An English translation of this blog post can be found here:
7 Skies and Krishnapath Theory
বিজ্ঞানীদের দেখার চোখ বাড়িয়ে দিয়েছিল হাবল টেলিস্কোপ। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের নানা বাধার উর্ধ্বে থেকে হাবল দেখিয়ে দিচ্ছিল দূ-র..বহু দূ..র…। হাবলই এপর্যন্ত মানুষের সবচেয়ে শক্তিশালী চোখ। হাবলের কল্যাণে আমরা অসীম কালো মহাকাশের বহুদূর অবধি দেখতে পেরেছি এখন পর্যন্ত। যতদিন না হাবলের জায়গায় James Webb Space Telescope ওড়ানো হচ্ছে, ততদিন হাবলের চোখ নিয়েই আমাদেরকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। …যাহোক হাবলের কল্যাণে আমরা যতদূ-র দেখেছি, তাতে সবচেয়ে দূরবর্তী তারাটি হলো V12 বা Variable 12; এটি NGC 4203[ছবি] গ্যালাক্সিতে রয়েছে।[১] আমরা কি জানি, ‘তারা’ বা ‘তারকা’ আসলে সূর্যই? অনেক অনেক দূরে আছে বলে ওগুলোকে ছোট্ট লাগে, তাই তাদেরকে আমরা তারা বা তারকা বলে থাকি।
সবচেয়ে দূরবর্তি তারা আসলে কোনটি, সে বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে।[২] সে বিতর্কে এখন আর যাচ্ছি না… সেটা নাহয় অন্য আরেকদিন আলোচনা করা যাবে… কারণ সেবিষয়ে জানতে হলে রেডশিফট, মহাবিশ্বের কেন্দ্র -এসব বিষয়ে আলোচনা দরকার, যা সময়সাপেক্ষ এবং এই আলোচনার সাথে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক নয়। যাহোক, যদি V12-কে দূরবর্তী তারা ধরে নিই, তাহলে এটি পৃথিবী থেকে ১০.৪ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। আলো প্রতি সেকেন্ডে ১,৮৬,০০০ মাইল (২,৯৯,৩৩৭.৯৮৪ কিলোমিটার) দূরে চলে যায়, মানে এই মুহূর্তে যে আলো আপনি জ্বেলেছেন, তা এই মুহূর্তে [মানে এই এক সেকেন্ডে] ১,৮৬,০০০ মাইল দূরে চলে গেছে। এভাবে আলো ১ বছরে যতদূরে যায় তাকে ‘১ আলোকবর্ষ’ বলে। ১ আলোকবর্ষ = পুরোপুরি ৯,৪৬,০৭৩,০৪,৭২,৫৮০.৮ কিলোমিটার।[৩] মানে আপনি যে আলো এক বছর আগে জ্বেলেছেন, তা এই এক বছরে নয় হাজার চারশত ষাট কোটি কিলোমিটারের বেশি দূরে চলে গেছে। এখন এই ১০.৪ মিলিয়ন আলোকবর্ষ মানে আসলে কত দূরে ঐ তারাটি?
১০.৪ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে মানে হলো ১,০৪,০০,০০০ আলোকবর্ষ দূরে; মানে (১০৪০০০০০ × ৯৪৬০৭৩০৪৭২৫৮০.৮) কিলোমিটার দূরে… হিসাব করে নিন। আপনি দেখে আশ্চর্য হতে পারেন: এ..তো.. দূ..রে…! আশ্চর্য হলেও এটাকেই আমরা এখন পর্যন্ত দেখা সর্বশেষ তারা ধরে নিচ্ছি। এতো দূরের তারা দেখে মুসলমান হিসেবে স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে: আমরা কি তবে [ক্বুরআনবর্ণিত] দ্বিতীয় আকাশ দেখতে পাচ্ছি?
