ছেঁড়া টিকেটের দূর্নীতি, দারিদ্র ও অকৃতজ্ঞ বাঙালি

প্রথমেই আমার আপত্তি ঐ “দূর্নীতি” শব্দটাতে। শব্দটার বহুল ব্যবহার, এই নেতিবাচক শব্দটিকে শ্রেফ আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া ছাড়া আর কিছুই করছে না। এক্ষেত্রে আমরা একটু euphemism বা সুভাষণ কাজে লাগিয়ে শব্দটাকে যদি বদলে লিখি “নীতিভ্রষ্টতা”, তাহলে সেটা জোরালোভাবে মাথায় গিয়ে টোকা দেয় না, অথচ মূল কথা ঠিকই বলে।

তাই এই নিবন্ধের শিরোনাম হওয়া উচিত “ছেঁড়া টিকেটের নীতিভ্রষ্টতা, দারিদ্র ও অকৃতজ্ঞ বাঙালি”

———————–

স্থান: কুর্মিটোলা (এয়ারপোর্ট বাসস্টেশন)

সময়: কোনো একদিন

বিআরটিসি’র আধুনিক বাসে চড়ার জন্য আধুনিক কাউন্টারে দাঁড়িয়ে আছি। ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে ফার্মগেটের টিকেট চাইলাম। টপাটপ সামনের যন্ত্রের বোতামে চাপ পড়লো কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা লোকের, বেরিয়ে এলো ছাপা করা চকচকে টিকিট।

———————–

সময়: অন্য আরেকদিন

১৫ টাকা বাড়িয়ে দিলে হাত পড়লো না যন্ত্রে। বরং ড্রয়ার থেকে বেরিয়ে এলো একটা ছাপা করা টিকিট, যার গায়ে যথাযথভাবেই সেদিনের তারিখ লেখা। সবই ঠিক আছে, কিন্তু টিকিটটা ছেঁড়া। “ছেঁড়া কেন? বদলে দেন।” কথাটা জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে, “ভাই, আরেকজন ফেরত দিয়ে গেছে।” বারবার পিড়াপিড়ি করলেও কাউন্টারের ভিতরে থাকা দুজন একজোট হয়ে ঐ ছেঁড়া টিকিটের সাফাই গাইতে লাগলো, “ভাই, টিকিট তো আবারো ছিড়্‌বোই, সমস্যা কই?” তাদের পিড়াপিড়িতে ছেঁড়া টিকিটখানা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই মনে হলো, আমি ছেঁড়া টিকিট নেবার প্রশ্নই আসে না। টাকা দিয়েছি যথাযথ, টিকিট সে প্রিন্ট করে দিবে, দিতে হবে- এটাই নিয়ম।

মনে মনে নিজেকে বোঝাতে চাইলাম, থাক না, একটা ছেঁড়া টিকিট নিলে কী এমন হবে। তাতে যদি এই গরীব বেচারার কিছুটা লাভ হয়, ক্ষতি কী? কিন্তু, পরক্ষণে মনে হলো, না এভাবেই অন্যায়কে প্রশ্রয় দয়া হয়। আমি এবারে জোর কণ্ঠে তার থেকে নতুন একটা আস্ত টিকিট বাগিয়ে নিলাম।

———————–

ঘটনা হলো, ছেঁড়া টিকিটগুলো এরা যেকোনোভাবেই হোক সংগ্রহ করে। আমি তার হাতে একগাদা টিকেট দেখেছি, একদিনে, ৩ ঘন্টার মধ্যে ২০ জন মানুষ টিকেট করেছে, অথচ বাস পাল্টাতে হওয়ায় টিকেট ফেরত দিতে হয়েছে– এরকম এতো লোক এয়ারপোর্ট থেকে উঠেন না। সুতরাং এরকম একটা ছেঁড়া টিকিট বিক্রি করতে পারা মানে, অতিরিক্ত ১৫ টাকা হাতে পাওয়া; কেননা টিকেটটা ইতোমধ্যেই একবার বিক্রি হয়ে গেছে এবং যন্ত্রের মধ্যে এর মূল্য ১৫ টাকা উঠে গেছে। সেই একই টিকেটই দ্বিতীয়বার/তৃতীয়বার বিক্রি হলে ঐ যন্ত্রের তা জানার কথা না। দিন শেষে টাকার হিসাব নিতে গেলে যন্ত্র বলবে ১৫ টাকার টিকেট বিক্রি করেছো, অথচ দিনে আপনি ৩০/৪৫ টাকার টিকেট বিক্রি করে ফেলেছেন- সেটা কেউ বুঝবে না। মাঝখান থেকে আপনার ঐ ১৫/৩০ টাকা ফাও লাভ। আর এমনিতে যেই টাকা আপনার কমিশন পাওয়ার কথা বা বেতন পাওয়ার কথা, সেটা তো পাচ্ছেনই।

এরকম ঘটনায় যারা একটু উদারনৈতিক কথাবার্তা বলেন, তাদের বক্তব্য হলো: “কতো খাইছে? ১৫টাকা, ২০টাকা… এইটা কোনো টাকা হইলো? লাখ লাখ টাকা খাইয়া বইসা আছে, সেইটার কিছু…” বলে বিশাল একটা বক্তৃতা ঝেড়ে দিবেন। তারপর ঠাণ্ডা গলায় বলবেন, “শোনো, গরীবে খাইছে, খাক না। তোমার-আমার মতো মানুষের কাছ থেকেইতো খাবে। দুচার পয়সা খাইতাছে, খাইতে দেও। লাখ টাকা তো আর খাইতেছে না।”

এই যুক্তির মূল বিষয়বস্তু হলো “দারিদ্র”।

তারা দরিদ্র বলে তাদের জন্য এই অন্যায়টুকু জায়েয হয়ে যাবে? আর তারা দরিদ্র কিসের বিচারে?

যে, একটা mp3, radio, bluetooth-ওয়ালা মোবাইল ফোন নিয়ে ঘুরতে পারে, সে কি দরিদ্র?

যে, ঘরে গেলে ডিভিডি প্লেয়ারে বাংলা ছিঃনেমা দেখতে পারে, সোলেমান খানের ফিলিম দেখতে পারে, সে কি দরিদ্র?

সেই ডিভিডি’র ডিসপ্লে হিসেবে একটা টিভির ব্যবস্থাও তার আছে, সে কি দরিদ্র?

যেখানে কিছু মানুষের, শ্রেফ একটা ওজন-মাপার-মেশিনের আয় দিয়ে দিন চলে, সেখানে টিকিট কাউন্টারের বেতন পেয়েও কি সে দরিদ্র?

আমরা আসলে দারিদ্রের সংজ্ঞাকে আটকে রেখেছি কতগুলো বিষয়ে:

  • যারা ছাপড়া ঘরে থাকে, তারা দরিদ্রশ্রেণীর!
  • যারা লোকাল বাসে চড়ে, তারা দরিদ্রশ্রেণীর!
  • যারা ফুটপাতে কেনাকাটা করে, তারা দরিদ্রশ্রেণীর!
  • যারা ইটালিয়ান হোটেলে ভাত খায়, তারা দরিদ্রশ্রেণীর!

