: অবক্ষয়ের সোপানে অজ্ঞ পদক্ষেপ —এর একটি পর্ব
ঘটনা ১: সেপ্টেম্বর ২০১০ | একটি প্রাইভেট ব্যাংক, মতিঝিল, ঢাকা:
দুই সহকর্মী বসে কথা বলছেন। প্রথমজন দ্বিতীয় জনের মোবাইল ফোনটা টেনে নিলেন। জিনিসটা না দেখলেই নয়। দ্বিতীয় জন ইতোমধ্যেই জিনিসটা দেখতে দেখতে পঁচিয়ে ফেলেছেন। তার পাশে বসেই সহকর্মী, নিবিষ্ট মনে তাকিয়ে আছেন মোবাইল ফোনের পর্দায়।
পরদিন অফিসে একটা কানাঘুষা চলছে কয়েকজন সহকর্মীর মধ্যে। তাদের একজোট হওয়া প্রয়োজন। একটা নিরাপদ জায়গা খোঁজা দরকার। হ্যা, একমাত্র ক্যাশ কাউন্টারটাই সবচেয়ে নিরাপদ। কিন্তু ওখানে বসেন এক আপু। তাই সময় বেছে নেয়া হলো সন্ধ্যায়। ঠিক মাগরিবের পরপরই অফিসের পাঁচজন যুবক একজোট হয়ে গেলো ঐ কোঠায়। কম্পিউটারটা চালু করে দেয়া হলো। পেন ড্রাইভে করে আনা জিনিসটা চালু হতে সময় লাগলো না। তারপর পাঁচজোড়া লোলুপ পিশাচ চোখ নিবিষ্ট চিত্তে দলবদ্ধভাবে উপভোগ করলো সাম্প্রতিককালের কোনো এক নায়িকার শয্যাদৃশ্য।
বাইরের কক্ষ থেকে তাদেরই এক অধস্তন সহকর্মী তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে তাদের অবস্থা। সুযোগ পেলে সেও সামিল হতো কিনা, তা জানি না; তবে সে বসে বসে হা হয়ে দেখছে এইসব উর্ধ্বতনদের কান্ডকারখানা।
ভবিষ্যতের জন্য কি এটা উর্ধ্বতনের দেয়া শিক্ষা নয়?
ঘটনা ২: পূর্ব রামপুরা, ঢাকা:
“আছে তোর কাছে ঐটা?”
“আবার জিগ্স!”
বন্ধুর মোবাইল থেকে ব্লুটুথের ভেলায় চড়ে মুহূর্তেই নিজের হয়ে গেলো জিনিসটা। সেটা নিয়ে এখন সে পড়ে আছে তার নির্জন কোঠায়।
বন্ধুর কাছ থেকে বন্ধুর কী অপূর্ব উপহার!
ঘটনা ৩: শাহজাহানপুর, ঢাকা:
স্কুল থেকে বেশ উত্তেজিত হয়ে ফিরেছে সে। খবরটা একাধারে দারুণ এবং আকর্ষণীয়। এমন মায়াবতী নায়িকার এমন করুণ চিত্র দেখার লোভ কি সামলানো যায়? মুহূর্তের মধ্যে ইউটিউবের চিপার মধ্যে ঢুকে বের করে আনা হলো সেই কাঙ্ক্ষিত ভিডিওটা। তারপর একটা ক্লিক। চালু হয়ে গেলো ভিডিওটা। মোহাচ্ছন্ন হয়ে দেখলো সে।
পরদিন তার বাসায় আরো কয়েকজন বন্ধু এসেছে। দরজাটা লাগিয়ে দিলো সরগোল জানান না দিতে। তারপর বেশিক্ষণ লাগলো না। স্কুল পড়ুয়া একঝাঁক উঠতি কিশোর জামাতবদ্ধ হয়ে দেখলো ভিডিওটা।
কলেজ জীবন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন, চাকরি জীবন, এমনকি বিবাহিত জীবনেও এরকম আরোও কয়েকটি জামাত তৈরি করার কী মোক্ষম ড্রিল!