না, আল্লাহ ক্বুরআনের সূরা (৪১) হা-মীম সেযদাহ্’র ১২ নম্বর আয়াতে বলছেন:
উপরন্তু তিনি দুদিনে এর (ধোঁয়ার মতো পদার্থের) সাত আকাশ সৃষ্টি করলেন, আর তিনি প্রত্যেক আকাশে তদুপযোগী স্বীয় নির্দেশ পাঠালেন; আর আমি এই নিকটবর্তী আকাশকে নক্ষত্ররাজি দিয়ে সুশোভিত করেছি এবং একে সুরক্ষিত করেছি; এ পরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানীর (আল্লাহ’র) ব্যবস্থাপনা।[৪]
অর্থাৎ আল্লাহ শুধুমাত্র প্রথম আকাশকে তারা দিয়ে সাজিয়েছেন, মানে, দ্বিতীয় আকাশে কোনো তারা বা নক্ষত্র নেই।
এর মানে হচ্ছে আমরা এখনও এতদূর অবধি শুধুমাত্র সাত আকাশের মধ্যে প্রথম আকাশই দেখছি, এখনও দ্বিতীয় আকাশের কোনো নাম-নিশানা পাইনি। …এপর্যন্ত এতটুকু আমরা নিশ্চয়ই জানি যে, ‘আকাশ’ শব্দটা দ্বারা আসলে আমাদের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলীয় আকাশকে বোঝানো হচ্ছে না কেবল। এখানের মহাকাশের ঊর্ধ্বে আরেক আকাশের বর্ণনা করা হচ্ছে। হাদিসে ইসলামবর্ণিত এই সাত আকাশের স্কেল (মাপকাঠি) সম্বন্ধে যা বলা হয়েছে, তার সারমর্ম এরকম :
একটা বিশাল মাঠের মধ্যে একটা ‘পেঁয়াজের খোসা’ (অন্য বর্ণনায় ‘আংটি’র উল্লেখ রয়েছে) পড়ে থাকলে যেমনটা দেখাবে, দ্বিতীয় আকাশের তুলনায় প্রথম আকাশ ঠিক তেমনি। এমনিভাবে তৃতীয় আকাশের তুলনায় দ্বিতীয় আকাশও তেমন। এই ভাবে সাত আকাশ, একটা থেকে অপরটা বড়, আর সাত আকাশকে ঘিরে আল্লাহ’র আরশ।
ইসলাম বর্ণিত মহাবিশ্বের এই ব্যাখ্যাটি (সপ্তাকাশতত্ত্ব) আমাকে একটি বৃত্তাকার মহাবিশ্বের ধারণা দেয়, যা দেখতে অনেকটা এরকম: একটা ছোট বৃত্ত, যাকে ঘিরে আরেকটা বৃত্ত, তাকে ঘিরে আরেকটা বৃত্ত…এভাবে সাতটা বৃত্ত। সবচেয়ে মাঝখানের বৃত্তটা হলো সবচেয়ে ছোট বৃত্ত অথচ সেই বৃত্তটাই হলো আমাদের কাছে এত্তো বিশা..ল মহাকাশ। (যদিও মহাবিশ্ব সম্বন্ধে বৃত্তাকৃতি ছাড়াও আরও কিছু ধারণা বা মডেল প্রচলিত রয়েছে)
অতি সম্প্রতি বিজ্ঞান আমাদেরকে মহাকাশের রহস্যময় একটি স্থিতির কথা বলতে শুরু করেছে, যাকে আমরা Blackhole বা কৃষ্ণগহ্বর বলে জানি। আমাদের সূর্যের চেয়ে ১০-৫০ গুণ বড় সূর্যগুলো বা তারাগুলো, মানে আমাদের সূর্যের মতো দশটা বা পঞ্চাশটা সূর্যকে একসাথে করলে যতবড় তারা হবে, তত বড় তারাগুলো যখন মারা যায়, তখন তাদের স্বাভাবিক মৃত্যু হয় না। তারা বিশাল এক বিষ্ফোরণের মাধ্যমে (supernova) মারা যায়। মারা যাওয়ার পরে তারা হয় নিউট্রন তারা হয়, নতুবা কৃষ্ণগহ্বর হয়ে যায়। কৃষ্ণগহ্বর এমন একটা আজব গর্ত, যার এত্তো ক্ষমতা যে, তার আশেপাশে কিছু যদি থাকে, তবে সে তার সবকিছু টেনে সেই গর্তে নিয়ে ফেলে। এমনকি এই এতোটুকুন একটা গর্তের মধ্যে কোটি কোটি সূর্য-গ্রহ ঢুকে যেতে পারে। কল্পনা করুনতো পানিতে একটা ঘূর্ণি… কিভাবে পানির উপরস্থিত সবকিছুকে টেনে নিজের ভিতরে নিয়ে যায়… কৃষ্ণবিবরও যেন অনেকটা তেমনই। বিজ্ঞান আজও জানে না, এই গর্তটা কোথায় নিয়ে যায় এসব।