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে [ব্যতিক্রম বাদে] এইশ্রেণীর লোক যে এই কাজগুলো অভ্যাসবশত করে, সেটা কি আপনি জানেন? আমি স্বীকার করছি, ছাপড়া ঘরের ভাড়া, দুই কক্ষের ফ্ল্যাটের সমান কখনোই নয়; কিন্তু যাদের টিভি কেনার, ডিভিডি কেনার, চোলাই মদ-গাঁজা কেনার, মোবাইল ফোনে রিংটোন ডাউনলোড করে ফুটানি করে বেড়ানোর অর্থ আছে, তারা ছাপড়া ঘরে থাকে অভ্যাসবশত। আমি এই জীবনে বেশ কয়েকজন বুয়াকে দেখেছি, যারা প্রতিবছর ১০খানা শাড়ি পায় যাকাত হিসেবে, সেই শাড়ির ১টাও তারা পরে না পরবর্তি বছরে, তারা সেই পুরোনো শাড়ি পরেই কাজ করে, কারণ তারা করুণা পেতে চায়। আর করুণা পাবার জন্য দূর্বল সেজে থাকার মতো মোক্ষম হাতিয়ার আর কী হতে পারে?

এবারে আমি আর কথা না বাড়িয়ে একটু অতীতে চলে যাই। যদি প্রশ্ন করি: মসলিন কেন বিলুপ্ত হয়েছিল? আপনি সবজান্তার ভাব করে জানাবেন: মসলিন বিলুপ্তির কারণ ছিল ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি আর ঐসব শোষক ইংরেজরা; তারা, নীলচাষ না করলে আঙ্গুল কেটে দিতো। …ঠিক। তবে আপনি সম্পূর্ণটুকু জানেন না। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ইংরেজদের শোষণ, মসলিন বিলুপ্তির একটা কারণ হলেও আরেকটা কারণও এর সাথে যু্ক্ত হয়েছিল:

দিনে দিনে যখন মসলিনের চাহিদা ও উৎপাদন বেড়ে গেলো, তখন ইংরেজ শাসকরা সংগ্রহের সুবিধার্থে বিভিন্ন মসলিন উৎপাদনকারী এলাকাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে সেসব এলাকার মসলিন সংগ্রহের দায়িত্ব দিলেন কিছু বাঙালিকে। তাদেরকে বেতন দেয়া হবে এই সংগ্রহ-কাজের জন্য। কিছুদিন এভাবেই চলছিল। একসময় এইসব দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা চিন্তা করলো, ইংরেজ সরকারতো আমাদেরকে বেতন দিবেই, সেটা তো নিশ্চিত। তাহলে মাঝখান থেকে কিছু টু-পাইস কামিয়ে নিলে ক্ষতি কী? ব্যস, যে মসলিন দীর্ঘ দিনের পরিশ্রমে ২টাকায় বিক্রি করতো মসলিন চাষি, সেটা তারা জোরজবরদস্তি করে ১টাকায় সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করলো। তাদের দাপটে মসলিন চাষিরা একঘরে হয়ে পড়লো। মসলিন চাষিরা মহাবিপাকে পড়লো, এতো কষ্টের পর তাদের ন্যুনতম মজুরিও জুটছে না। তারা সিদ্ধান্ত নিলো এই পেশা ছেড়ে দিবে। কিন্তু টু-পাইস কামানো বেতনভোগীরা তখন চিন্তা করলো, এরা পেশা ছেঁড়ে দিলে তাদের চাকরি যাবে, তারা চাহিদামতো মসলিন দিতে পারবে না। তাই তারা, মসলিন চাষীদেরকে মসলিন বানাতে চাপ প্রয়োগ এমনকি শারীরিক নির্যাতন পর্যন্ত করতে শুরু করলো। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় মসলিন চাষিরা তাই বাধ্য হয়ে নিজেরাই নিজেদের বুড়ো আঙ্গুল কেটে ফেললো। ফলে, যখন দস্যুরা এসে চাপ দিতো মসলিন বানাতে, তখন তারা কাটা আঙ্গুল দেখিয়ে বলতে পারতো, তাদের পক্ষে বানানো আর সম্ভব নয়।

দেখা গেলো, পরজাতি ইংরেজরা যে কাজ হিংসা থেকে করে গেলো, আমাদের জাতি ভাইয়েরা সেই কাজই করে দিলো শ্রেফ অর্থের মোহে।

ঘটনাটা বেশি পুরোনো হয়ে গেলে সম্পূর্ণ নতুন একটা ঘটনা বলি: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ফ্রান্সের গীমে জাদুঘরে মূল্যবান প্রত্নসম্পদ পাঠানো নিয়ে আমরা কতোটাই না সোচ্চার হয়েছিলাম। কীজন্য? এই ভয় করছিলাম যে, ঐ ভিনদেশী পান্ডিত্যপূর্ণ মানুষগুলো আমাদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে আমাদের সম্পদগুলো চুরি করে রেখে দিবে। অথচ, সেখান থেকে ঠিকই ফেরত এলো সব প্রত্নসম্পদ। কিন্তু বাংলাদেশের মাটি থেকে গাপ হয়ে গেলো দুটো। শেষ পর্যন্ত অমূল্য সেই প্রত্নসম্পদ দুটো পাওয়া গেলো ডাস্টবিনে গুড়োগুড়ো অবস্থায়।

আবারো, ঘরের শত্রু বিভীষণই, শ্রেফ অর্থের মোহেই, স্বজাতিকে ধ্বংসের পথে বাড়িয়ে তুললো। ফরাসিরা চুরি করলেও প্রত্নসম্পদগুলো বেঁচে থাকতো। হয়তো কোনো এক প্রজন্ম এসে সেগুলো সনাক্ত করে দেশে ফেরত আনতে পারতো, যেমনটা আজ মিশরে করছেন প্রত্নতাত্ত্বিক মন্ত্রী জাহি হাওয়াস। কিন্তু এই অর্থলোভীরা শ্রেফ পাউডার বানিয়ে মুছে দিয়েছে ইতিহাস।

