মোবাইল ফোন আমার জন্য না।
মোবাইলে ফোন এলেই আমার মস্তিষ্কে ঝড় উঠে। কেন হয়? আমি জানি না। বলতে পারেন, এই ব্যাপারে আমি বিকলাঙ্গ।
আমার কাছে মোবাইল ফোন শ্রেফ একটা SOS। বিপদসংকেত। 👹 চরম জরুরি মুহূর্ত ছাড়া আমি মোবাইল ফোনকে নিতে পারি না।
কিন্তু সবাই তো সেরকম না। “বাবু খাইছো?”, “বাবু ঘুমাইছো?” জেনারেশনের কাছে মোবাইল ফোন দুধভাত। আমার সাত-জনমের ভাগ্য, আমার গিন্নী আমাকে বুঝেছেন, তিনি আমার এই অক্ষমতাকে শ্রদ্ধা করেন।
আমার এক ক্লায়েন্ট ছিল, অফিসে, পান-থেকে চুন খসা তো পরে, খসার উপক্রম হলেই উনি ফোন দিতেন। একটা ইমেইল পাঠিয়েছেন, পাঠিয়েই আবার কল দিতেন। আর কল দিলেই তো, আমি শেষ। তাকে বলে-কয়ে হোয়াট্সঅ্যাপে আনলাম, এবার নিশ্চয়ই চ্যাট হবে…। না, এবার হোয়াট্সঅ্যাপে কল করেন।
বলতে পারেন, প্রত্যেকটা মোবাইল ফোনকল আমার মস্তিষ্কের জন্য একেকটা ভূমিকম্প। ভূমিকম্প হলে কী হয় আপনার? হাতে কাজ উঠে? প্রশ্নই উঠে না, দ্রুত আপনার মন নিস্তার পেতে চায় সমস্যাটা থেকে। জগতের সবকিছু একদিকে, আর ভূমিকম্প আরেকদিকে। মোবাইলে রিং বাজলে আমার অবস্থাটা হয় ঠিক ওরকম।
কেন হয়? আমি জানি না। আমি নিজের ব্রেনকে নিয়ন্ত্রণের অনেক চেষ্টা করেছি, পারিনি।
এর চেয়ে ইমেইলে আমি স্বচ্ছন্দ। চ্যাট চ্যানেলে আমি স্বচ্ছন্দ। আমি লিখে ভালো বলতে পারি, যতটা আমি মুখে বলি, তারচেয়েও। সামনা-সামনি কথোপকথনে আমি তুলনামূলক রেসপন্সিভ।
এটা আরো মারাত্মক হয়, out-of-context ফোনকলে। যেমন: ছুটির দিনে অফিস থেকে ফোন, বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেই বাসা থেকে ফোন, কিংবা এক্সকার্শনে বাসা থেকে ফোন, কিংবা অচেনা নাম্বারের ফোন…
এই একটা কারণে, আমার আশেপাশের মানুষের কাছে আমি খুবই অসামাজিক। আত্মীয়-স্বজন, অফিস, ক্লায়েন্ট SOS ছাড়া যদি কল দেন, আমার মস্তিষ্কে তখন ভূমিকম্প শুরু হয়। আমার মস্তিষ্ক ধরে নেয়, কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। আপনি হয়তো প্রয়োজনেই কল করেছেন, কিংবা প্রয়োজনটা হয়তো আমারই…, কিন্তু আমার মস্তিষ্কে তখন ভূমিকম্প থেকে বাঁচার আকুতি।
মোবাইল ফোনটা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম, পারিনি। তাই আশেপাশের মানুষগুলোর থেকে অন্তত আমার প্রতি এতটুকু সহযোগিতা, সহমর্মিতা প্রত্যাশা করতেই পারি।
ছবি: মেন্সহেল্থ