সুন্দরবনে, মরিচঝাঁপি গণহত্যা ১৯৭৯

সুন্দরবনে, মরিচঝাঁপি গণহত্যা ১৯৭৯

১৯৪৭-এ ভারত আর পাকিস্তান ভাগাভাগি হবার পরে পূর্ব পাকিস্তান মানে এখনকার বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা ভারতে চলে যেতে থাকেন। তখন নিম্নশ্রেণীর নমশুদ্র হিন্দুরা পশ্চিমবঙ্গে জায়গা পাননি। তাদেরকে জায়গা করে দেয়া হয়েছিলো দূরে, দণ্ডকারণ্যের পাথুরে জঙ্গলে। সেখানে টিকে থাকতে না পেরে তারা যখন আবার পশ্চিমবঙ্গে ফেরত আসতে থাকেন, তখন ঐ সময়কার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর আশ্বাসে এই উদ্বাস্তু লোকগুলো নিজেদের চেষ্টায় আশ্রয় নিয়েছিলো সুন্দরবনের মরিচঝাঁপি নামক একটা চরে। সেটা তখন উষর ছিলো, শুধু বড় বড় ঘাস, গরান গাছ গজিয়েছিলো।

সেখানে তারা স্কুল করেছিলো, দোকান করেছিলো, ফার্মেসি ছিলো, পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছিলো, চাষাবাদের বন্দোবস্ত করেছিলো। তারা সেখানে বসতি করলেও, পরে এটা একটা অভয়ারণ্য বলে সেই জ্যোতি বসুই দ্বীপের লোকজনকে উচ্ছেদ করতে পুলিশ পাঠান। অথচ, তখনকার ভারত সরকারের মানচিত্রেও এটা কোনো অভয়ারণ্য ছিলো না – ছিলো শ্রেফ একটা চরাঞ্চল।

এই উচ্ছেদ এতোটাই নির্মম ছিলো যে, পুলিশ ঘিরে ধরে তাদের নৌকা ডুবিয়ে দিচ্ছিলো যাতে তারা আশপাশের দ্বীপ, চর থেকে খাবার সংগ্রহ করতে না পারে। পুলিশের গুলিতে, দ্বীপের ঘরবাড়িতে দেয়া আগুনে পুড়ে, খাবার খেতে না পেয়ে, নৌকাডুবিতে পানিতে ডুবে, ক্ষুধার কষ্টে ফাঁসি দিয়ে, জেলহাজতে নির্যাতনে অনেক কষ্টে মারা যায় শত শত দ্বীপবাসী উদ্বাস্তু হিন্দু

ঠিক তার পরদিনই হিন্দুদের বিদ্যার দেবী সরস্বতীর পূঁজা ছিলো – স্কুলের বাচ্চারা পূঁজার আয়োজনে ব্যস্ত ছিলো সেদিন – কিন্তু পুলিশ সরস্বতীর প্রতিমাও ভেঙে দিয়েছিলো, অনেক বাচ্চাকেও মেরে ফেলেছিলো। অনেকে ক্ষুধার জ্বালায় ঘাস খেয়ে বেঁচেছিলো। কয়েক ট্রাক, লঞ্চ ভর্তি করে লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। লাশগুলোকে পোড়ানো তো দূরের কথা, মাটি চাপাও পর্যন্ত দেয়া হয়নি, বস্তাবন্দী করে টাইগার প্রোজেক্টে বাঘকে খাওয়ানো হয়েছিলো। বিষয়টা ছিল ডেকে এনে অপমান করবার মতো – আশ্রয় দিয়ে খুন করার মতো জঘন্য ব্যাপার।


মরিচঝাঁপি গণহত্যার এই তথ্যটুকু আমি অল্পবিস্তর লেখা পড়ে, ভিডিও দেখে জড়ো করেছি – ভুলভ্রান্তি থাকা খুবই স্বাভাবিক, কারণ আমি ইতিহাসবেত্তা নই। এই বর্ণনায় নিপীড়িতের দৃষ্টিকোণ প্রকাশ পেয়েছে মাত্র। কিন্তু তৎকালীন স্থানীয় সরকারের কিংবা পুলিশের দৃষ্টিকোণ এখানে প্রকাশ পায়নি। অর্থাৎ এই বর্ণনা একপেশে। মূলত এই লেখার অবতারণা অন্যপক্ষের দৃষ্টিকোণটা জানার আগ্রহ থেকে। আক্রমণ না করে গঠনমূলক আলোচনা প্রত্যাশা করছি…

ছবি ইন্টারনেট থেকে…

প্রকাশ করেছেন

মঈনুল ইসলাম

An ex-Notre Damian, a Graphics, UI Design & Web Development professional, seeking truth in modern world using his interests in theology, theosophy, occult, psychology, cultures, linguistics, noetics, material science and logic.

2 thoughts on “সুন্দরবনে, মরিচঝাঁপি গণহত্যা ১৯৭৯”

    1. নির্দিষ্ট তথ্যসূত্র দেয়া সম্ভব নয়, কারণ আমি বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে খণ্ড খণ্ড তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম অনেকদিন আগে।
      তবে এই ভিডিওটা দেখতে পারেন: https://www.youtube.com/watch?v=-tL0hVag2es

মন্তব্য করুন