আপাত সম্পর্কহীন এই দুটো ঘটনাই আসলে আমাদের প্রকৃতিটাকে তুলে ধরছে। আমরা শ্রেফ এবং শ্রেফ অর্থের মোহে নিজের নীতিকে বিসর্জন করে চলেছি। বেতন পাওয়াসত্ত্বেয় উপরি কামাতে আমরা দ্বিধা করি না, কারণ আমাদের মোবাইল ফোন কিনতে হবে, টিভি-ফ্রিজ কিনতে হবে… কিন্তু এগুলো ছাড়াও যে এই আখরার বাজারে টিকে থাকা সম্ভব, সেটা আমরা খুঁজি না। “টাকা” “টাকা” “টাকা”র মোহ আমাদেরকে কুরে কুরে খাচ্ছে। দিনে দিনে জন্ম দিচ্ছি আরো কিছু পিশাচ। হয়তো আমার ঘরে সুসন্তান আছে, কিন্তু এভাবে ছেঁড়া টিকিট মুখ বুজে নিয়ে গিয়ে জন্ম দিচ্ছি আরো কয়েকশত পিশাচ। এরা ইংরেজ আমলে মসলিন খেয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক আমলে প্রত্নসম্পদ খেয়েছে, আজকে আপনার ১৫ টাকা খাচ্ছে, কাল নিজের মা-কে বিক্রি করে দিবে।

আল্লাহ’র ওয়াস্তে, দয়া করে, ঠুনকো দারিদ্রের নাম করে এইশ্রেণীর বিলাসী, দারিদ্রের মুখোশধারীদের পক্ষে সাফাই গাইবেন না।

-মঈনুল ইসলাম

শবে মেরাজ ও বর্তমান ইসলাম

মাসজিদুল আকসা (ছবির উৎস: অজানা)
মাসজিদুল আকসা (ছবির উৎস: অজানা)

“শবে মেরাজ” বা “লাইলাতুল মি’রাজ” কথাটার মানে হলো “মে’রাজের রাত”। ইসলাম ধর্মমতে, ঈশ্বরের (আল্লাহ’র) শেষ বাণীবাহক (নবী/রাসূল) জনাব মুহাম্মদ [আল্লাহ তাঁর প্রতি শান্তি বর্ষণ করুন] পৃথিবী থেকে উর্ধ্বাকাশে আল্লাহ’র সাথে যে রাতে দেখা করতে যান, সে রাতকে মে’রাজের রাত বা উর্ধ্বারোহণের রাত বলা হয়।

মে’রাজের এক রাতেই মুহাম্মদ [স.]-কে ফেরেশতা জিবরাঈল [আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর উপর] ঘুরিয়ে নিয়ে আসেন পৃথিবীর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, মিশরের নীল নদ, তূর পর্বত ইত্যাদি। তারপর তাঁকে নিয়ে যান “মসজিদ-উল-আকসা”-তে। সেখানে অলৌকিকভাবে পূর্বতন সব নবী ও রাসূল জীবিতাবস্থায় উপস্থিত থাকেন। তিনি সকলকে নিয়ে দলবদ্ধভাবে (জামাতে) নামায আদায় করেন, যে নামাযে ইমাম (নেতা)-এর দায়িত্ব পালন করেন মুহাম্মদ [স.]। তারপর শুরু হয় প্রকৃত স্বর্গারোহণ। জিব্রাঈল [আ.] তাঁকে উর্ধ্বাকাশে নিয়ে যান আল্লাহর কাছে। সেখানে আল্লাহ’র পক্ষ থেকে মুহাম্মদ [স.]-এর উম্মতকে ৫০ ওয়াক্ত নামায দেয়া হয়। কিন্তু মুহাম্মদ [স.]-এর আর্জিতে তা ৫ ওয়াক্তে নামিয়ে আনা হয়। তাই মুসলমানদেরকে দৈনিক সময় করে পাঁচটি আলাদা আলাদা সময় নামাযে দন্ডায়মান হতে হয়। অর্থাৎ মে’রাজ থেকে মুহাম্মদ [স.] মানুষের জন্য নামায নিয়ে এসেছিলেন এবং তিনি এসেই প্রথম ফযরের নামায, জিব্রাঈলের [আ.] নির্দেশনা অনুসারে, আদায় করেছিলেন।

মুহাম্মাদ [স.]-এর মতো একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে অনন্ত আকাশের উপরে উঠে যাওয়া সংক্রান্ত ব্যাপারটি আমাদের সাধারণ মানুষের বোধগম্য না হলেও একজন মুসলমানকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে যে, ঘটনাটি বাস্তব। মুহাম্মদ [স.] যখন উর্ধ্বারোহণ থেকে ফিরে মক্কার অমুসলিম ক্বোরায়েশদের কাছে বর্ণনা করলেন, তখন স্বভাবতই তারা বিশ্বাস করলো না।

তারা গিয়ে মুহাম্মদ [স.]-এর সহচর (সাহাবি) জনাব আবু বকরের [আল্লাহ’র তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন] কাছে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা, যদি কেউ বলে সে এক রাতের মধ্যে মসজিদুল আকসায় চলে গিয়েছিল, আকাশে উঠে গিয়েছিল, তবে সেটা কি বিশ্বাসযোগ্য?

আবু বকর [রা.] জানতে চাইলেন, আগে জানতে হবে কথাটা কে বলেছে?

তখন ক্বোরায়েশরা বললো, তোমার বন্ধু মুহাম্মদ।

আবু বকর [রা.] একবাক্যে বললেন, যদি মুহাম্মদ [স.] এমনটা বলে থাকেন, তবে তা অবশ্যই হয়েছে।

এভাবে জনাব আবু বকর [রা.] অমুসলিমদের থেকে মুহাম্মদ [স.]-এর অবিশ্বাস্য স্বর্গারোহণের কথা জেনেও পূর্ণ বিশ্বাস করেছিলেন।

বস্তুত মুসলমানদের বিশ্বাস এমনই, যেখানে যুক্তি, বিজ্ঞান সমর্থন করুক, চাই না করুক, তাকে অদৃশ্যে বিশ্বাস করতে হবে, যে অদৃশ্যের খবর মুহাম্মদ [স.] বহন করে এনেছিলেন মানুষের জন্য।

প্রসঙ্গত আরেক সাহাবি জনাব আলী’র [আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন] একটি উক্তি উল্লেখযোগ্য। তাঁকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনার এক হাতে স্বর্গ (জান্নাত), আরেক হাতে নরক (জাহান্নাম) এনে দিলে কি আপনার বিশ্বাস বাড়বে না?

