কবিতা: সংস্কৃতির পূজারি!

ঈশ্বর ভবে দিয়াছেন যাহা
সবি হলো প্রকৃতি।
মানুষ আসি যা নিয়া নিলো গড়ি
ততটুকু সংস্কৃতি।

নৃত্য, বাদ্য, ধর্ম, পোষাকই
সংস্কৃতি নয় তবে,
সংস্কৃতি স-ব, মানুষ আসিয়া
রচিয়াছে যা এ ভবে।

বাংলার নর আর নারী মিলি তবে
গড়িয়াছে যা চিরায়ত,
সেই সবি হলো বাংলায় আজ
কৃষ্টিতে পরিণত।

তুমি কি আছো হে বাঙালির ছানা
বঙ্গ-কৃষ্টি আচরি,
যেখানেই থাকো, যেভাবেই থাকো
থাকিবে কি তাহা ধরি?

হুজুগে বাঙালি হাত তুলি বলে,
না বলিলে কে-রে তবে?
এমন পশু নরাধম বুঝি
আছে এ বঙ্গ-ভবে?

ধর্‌ তারে, ধরি উপাড়ি ফেল্‌
ছিলে ফেল্‌ তার ছাল,
বঙ্গদেশের কৃষ্টি মানে না
কোথাকার বঙ্গাল?

কেহ কহে তারে মৌলবাদী
কেহ কেহ কহে রাজাকার;
কেহ তারে কহে দস্যু দুশমন
সবেতেই দিলে ধিক্কার।

বলিতে দিলে না তারে কেউ তবে
শুনিলে না তার কথা।
উকিল আসিয়া জানিতে চাহিলে,
‌বল্‌ মাথামোটা, কী তা?

আমি যা বলিব, তা শুনিবার
ফুরসত কি হবে কারো?
যা বলিব, তা আগে বুঝিবার
আগ্রহ তুলি ধরো।

শোনো তবে, কেন চলি না এ আমি
সংস্কৃতির আবেশে…
এই কথা বহু গূঢ় কথা, শোনো
পূর্ণ মনোনিবেশে।

আমি যদি জিজ্ঞাসি কাউরে
কেন যৌতুক আজি ত্যাজ্য?
বলিবে সে তবে, সেতো নয় কোনো
সাদাচার, চিরপূজ্য।

অথচ জানে কি সে, এই যৌতুক
ছিলো এদেশীয় সংস্কৃতি।
কেন তবে তুমি কৃষ্টি-সাধু হে,
ধরো টানি তার ইতি?

আসলে সবি হলো কিছু
চোখ ধাঁধানো, মন ভুলানো খেলা।
আর সে খেলা পরে, নাচিয়া এ ভবে
বাঙালি কাটায় বেলা।

যেই যুগে ছিল যৌতুক এই
বঙ্গ-মুলুকে কৃষ্টি,
সেই যুগে ছিল গোলা-ভরা ধান,
পুকুরে মাছের বৃষ্টি।

আজি যবে সেই সম্পদ ধরি
পড়িয়া গিয়াছে টান,
যৌতুকনামী সংস্কৃতি দাও
সময়ের কোলে বলিদান।

তবে আমিই কেন কৃষ্টি-দস্যু,
আমিই কেন রাজাকার?
রাজাকার তো আজি নেতা-নেত্রীরা,
রাজাকার সরকার।

যেজনে বলিবে যৌতুক শাপ,
ফণিনী কাল নাগিন,
সেই-তো তবে রাজাকার এ ভবে,
সেই-তো কৃষ্টিহীন।

দেখো, আজি যা সংস্কৃতি বলি
তুলি রা’খো মাথা ‘পরে,
কাল আসিলে তা-ই তুমি ফেলো
পদতলে, ঘৃণা ভরে।

মানুষে গড়া এ সংস্কৃতির কি
আছে তবে কোনো ভিত্তি?
ভিত্তিহীন সে সংস্কৃতি তাই
মানিনাকো এক রত্তি।

মানুষের কৃষ্টি মানুষে গড়িবে,
মানুষেই যাবে তুড়িয়া;
অবুঝও দুদিনের খেলাঘর তলে
থাকেনা চিরায়ু বসিয়া।

বরং ঈশ্বর যা দিয়াছেন ভবে,
প্রকৃতি যারে বলো।
সেই ঈশ্বরেরই দেয়া পথ-মতে
প্রকৃতি-পথে চলো।

উকিল উঠিয়া বাহিরে আসিলে
কান-ঝালাপালা চিত্কার:
মৃত্যুদন্ডই দিতে হবে তারি,
বাঁচানো যাবে না রাজাকার।

হুজুগে বাঙালি বুঝিলে না তারে
বুঝিলে না সে কী বলিলো।
বাঙালি তাদের ক্ষীণদৃষ্টির
আড়ালেই সুখ খুঁজিলো।

কৃষ্টির লাগি কথিত দস্যু
ফাঁসিকাষ্টেতে দাঁড়ায়ে;
জলে ভেজা চোখে বাঙালিকে দেখে
আফসোসে মন ভরায়ে।

আফসোসও তার কপালে জোটেনি,
বিদায় চিরবিদায়!
বাঙালি আজও, এখন-ও সেই
সংস্কৃতিরই ডিঙা বায়।

 


আমার ফেসবুকের সকল বন্ধুকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ, তাঁদের কাছে যখন মতামত চাওয়া হয়েছিল, তখন তাতে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দেবার কারণে। তাঁদের মতামতকে সম্মান করেই আমি আমার মতামত দিয়ে কবিতাটা লিখলাম। ছন্দের তালে গা না ভাসিয়ে বক্তব্য বোঝার চেষ্টা করলে আশা করি বুঝতে কষ্ট হবে না আমার কথার মর্মকথা।

– মঈনুল ইসলাম

১৯ নভেম্বর, ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ; বিকাল ৫টা ০২মিনিট (ঢাকা স্থানীয় সময়)

১ thoughts on “কবিতা: সংস্কৃতির পূজারি!

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল প্রকাশ করা হবে না

আপনি এই HTML ট্যাগ এবং মার্কআপগুলো ব্যবহার করতে পারেন: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

*