এর আকর্ষণ ক্ষমতা এতো বেশি যে, আমাদের জানা জগতের সবচেয়ে দ্রুতগামী পদার্থ ‘আলো’ও পর্যন্ত এই আকর্ষণের কাছে হার মানে। অর্থাৎ যদিও কৃষ্ণগহ্বর থেকে কোনো আলো বের হয়, তা আর বের হতে দেয় না এই কালো গর্ত, সেটাকেও টেনে নেয়। আমরা যেহেতু কোনো বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত না হলে সেটাকে দেখতে পাই না, আর কৃষ্ণবিবর থেকে আলো বের হতে পারে না, তাই কৃষ্ণবিবর আজও শক্তিশালী দূরবিক্ষণ যন্ত্র থাকাসত্ত্বেও মানুষ দেখতে পারেনি। কৃষ্ণবিবর সম্পর্কে বিজ্ঞানের সবচেয়ে রহস্যময় বক্তব্যটা হলো: ‘কৃষ্ণবিবরে পদার্থবিদ্যার সব সূত্র ধ্বংস হয়ে যায়, যেখানে সময়-স্থান সবকিছুই বিলিন হয়ে যায়’। কারণ পদার্থবিদ্যার সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত বক্তব্যটাই হলো: শক্তি সৃষ্টি করা যায় না, এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় রূপান্তর করা যায় মাত্র। অথচ কৃষ্ণবিবর আদতে যেন শক্তিকে ধ্বংসই করে দিচ্ছে…। বিজ্ঞান অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছে কৃষ্ণবিবরের রহস্যোদ্ঘাটনের। তবে আজ পর্যন্ত কৃষ্ণবিবরের কোনো ব্যাখ্যা নেই।
আমার ‘কৃষ্ণপথ মতবাদ’
এই যে ব্যাখ্যা নেই, এটাই হলো আমার এই মতবাদের একটা সুযোগ। আমার মনে হয়, এই কৃষ্ণবিবর আসলে প্রথম আকাশ থেকে দ্বিতীয় আকাশে যাবার একটা পথ। কৃষ্ণবিবর সম্পর্কে এই মতবাদকে আমি নাম দিয়েছি ‘কৃষ্ণপথ মতবাদ’ (KrishnaPath Theory: BlackWay Theory)। এটা ইসলামবর্ণিত বক্তব্য সমর্থন করে কিনা, তা আমি জানি না, এটা ইসলাম বিরোধী কিনা তাও আমি জানি না, এটা শ্রেফ আমার একটা মত, কল্পিত মত। ব্যাপারটা অনেকটা কল্পবিজ্ঞানের টাইম মেশিন ধারণার মতো, যেখানে একটা ওর্মহোল (wormhole) এক সময় থেকে আমাদেরকে আরেক সময়ে নিয়ে যাবে…এক কাল থেকে আরেক কালে নিয়ে যাবে।
এমনকি বিজ্ঞানের বর্তমান ধারণানুযায়ী কৃষ্ণবিবরের কল্পিত ছবি (চিত্রণ ক) যেরকমটা দেখা যায়, ফানেল আকৃতির কৃষ্ণবিবর; আবার ফানেল আকৃতির ওর্মহোল (চিত্রণ খ), দুটোই আমার ধারণার সাথে মিলে যায়। ফানেল আকৃতির ওর্মহোলকে বলা হয় Lorentzian wormhole বা Schwarzschild wormhole বা Einstein-Rosen bridge । এটা শ্রেফ মিল হওয়া একটা ধারণা। গাণিতিক প্রমাণের উপর ভিত্তি করে করা কোনো বৈজ্ঞানিক মতবাদ নয় এখনও।
এই কল্পবিজ্ঞানই হয়তো ভবিষ্যৎ বাস্তবতা, কে জানে তা…?