জনাব আলী একবাক্যে বলেছিলেন, আল্লাহর কসম, আমার এক হাতে জান্নাত, আর আরেক হাতে জাহান্নাম এনে দিলেও আমার বিশ্বাস না এক বিন্দু পরিমাণ বাড়বে, আর না এক বিন্দু পরিমাণ কমবে।

অর্থাৎ অদৃশ্য জান্নাত আর জাহান্নামের কথা জনাব আলী [রা.] এমনই দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করেছিলেন যে, এখন তা দেখতে পেলেও তাঁর বিশ্বাস বাড়বেও না, কমবেও না। তাঁর বিশ্বাস এমনই স্থির, অটল।

তাই বিশ্বাসের প্রয়োজনে মুসলমানের উচিত নয় বিজ্ঞানের দ্বারস্ত হওয়া, উচিত নয় যুক্তির দ্বারস্ত হওয়া। তবে জানার জন্য হলে তাতে আপত্তি নেই। কেননা, বিজ্ঞান নিজেই কোনো স্বয়ংসিদ্ধ প্লাটফর্ম নয়। সে সকালে যে বিষয়কে প্রমাণ করবে, বিকেলেই হয়তো সেই বিষয়কে ভুল প্রমাণ করে নতুন আরেকটি বিষয়কে সত্য প্রমাণিত করবে। আর মানুষ যুক্তি আওড়ায় তার সীমাবদ্ধ জ্ঞান থেকে। তাই যুক্তি দিয়ে, বিজ্ঞান দিয়ে ইসলামকে বিশ্বাস করা অনুচিত; বরং ইসলামের বিশ্বাস হলো অদৃশ্যে বিশ্বাস, না দেখে, মুহাম্মদ [স.]-এর থেকে শুনে বিশ্বাস (ঈমান) করতে হবে একজন মুসলমানকে। আর সেই বিশ্বাস হতে হবে পাকাপোক্ত (এক্বীন)।

এখন প্রশ্ন হলো, কবে ঘটেছিল সেই মে’রাজ? ইসলামী ঐতিহাসিক ও বিশেষজ্ঞগণ মোটামুটিভাবে হিজরি রজব মাসের ২৭ তারিখকে নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু ঘটনা হলো কেউই নিশ্চিত নন। এমনকি এই তারিখ বিষয়ে মতভেদ আছে। শুধু তারিখই নয়, মাস বিষয়েও মতভেদ আছে

“মতভেদ আছে” কথাটার উপর এতো জোর দেয়ার কারণ হলো, যদি মে’রাজ উপলক্ষে কোনো বিশেষ আমল পালনের কথা মুহাম্মদ [স.] বলে যেতেন, তাহলে ঐ নির্দিষ্ট রাতে সাহাবীগণ [রা.] তা যুগ যুগ ধরে পালন করতেন। তাহলে আর ঐ তারিখ, এমনকি মাস বিস্মৃত হওয়ার আশংকা থাকতো না।

বরং সত্য কথা হলো এই যে, মুহাম্মদ [স.] মে’রাজ থেকে ফিরে এসে সাহাবিদেরকে না ঐ রাতে কোনো আমল করতে বলেছিলেন, না নিজে পরবর্তি বছর ঐ রাতকে স্মরণ করে কোনো আমল করেছেন। বরং মে’রাজ থেকে ফিরে এসে মুহাম্মদ [স.] ৫ ওয়াক্ত নামাযকে মুসলমানদের জন্য ফরয (আবশ্যিকভাবে পালন করতেই হবে) করেছিলেন এবং তিনি নিজেও তাতে সচেষ্ট হয়েছিলেন।

তাই মে’রাজ উপলক্ষে যদি কোনো আমল করতেই হয়, তবে সেদিন মাগরিবের নামায পড়তে হবে, এশার নামায পড়তে হবে, ফযরের নামায পড়তে হবে, এবং এই ফরজ নামাযের ব্যাপারে যত্নবান হয়ে যেতে হবে।

জনৈক ব্যক্তি জানতে চাইলেন, হুজুর মে’রাজের রাত্রের নামাজটা যদি একটু বলে দিতেন?

মাওলানা: যে রাত নিজেই নির্দিষ্ট নয়, মুহাম্মদ [স.] যে রাতকে আলাদা আমলের রাত হিসেবে বলে যাননি, আর না সাহাবিদেরকে তাগিদ করেছিলেন, তাহলে কোত্থেকে সেই রাতে আলাদা বিশেষ নফল নামায এলো?

ব্যক্তি: হুজুর, সবাই যে পড়ে?

মাওলানা: সবাই কেন পড়ে? তারা কি নিজে থেকে বানিয়ে নিয়েছে?

ব্যক্তি: হুজুর তাহলে মে’রাজের দিনের যে রোযা (সূর্যোদয়ের পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস ও সংযত থাকা) রাখতে হয়…

মাওলানা: যেখানে মে’রাজ দিবসই নির্দিষ্ট নয়, সেখানে মে’রাজের দিনে রোযা রাখবেন কিভাবে? আর রোযা যদি রাখতেই হয়, বছরের যে ৫ দিন রোযা রাখা নিষেধ ঐ পাঁচ দিন বাদে সারা বছর রোযা রাখুন গিয়ে। যে দিনে আলাদা করে রোযা রাখার কথা স্বয়ং মুহাম্মদ [স.] বলে যাননি, সে বিষয়ে আমি-আপনি কে, যে, সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবো?

উল্লেখ্য, কতিপয় হাদিসে এই নামায এবং রোযা বিষয়ে বক্তব্য পাওয়া গেলেও সেগুলো বিশুদ্ধ নয় বলে ওলামাদের সম্মিলিত মত। এখন যারা এই কাজগুলো ঐ দিবস-রজনিকে কেন্দ্র করে করতে চান, তারা নিশ্চয়ই অশুদ্ধ হাদিসের উপর ভর করে ইসলাম রচতে চাইবেন না।

প্রশ্ন হলো, যদি একজন মানুষ নামায পড়েই, রোযা রাখেই, তাহলে খারাপটা কী? এই কাজগুলো তো আর খারাপ না?

কথা হলো, যে বিষয়ে আল্লাহ’র পক্ষ থেকে কোনো বিধান নেই, তাঁর পাঠানো বাণীবাহকের [স.] থেকে কোনো নির্দেশনা নেই, তাহলে সেই বিষয়ে আমি আপনি নিজে থেকে একটা বিধান চালু করে নিলে, তা কি আল্লাহ’র মনোনীত পথ হবে? দ্বিতীয় কথা, যে কাজ করতে বলা হয়নি, সে কাজ যখন আমার ইচ্ছা হলো বলে করছি, তখন সেটা কি আমার নিজের মতের অনুসরণ করা হলো না? সেটা কি আদৌ আল্লাহ’র ইচ্ছার অনুসরণ হলো?

বস্তুত আমরা বর্তমানে ইসলামের এমন সব বিধানগুলোকে মানি, যেগুলো আমার মতের সাথে মিলে যায়। খাবার শেষে মিষ্টি খাওয়া সুন্নত -এটা ঠিকই মানি, কারণ এতে আমার মতের সাথে সংঘাত নেই। ভালো পোষাক পরা সুন্নত -এটাও, হাতে অর্থ থাকলে ঠিকই মানি, কারণ এতেও আমার মতের সাথে অমিল নেই। কিন্তু দাড়ি রাখা ওয়াজিব (অবশ্যই করা উচিত), দৈনিক পাঁচবার নামায পড়া ফরয (অবশ্যই করতেই হবে), স্ত্রীকে পর্দার ভিতর রাখা ফরয -সেগুলো আমরা করি না, কারণ সমাজ তা চায় না, বা আমার মতের সাথে সেগুলো মিলে না। আমরা কি তবে আল্লাহ’র মতকে প্রাধান্য দিয়ে চলছি? আমরা কি নিজের মতের পূজা করছি না?