উপরোক্ত প্রতিটা বর্ণনা, বাস্তব ঘটনাকে রূপকের আশ্রয়ে লেখা হয়েছে। ঘটনাগুলো অবাস্তব কিংবা কল্পনাপ্রসুত নয়। বাস্তব এই ঘটনাগুলো নিছক কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই মনে হয়। কিন্তু যখন এই চিত্রটা সামাজিক চিত্র হয়ে দাঁড়ায়, তখন আর তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ঢাকার একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানেই শুধু এরকম ঘটনা ঘটছে না, বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, প্রায় সব ক’টি প্রতিষ্ঠানের ভিতরকার চিত্রই এটা- পদ্ধতি কিংবা ধরণ-ধারণের সামান্য পার্থক্য ছাড়া মূল বিষয় এক।
আমার এক বন্ধু এসবে তেমন কোনো সমস্যা দেখতে পায় না। তার মতে, ‘অফিসটা একটা পরিবার। তুই-আমি ফ্যামিলিতে যেমন সুখ-দুঃখের মধ্যে বাঁচি, অফিসেও অফিসের মানুষগুলোকে নিয়ে সেরকম সুখ-দুঃখের মাঝে থাকি। অফিসে, এরকম টুকটাক মজা হলে দারুণই লাগে।’
কথা সেখানে না। কথা হলো, মজার ধরণে। মজার ধরণটা এভাবে বদলে গেলো কেন? বন্ধু-বান্ধবদের আড্ডার বিষয়বস্তু এভাবে বদলে গেলো কেন?
‘আরে কেউ কেউ এগুলোতে মজা পায়, কেউ কেউ পায় না।’
কথা হলো, এখন আর ‘কেউ কেউ’ নেই। এখন সবাই, গণহারে- এইসব বিষয়েই মজা খুঁজে নিচ্ছে। স্বামী তার স্ত্রীর সাথে কী কথা বললো, সেসব অডিও; স্বামী তার স্ত্রীর সাথে কী করলো, সেসব ফুটেজ; কোন বেশ্যা তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কী করলো, সেসব ভিডিও এখন মজার বিষয় হয়ে গেলো?
ভারতের “কমেডি সার্কাস”-এর কৌতুকের সিংহভাগ থাকে চটুল যৌনতার রূপকাশ্রয়ী বিবরণ। আমাদের বন্ধুমহলের আড্ডার সিংহভাগ থাকে যৌনতার চটুল কৌতুকের ছড়াছড়ি, কিংবা আড়ালে, মোবাইলে-মোবাইলে ব্লুটুথে এইসব “মজার বিষয়”-এর লেনদেন।
ক’দিন পরে অফিসের মিটিং রুমে, অফিশিয়াল মিটিং ডেকে, নিজের স্ত্রীকে নিয়ে, সবার সামনে “বেডরুম কনফারেন্স” করবেন না -এই নিশ্চয়তা এই যুবসমাজ দিতে পারবে না।
বন্ধুরা, বন্ধ করো, নয়তো মরো।
-মঈনুল ইসলাম
Afsos, tor ei lekhata jodi prithibir protita manush ontotopokhkhe Bangladesher protita jubok ke poraite partaam, nijer kache oneek shanti laagto…
অনুবাদ: “যে কাজটি কখনও করা হয়নি, সে কাজটি হয়ে যাবে, এমনটা ভাবা অযৌক্তিক কল্পনা আর আত্ম-সাংঘর্ষিক হবে, যদিনা সেই কাজটি করার জন্য ইতোমধ্যে প্রচেষ্ঠাই না চালানো হয়।”
তার পরও এই অনুভূতি মনে জাগার জন্য ধন্যবাদ। ঈশ্বর সহায় হোন।