– মঈনুল ইসলাম
সাম্প্রতিক তথ্য: ২০১৩
২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ২৩ অক্টোবর ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক নিউজ অন্যান্যদের মতো জানায় যে, কেক অবযারভেটরির একটা ১০ মিটার টেলিস্কোপের সহায়তায় এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে দূরবর্তি গ্যালাক্সি (ছায়াপথ) হলো z8_GND_5296, যারা পৃথিবী থেকে ১৩.১ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। (তথ্যসূত্র^)
সাম্প্রতিক তথ্য: ২০২৪
২০২৪-এর জানুয়ারি মাসে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ সবচেয়ে দূরবর্তী গ্যালাক্সি হিসেবে আবিষ্কার করে JADES-GS-z14-0। এটা এতোটাই দূরে যে, বিজ্ঞানীরা আলোকবর্ষের হিসাবে নাকি একে মাপতে পারেন না, যেকারণে রেডশিফট দিয়ে বুঝিয়ে থাকেন। গ্যালাক্সিটির রেডশিফ্ট 14.32। রেডশিফট মানে বস্তুটি আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আর রেডশিফটের মান ২-এর বেশি হলেই তাকে বেশি মাত্রার রেডশিফট বলা হয়, যার অর্থ হলো: এটি অন্নেক অন্নেক দূরে। এই গ্যালাক্সির একপাশ থেকে আরেক পাশ 151,37,16,875,61,29,280 km— যার মধ্যে লক্ষ-লক্ষ-কোটি-কোটি তারা আছে। (তথ্যসূত্র^)
~ আমার মতকে বিজ্ঞানের সমর্থন ~
২০১০-এর ১২ এপ্রিল প্রকাশিত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের আরেকটি নিবন্ধ আমার এই মতবাদকেই সমর্থন করছে:
প্রত্যেক কৃষ্ণবিবর আরো একটা মহাবিশ্ব ধারণ করছে – ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক
তথ্যসূত্র
- AstronomyCafe.net (ওয়েবপেজ লিংক)
- FAQs.org (ওয়েবপেজ লিংক)
- Wikipedia.org (English ওয়েবপেজ লিংক)
- “পবিত্র কোরআনুল করীম” (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তফসীর); মূল অনুবাদ গ্রন্থ: তফসীর মা‘আরেফুল ক্বোরআন, জনাব মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শাফী’ [রহ.]; বঙ্গানুবাদ: মাওলানা মুহিউদ্দীন খান। সউদী বাদশাহ ফাহ্দ কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প (বিনামূল্যে বিতরণযোগ্য)
চিত্রণসূত্র
- http://www.astrosociety.org/pubs/mercury/9802/images/embedding.gif
- http://en.wikipedia.org/wiki/File:Worm3.jpg
>National Geographic Society says the same thing after my prediction:http://news.nationalgeographic.com/news/2010/04/100409-black-holes-alternate-universe-multiverse-einstein-wormholes/?source=link_fb04132010