মোদ্দা কথা, “ইসলামে”, “ইসলামী শরি’আতে” মে’রাজ বলে একটা রাত আছে, কিন্তু সেই রাতে আলাদা করে কোনো উপাসনা বা সেই দিনকে উপজীব্য করে কোনো কাজ ইসলামে নেই। বস্তুত মুসলমানের মে’রাজ হলো তার নামায। কেননা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে “আস্‌সালা-তু মী’রাজুল মু’মিনীন”, অর্থাৎ “নামায হচ্ছে মুসলমানের মে’রাজ”।

আমরা অনেকেই জানি না যে, নামাযে আমরা যে তাশাহ্‌হুদ পড়ি, সেটা হলো মে’রাজের কথোপকথন। আমরা যেভাবে নামাযের শেষ বৈঠকে বসি, ঠিক সেভাবে মুহাম্মদ [স.] আল্লাহর সামনে বসেছিলেন। সেখানে যে কথাবার্তা হচ্ছিলো, আমরা প্রতিবার নামাযে সেই কথাগুলো আওড়াই:

মুহাম্মদ [স.]: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লা-হি, আস্ সোলাওয়া-তু, ওয়াত্ তোয়্যিবা-ত। (সকল প্রশংসা, কায়িক উপাসনা এবং আর্থিক আনুগত্য আল্লাহ’র জন্য)

আল্লাহ [সুবহানাহু ওয়াতা’আলা]: আস্‌সালা-মু ‘আলাইকা, আয়্যুহান নাবিয়্যু, ওয়ারহ্বমাতুল্লো-হী ওয়াবারাকা-ত। (হে নবী, আপনার উপর আল্লাহ’র সকল শান্তি, দয়া এবং বরকত বর্ষিত হোক)

মুহাম্মদ [স.]: আস্‌সালা-মু ‘আলাইনা, ওয়া ‘আলা ‘ঈবা-দিল্লা-হিস্ সোলিহীন। (আমাদের সকলের উপর এবং সকল সত্যিকারের উপাসকের উপর শান্তি বর্ষিত হোক)

উপস্থিত ফেরেশতাগণ [আ.]: (স্বাক্ষীস্বরূপ বলেন) আশ্‌হাদু আল্‌লা– ইলা-হা ইল্লাল্লোহু, ওয়া আশ্‌হাদু আন্না মুহ্বাম্মাদান্ ‘আবদুহ‌ূ ওয়া রাসূলুহ্। (আমরা স্বাক্ষ দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া উপাসনার যোগ্য আর কোনো উপাস্য নেই আর মুহাম্মদ [স.] আল্লাহ’র দাস ও বাণীবাহক)

(সিদরাতুল মুনতাহাতে জনাব জিব্রাঈল [আ.] থেকে যাবার পর, মুহাম্মদ [স.] একাকী আল্লাহ’র আরশে পৌঁছার পরে আল্লাহ তাঁকে সালাম দেন, এবং তিনি সমস্ত উম্মতের পক্ষ থেকে সালাম বিনিময় করেন।)

যদি কোনো মুসলমান নামাযের শেষ বৈঠকে এই কথাগুলো বলার সময় স্মরণ করে নেয় যে, সে মে’রাজের বক্তব্যগুলোই আওড়াচ্ছে, তবে কি সে মে’রাজের সেই জ্যোতি অনুভব করবে না?

প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের মে’রাজ হলো তার পাঁচ ওয়াক্ত নামাযকে সুসংহত করা সারা বছরের জন্য, সারা জীবনের জন্য।

আল্লাহ আমাকে, এবং পাঠকদেরকে নিজেদের নামাযকে প্রতিষ্ঠিত করার যোগ্যতা দিন। আমীন।

-মঈনুল ইসলাম

_____________________
এই লেখনীটি খতীব, মাওলানা জনাব শোয়ায়েব খান-এর জুম’আর খুৎবা থেকে সংক্ষিপ্তাকারে লিখিত। কোনো ভুল উদ্ধৃতির জন্য এই লেখক দায়ী, কেননা পুরো ব্যাপারটাই তিনি স্মৃতি থেকে উদ্ধৃত করেছেন।

জাতীয় জাদুঘর কি গাইয়াদের জায়গা?

ঢাকায় বেড়াতে এলে গ্রামের আত্মীয়-স্বজনেরা যেসব জায়গায় বেড়াবার বায়না করেন, তার মধ্যে অন্যতম চিড়িয়াখানা, জাদুঘর -এগুলো। এটা সর্বজনীন চিত্র। আমার এক বন্ধুতো জাতীয় জাদুঘরে গিয়ে ‘সরষের তেলের গন্ধ’ পায়, কারণ সেখানে নাকি এইমাত্র গ্রাম থেকে আসা বাঙালরাও চলে যায়। ঢাকার মানুষের কাছে অবহেলিত এই সরষের তেলের গন্ধসমৃদ্ধ স্থানটাতে কী পায় গ্রামের মানুষ? নাকি এটা শুধু গেঁয়োদেরই স্থান?

যদি আপনি জাতীয় জাদুঘরে যান, তবে যেদিনই যাবেন, গিয়ে দেখবেন জাদুঘর বন্ধ। এই ঘটনাটা ঘটে জাদুঘরের সময়সূচি জানা না থাকার কারণে। জাদুঘরে গিয়ে ফিরে আসার সময়ও কেউ এই সময়সূচি লিখে আনেন না। সকলের সুবিধার্থে সময়সূচি এখানে বিধৃত হলো:

  • গ্রীষ্মকালীন (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর): শনি-বুধ ১০:৩০-৫:৩০; শুক্র ৩:৩০-৭:৩০
  • শীতকালীন (অক্টোবর-মার্চ): শনি-বুধ ৯:৩০-৪:৩০; শুক্র ৩:৩০-৭:৩০
  • রমযান মাসে: শনি-বুধ ৯:৩০-[সম্ভবত] ১টা; শুক্রবার বন্ধ
  • বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটি (বন্ধ), সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ থাকে।

এবারে আপনি যখন জাতীয় জাদুঘরে যাবেন, তখন শুরুতেই একটা মেটাল ডিটেক্টর দরজা (আর্চওয়ে) দিয়ে আপনাকে পার হতে হবে। এখানে আপনার টিকেট চেক করা হবে না। আপনার মনে হতে পারে, এরা টিকেট চেক করবে না, আপনার ধারণা ভুল। এসময় আপনার হাতে যা থাকবে, তা-ই পরীক্ষা করে দেখা হবে। যে জিনিস ভিতরে নেবার অনুমতি নেই, তা আপনাকে বাম দিকের একটা ডেস্কে জমা দিতে হবে। দামী জিনিস হলেও জমা দিতে হবে, দায়িত্ব নিজের, তারা শ্রেফ জমা রাখবে। তাই জাদুঘর ভ্রমণে কিছু সাথে না থাকাই শ্রেয়। আমার হাতে একগাদা বই ছিল, তাও জমা দিতে হয়েছে। আর অবশ্যই কোনো ক্যামেরা বহন করা যাবে না, তবে মোবাইল সাথে নেয়া যাবে। অফ দ্যা রেকর্ডে বলি: আমার মোবাইলে অবশ্য ক্যামেরা ছিল।

স্ক্রলের মধ্যে লেখা মহাভারত (গোপনে তোলা ছবি)
স্ক্রলের মধ্যে লেখা মহাভারত (গোপনে তোলা ছবি)

নিচতলায় একটা গ্যালারি আছে, আছে টয়লেট, অডিটরিয়াম, অফিস। আপনাকে সরাসরি সামনের বড় সিঁড়িটা দিয়ে দোতলায় উঠে যেতে হবে। এখানে আপনার টিকেট চেক করা হবে। আপনি প্রথমেই বাংলাদেশের বিশাল একখানা মানচিত্রের সামনে দাঁড়াবেন। বাতি জ্বালিয়ে ঐ মানচিত্রে বিভিন্ন জেলা চিনিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। দেয়ালে শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন রকম ভূ-তাত্ত্বিক, ভৌগোলিক আর অর্থনৈতিক মানচিত্র। এই কক্ষ থেকে আপনি ডানে-বামে যেকোনো দিকে যেতে পারেন। এব্যাপারে নিশ্চিত থাকুন, যেদিক দিয়েই যান না কেন, কোনো কক্ষই আপনার মিস যাবে না, কারণ জাদুঘরের নকশা করা হয়েছে অনেকটা চক্রাকার। আপনি সব দেখে আবার প্রথম কক্ষে ফিরবেন। এভাবে দেখে দেখে আপনি আবার এই প্রথম কক্ষে ফিরলে সিঁড়ি বেয়ে চলে যাবেন তৃতীয় তলায়, সেখানেই একইভাবে ঘুরতে থাকবেন। এই তলায় আছে মুক্তিযুদ্ধ, ঐতিহাসিক যুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবি পরিচিতি, অস্ত্রশস্ত্র, চিত্রকলা, শিল্পী…।

জয়নুল আবেদিনের সাঁওতালদের উপর আঁকা ছবিগুলোর একটির সামনে লেখক (গোপনে তোলা ছবি) :) (ছবি: তুহিন)
জয়নুল আবেদিনের সাঁওতালদের উপর আঁকা ছবিগুলোর একটির সামনে লেখক (গোপনে তোলা ছবি) 🙂 (ছবি: তুহিন)

আর কী কী দেখার আছে তার বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না, সংক্ষেপে দুয়েকটার নামোচ্চারণ করছি: হাতির দাঁতের পাটি; বিশাল একটা মৌচাক মৌমাছিসহ স্টাফ করা; দেখবেন একটা আঁকা ছবি, যা দেখে আপনি ঠাহর করতে পারবেন না এটা কি একটা উল্টো করে রাখা ফ্রেম নাকি সত্যিই একটা আঁকা ছবি; দেখবেন বৌদ্ধযুগের বোধিসত্ত্ব মূর্তি…স্পর্শ করতে পারলেই যেন অতীত হাতড়ানো যাবে, তবে স্পর্শ না করলেই ভালো হয়; বিশালাকৃতির শিবলিঙ্গ; কা’বা ঘরের গিলাফের টুকরা; নাসখ-গুবর-নাস্তালিক আরবি ক্যালিগ্রাফি; জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষের বিখ্যাত ছবিগুলোর কয়েকটি; এসএম সুলতান, কামরুল হাসান…সবাইকেই পাবেন; উদ্ভিদবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী না হলেও দেখতে পাবেন [হার্বেরিয়ামের মতো করে] একেকটা গাছের বাকল, কাঠ, বীজ, পাতা, তন্তু, আর ঐ গাছ থেকে তৈরি প্রাকৃতিক রং দিয়ে রং করা কাপড়ের নমুনা; দেখবেন বাংলাদেশের কত নকশার নৌকা যে আছে; আমাদের দুই নেত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলেও সেখানে জাদুঘরের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনকারী জিয়াউর রহমানও যেমন আছেন, তেমনি আছেন জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান; আছেন সোহরাওয়ার্দি, এমএজি ওসমানি, শহীদুল্লাহ কায়সার; দেখতে পাবেন বেগম রোকেয়ার নিজ হাতে লেখা ডায়রি; দেখতে পাবেন কাজী নজরুল ইসলামের এতোটুকুন বিছানা, আশ্চর্য হবেন, এখানে জায়গা হতো তো তাঁর!…আমি বলে শেষ করতে পারবো না…দেখতে পাবেন প্রথম শহীদ মিনারের পিলার, ভাষা শহীদের রক্তমাখা কোট-শার্ট; পাকিস্তানী বাহিনীর টর্চার যন্ত্র গিলোটিন; বদ্ধভূমির খুলি আর খুলি… আর বলবো না।

আমি সবচেয়ে ভালোবাসি তৃতীয় তলা থেকে বেরিয়ে চতুর্থ তলায় চলে যেতে, যেখানে অনেকেই যান না, মনে করেন উপরে আর গ্যালারি নেই। যাবার পথেই তৃতীয় তলা আর চতুর্থ তলার মাঝখানে দেখতে পাবেন ‘জাতীয় জাদুঘর গ্রন্থাগার’। তবে দুঃখের সাথেই বলছি, ভেতরে যাবার অনুমতি পাবেন না, আগে থেকে অনুমতি না থাকলে ভেতরে বসতে পারবেন না। ব্যর্থ মনোরথে চড়ে চতুর্থ তলায় গেলে মন ভালো না হয়েই যায় না…সেখানে স্থান দেয়া হয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যকে। ডানদিকের কক্ষে প্রথমেই পাবেন চীনের বিখ্যাত টেরাকোটা ওয়ারিয়রদের কয়েকজন অস্ত্র হাতে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম চীনাদের বিখ্যাত ঐ ঐতিহ্যমন্ডিত সৈন্যদলের কয়েকজনকে…সামনেই কোরীয় ভাষার বর্ণমালা আর একটা যন্ত্র বসানো, বিভিন্ন বোতামে চাপ দিলে নির্দিষ্ট উচ্চারণে কোরীয় ভাষা আওড়াবে যন্ত্র; আছে চীন, জাপান, কোরিয়া, ফ্রান্স, ইতালি প্রভৃতি দেশের পুতুল, পোষাক সম্বলিত লাইফ সাইজ (বাস্তবাকৃতির) মূর্তি বা পুতুল, দেখতে পাবেন নানারকম মুখোশ, সীল…। অন্য আরেকটা কক্ষে পাবেন প্রচুর আর প্রচুর পুতুল…বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্যমন্ডিত, পোষাকসমৃদ্ধ পুতুল…ভালো না লেগেই যায় না…সবচেয়ে ভালো লাগবে যখন আপনি আরেকটা কক্ষে ঢুকে নিজেকে আবিষ্কার করবেন সরাসরি লিওনার্দো দা ভিঞ্চির Last Supper”-এর সামনে, কিংবা পিকাসো’র Guernica”-র সামনে। এই কক্ষে বিখ্যাত বিখ্যাত সব শিল্পীর আঁকা বিখ্যাত বিখ্যাত সব চিত্রকর্মকে ডিজিটাল প্রিন্টআউট করে ফ্রেম করে রাখা আছে। লুভরে না গিয়ে অনেক বিখ্যাত চিত্রকর্ম অনেকটা আসল ছবির আদলে দেখতে পাবেন।

এতো সুন্দর জাদুঘরে যতটা অনিয়ম আশা করছেন, অনিয়ম তেমন একটা চোখে পড়ে না। তবে চতুর্থ তলার কোরীয় ভাষার উচ্চারণ শোনার যে পোডিয়ামটা আছে, সেটা বন্ধ করে রাখা। সুন্দরবনের জঙ্গল, আমি দুদিন গিয়েও পরিচর্যার অধীন দেখেছি। বিশ্ব চিত্রকলার কক্ষে হল্যান্ডের Jan Vermeer-এর আঁকা Girl Reading a Letter at Open Window” ছবিটা সম্ভবত প্রথমদিকে কাচ দিয়ে বাঁধাই করা ছিল না, সে সুযোগে কোনো এক স্বল্পশিক্ষিত প্রেমিক লিখে রেখেছে “অমুক+তমুক”, “চিঠি পেলাম -তমুক”। তবে প্রশান্তির কথা এটাই যে, এটা মাস্টারপিস না। এতো সুন্দর নকশার জাদুঘরে নামায পড়ার কোনো কক্ষ নেই। অডিটোরিয়ামের পাশে একটা সিঁড়ির নিচে পাতা একখানা কার্পেটের উপর আপনাকে নামায পড়তে হবে। আর অডিটোরিয়ামে যদি সেদিন কোনো অনুষ্ঠান থাকে, তাহলেতো পোয়াবারো। কার্পেটটাও যত্ন করে রাখা হয় না, সেখান দিয়ে অনেকেই জুতো পায়ে মাড়িয়ে যায়। …তারপরও এতোটুকু্ একটা দেশে এতো প্রাণ দেখে আপনি আশান্বিত না হয়েই পারবেন না।

আজই যান, স্বপরিবারে যান। গ্রামের মানুষদেরকে আপনি গোঁয়াড়, বুদ্ধু ভাবলেও তারা যে ফাঁকতালে কী সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে মাথায় করে, ঘুরে না এলে কল্পনাও করতে পারবেন না। মাত্র ৳৫ (পাঁচ টাকার) টিকেটে বাংলাদেশ তো বটেই বিশ্বটাকে দেখে আসার অপূর্ব সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। আর সেদিন যদি গ্যালারিতে কোনো প্রদর্শনী থাকে, তো সেটা বাড়তি পাওনা।

পরামর্শ: সাথে ছোট্ট এক বোতল পানি নিয়ে যাবেন। প্রচুর সময় নিয়ে যাবেন। যা দেখতে যাচ্ছেন, তার সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ জানাশোনা থাকলে দেখে আনন্দ পাবেন। সঙ্গে অভিজ্ঞ কেউ থাকলে অদেখার মাঝেও দেখার অভিজ্ঞতা হতে পারে।

-মঈনুল ইসলাম

তিন মাধ্যমে বাঙালির শিক্ষা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস

গত কিছুদিন আগে আমি দেয়ালে সাঁটানো দেখি স্কুলের একখানা পোস্টার। সেখানে আশ্চর্য হয়ে দেখলাম তাঁরা লিখেছে তাঁরা ৩ মাধ্যমে পড়িয়ে থাকেন। আপনি হয়তো দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে বলবেন, ঠিকই-তো আছে: বাংলা মিডিয়াম, ইংলিশ মিডিয়াম, আরবি মিডিয়াম। কিন্তু আপনি ভুল। সেখানে লেখা:

  • বাংলা মিডিয়াম (বাংলাদেশ সরকারের কারিকুলাম অনুযায়ী)
  • ইংরেজি ভার্ষন (বাংলাদেশ সরকারের কারিকুলাম অনুযায়ী)
  • ইংরেজি মিডিয়াম (যুক্তরাজ্যের কারিকুলাম অনুযায়ী)

বাংলাদেশে একটা যুক্তরাজ্য গড়ে তুলছি, সেটা আমার জানা ছিল না। হয়তো তাতেও কোনো আপত্তির কিছু কেউ দেখছেন না। বলবেন, টাকা থাকলে তুমিও পড়াও ঐ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। তোমার নাই, তাই তোমার ভালোও লাগে না। …একটু অন্যরকম করে বলি: যখন মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা চালানোর কথা বলা হয় সৌদি আরবের নিয়মানুযায়ী, কিংবা পাকিস্তানের নিয়মানুযায়ী, তখন আমরা সোচ্চার হয়ে উঠি, ‌”না, এটা মৌলবাদীদের একটা চক্রান্ত, আমার দেশ সৌদি নিয়মে চলবে কেন? আমার দেশ রাজাকারের নিয়মে চলবে কেন?” কিন্তু আমার স্কুল ইংরেজি ভার্ষনে যে লন্ডনী নিয়মে চলছে, সেটাতে কেউ দোষের কিছু দেখি না। কারণ আরবি হয়ে গেছে মৌলবাদীদের ভাষা, আর ইংরেজি হয়ে গেছে মডার্ন ভাষা।

ভালো, সবাই যেই তালে নাচে সেই তালে নাচো বাঙালি। কী হয় তারপর দেখো। …না, এখনই একটু দেখিয়ে দিই-

গত ১৪ ডিসেম্বর, একুশে টেলিভিশন-এর সংবাদে দেখানো হচ্ছে একটা রিপোর্ট: তথাকথিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের (কিংবা ইংলিশ ভার্ষন স্কুলের) এক শিক্ষার্থীকে সাংবাদিক প্রশ্ন করছেন, ১৪ ডিসেম্বর কী (প্রকারান্তরে, শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস কী)? এক শিক্ষার্থী উত্তর করলেন, “এই ডিন কিছু লোক মাড়া গিয়েছিলেন, আমড়া তাঁদেড়কে ঔনার করবো।”

যাঁরা বেঁচে থাকলে হয়তো বাংলাদেশ অনেক আগেই নোবেল পেত, যাঁরা বেঁচে থাকলে হয়তো বাংলাদেশ আজ মুখ থুবড়ে পড়তো না, তাঁরা হয়ে গেছেন ‘কিছু লোক’?! …যাদের রাজাকার বলে ধিক্কার দাও, তারাতো তবু বাংলায় কথা বলে, তারাতো তবু বুদ্ধিজীবিদের কথা জানে (স্বীকার করে কিনা সেটা পরের বিষয়)। …আর এভাবে যে এ-দেশেই রাজাকার বানানোর প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছি, তা বোঝার বোধ কি ‘আমার’ হয়েছে?

সবাই আমরা এগুলো নিয়ে মাতামাতি করে কিছু করতে পারবো না। তবে আমাদেরকে সোচ্চার হতে হবে। যারাই শিক্ষানীতি নিয়ে কথা বলছেন, যারাই শিক্ষা সহায়তা নিয়ে কথা বলছেন, তাদের কানে এসব আমাদেরকে পৌঁছাতে হবে। সেক্ষেত্রে সচেতনতা দরকার। সবার আগে আমাকে এটা মানা দরকার। শান্ত-সুন্দরভাবে এসব কথা সরকারকে জানানোর পথ করা দরকার। কিভাবে কী করা যায়, এখনি করা যায়; পাঠক আশা করি নিচে মন্তব্য করে তা জানাবেন…

– মঈনুল ইসলাম

কবিতা: সংস্কৃতির পূজারি!

ঈশ্বর ভবে দিয়াছেন যাহা
সবি হলো প্রকৃতি।
মানুষ আসি যা নিয়া নিলো গড়ি
ততটুকু সংস্কৃতি।

নৃত্য, বাদ্য, ধর্ম, পোষাকই
সংস্কৃতি নয় তবে,
সংস্কৃতি স-ব, মানুষ আসিয়া
রচিয়াছে যা এ ভবে।

বাংলার নর আর নারী মিলি তবে
গড়িয়াছে যা চিরায়ত,
সেই সবি হলো বাংলায় আজ
কৃষ্টিতে পরিণত।

তুমি কি আছো হে বাঙালির ছানা
বঙ্গ-কৃষ্টি আচরি,
যেখানেই থাকো, যেভাবেই থাকো
থাকিবে কি তাহা ধরি?

হুজুগে বাঙালি হাত তুলি বলে,
না বলিলে কে-রে তবে?
এমন পশু নরাধম বুঝি
আছে এ বঙ্গ-ভবে?

ধর্‌ তারে, ধরি উপাড়ি ফেল্‌
ছিলে ফেল্‌ তার ছাল,
বঙ্গদেশের কৃষ্টি মানে না
কোথাকার বঙ্গাল?

কেহ কহে তারে মৌলবাদী
কেহ কেহ কহে রাজাকার;
কেহ তারে কহে দস্যু দুশমন
সবেতেই দিলে ধিক্কার।

বলিতে দিলে না তারে কেউ তবে
শুনিলে না তার কথা।
উকিল আসিয়া জানিতে চাহিলে,
‌বল্‌ মাথামোটা, কী তা?

আমি যা বলিব, তা শুনিবার
ফুরসত কি হবে কারো?
যা বলিব, তা আগে বুঝিবার
আগ্রহ তুলি ধরো।

শোনো তবে, কেন চলি না এ আমি
সংস্কৃতির আবেশে…
এই কথা বহু গূঢ় কথা, শোনো
পূর্ণ মনোনিবেশে।

আমি যদি জিজ্ঞাসি কাউরে
কেন যৌতুক আজি ত্যাজ্য?
বলিবে সে তবে, সেতো নয় কোনো
সাদাচার, চিরপূজ্য।

অথচ জানে কি সে, এই যৌতুক
ছিলো এদেশীয় সংস্কৃতি।
কেন তবে তুমি কৃষ্টি-সাধু হে,
ধরো টানি তার ইতি?

আসলে সবি হলো কিছু
চোখ ধাঁধানো, মন ভুলানো খেলা।
আর সে খেলা পরে, নাচিয়া এ ভবে
বাঙালি কাটায় বেলা।

যেই যুগে ছিল যৌতুক এই
বঙ্গ-মুলুকে কৃষ্টি,
সেই যুগে ছিল গোলা-ভরা ধান,
পুকুরে মাছের বৃষ্টি।

আজি যবে সেই সম্পদ ধরি
পড়িয়া গিয়াছে টান,
যৌতুকনামী সংস্কৃতি দাও
সময়ের কোলে বলিদান।

তবে আমিই কেন কৃষ্টি-দস্যু,
আমিই কেন রাজাকার?
রাজাকার তো আজি নেতা-নেত্রীরা,
রাজাকার সরকার।

যেজনে বলিবে যৌতুক শাপ,
ফণিনী কাল নাগিন,
সেই-তো তবে রাজাকার এ ভবে,
সেই-তো কৃষ্টিহীন।

দেখো, আজি যা সংস্কৃতি বলি
তুলি রা’খো মাথা ‘পরে,
কাল আসিলে তা-ই তুমি ফেলো
পদতলে, ঘৃণা ভরে।

মানুষে গড়া এ সংস্কৃতির কি
আছে তবে কোনো ভিত্তি?
ভিত্তিহীন সে সংস্কৃতি তাই
মানিনাকো এক রত্তি।

মানুষের কৃষ্টি মানুষে গড়িবে,
মানুষেই যাবে তুড়িয়া;
অবুঝও দুদিনের খেলাঘর তলে
থাকেনা চিরায়ু বসিয়া।

বরং ঈশ্বর যা দিয়াছেন ভবে,
প্রকৃতি যারে বলো।
সেই ঈশ্বরেরই দেয়া পথ-মতে
প্রকৃতি-পথে চলো।

উকিল উঠিয়া বাহিরে আসিলে
কান-ঝালাপালা চিত্কার:
মৃত্যুদন্ডই দিতে হবে তারি,
বাঁচানো যাবে না রাজাকার।

হুজুগে বাঙালি বুঝিলে না তারে
বুঝিলে না সে কী বলিলো।
বাঙালি তাদের ক্ষীণদৃষ্টির
আড়ালেই সুখ খুঁজিলো।

কৃষ্টির লাগি কথিত দস্যু
ফাঁসিকাষ্টেতে দাঁড়ায়ে;
জলে ভেজা চোখে বাঙালিকে দেখে
আফসোসে মন ভরায়ে।

আফসোসও তার কপালে জোটেনি,
বিদায় চিরবিদায়!
বাঙালি আজও, এখন-ও সেই
সংস্কৃতিরই ডিঙা বায়।

 


আমার ফেসবুকের সকল বন্ধুকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ, তাঁদের কাছে যখন মতামত চাওয়া হয়েছিল, তখন তাতে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দেবার কারণে। তাঁদের মতামতকে সম্মান করেই আমি আমার মতামত দিয়ে কবিতাটা লিখলাম। ছন্দের তালে গা না ভাসিয়ে বক্তব্য বোঝার চেষ্টা করলে আশা করি বুঝতে কষ্ট হবে না আমার কথার মর্মকথা।

– মঈনুল ইসলাম

১৯ নভেম্বর, ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ; বিকাল ৫টা ০২মিনিট (ঢাকা স্থানীয় সময়)