একজন অভিযাত্রীর ‘বিশ্বাস’ যেন তার আবিষ্কারকে কলুষিত না করে।
– মঈনুল ইসলাম
…এমনটাই বলতে চাই এবং বিশ্বাস করি আমি। কিন্তু পর্তুগিজ পরিব্রাজক ভাস্কো দা গামা (Vasco da Gama), যিনি সেই সুদূর পর্তুগাল থেকে আফ্রিকা, আরব সাগর পাড়ি দিয়ে ভারত আবিষ্কার করে বদলে দিয়েছিলেন পর্তুগালের ভাগ্য, বদলে দিয়েছিলেন ভারত, বাংলাদেশসহ ভারত উপসাগরের অনেক দেশের ভাগ্য, সেই অভিযাত্রী কিন্তু নিজের বিশ্বাস দিয়ে নষ্ট করে ফেলেছিলেন [নতুন] আবিষ্কারের আনন্দ।
ভাস্কো দা গামা একজন নেতা (ক্যাপিতো) হলেও লেখালেখির ধারেকাছে বোধহয় ছিলেন না। অন্তত ভারত আবিষ্কারের প্রথম অভিযাত্রার এতো উদ্যমী আর দুঃসাহসিক অভিযানেরও তার লেখা কোনো ইতিহাসই নেই। ভারত আবিষ্কারের সেই অভিযানের একমাত্র জীবিত লেখনীটি পাওয়া যায় তার ৪টি জাহাজের একটির একজন নাবিক জোয়াওঁ জে সা’র (João de Sá) পক্ষ থেকে, যিনি São Rafael নামক একটি ক্যারাক-এর (এক প্রকার পর্তুগিজ জাহাজ) সাধারণ নাবিক ছিলেন। (কেউ আবার বলেন লেখাটি আসলে অন্য আরেকজন নাবিক আলভারো ভেল্যিয়ো’র (Álvaro Velho))
যাহোক, ভাস্কো দা গামা’র সেই ঐতিহাসিক অভিযাত্রার যে বর্ণনা তার সঙ্গীর থেকে পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায়, পর্তুগিজরা ভারতের কালিকূট (বর্তমান কেরালার Kozhikode) বন্দরে যেদিন পৌঁছেছিলেন (২০ মে ১৪৯৮), সেদিন তারা নিজেদের বিশ্বাসের দৃঢ়তার কারণে নতুন আবিষ্কার করা আরেকটি বিশ্বাসকে ভুল বুঝেছিলেন।
কী দেখেছিলেন আর কী বুঝেছিলেন তারা?
কী দেখেছিলেন তারা, আর কী বুঝেছিলেন, তার বর্ণনা কয়েকটি ছবিতে নিচে দেয়ার চেষ্টা করলাম:
সোজা বাংলায় ভাস্কো দা গামা আর তার দলের ১৩ জন সদস্য ঐ হিন্দু মন্দিরকে খ্রিষ্টানদের গির্জা ভেবে ভুল করেছিলেন।
কেন এই ভুল বুঝাবুঝি?
চোখের সামনে সত্যকে রেখে কেন ভুল বুঝে মানুষ? ভাস্কো দা গামা আর তার দলের ১৩ জন মানুষইবা কেন একটি জ্বলজ্বলে সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে বুঝেছিলেন ভুল?
- প্রথমত, পর্তুগিজরা তখন ক্রুসেডের (মুসলমানবিদ্বেষী খ্রিষ্টান ধর্মযুদ্ধ) আদর্শে পরম খ্রিষ্টান, আর পৃথিবীময় শুধু খ্রিষ্টানদেরকেই খুঁজছিলেন।
- দ্বিতীয়ত, নিজের বিশ্বাসে পরম অন্ধ হলে চোখের সামনে সত্য রাখলেও মানুষ সত্যকে অস্বীকার করে। ভারতীয় এই সর্বেশ্বরবাদী ধর্মকে (হিন্দুধর্ম) ইউরোপীয় একেশ্বরবাধী নজরে দেখলে তো ভুল বোঝাই স্বাভাবিক।
মূলত এরই প্রতিফলন হয়েছিলো এখানেও। একজন তো মজা করে বলেই বসেছেন: “পর্তুগিজরা ভারতে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছে, ‘তুমরা মুসলমান?’ ভারতবাসী জবাবে বলেছে, ‘না’। পর্তুগিজরা বুঝে নিয়েছে, ‘ও, তাইলে তুমরা খ্রিষ্টান’।” 😆
কোনো আবিষ্কারকে আবিষ্কারকের সত্যান্বেষী চোখে না দেখার খেসারত হলো: ভুল বোঝা। ভুল দিয়ে সত্যকে ঢাকার চেষ্টা, নতুন আবিষ্কারকে পুরোন জানা দিয়ে প্রতিস্থাপন করার মিথ্যা প্রয়াস:
– মঈনুল ইসলাম
তথ্য-উৎস:
The Journal of the First Voyage of Vasco da Gama (1497-1499) – Project Gutenberg (Page 52)
https://www.gutenberg.org/files/46440/46440-h/46440-h.htm#Page_52
ভিডিওর মাধ্যমে এই বর্ণনার উপস্থাপনা:
https://www.youtube.com/watch?v=75rnC3ZrmhY
প্রচ্ছদের ছবি: ফ্র্যাংক প্লগম্যান-এর ব্লগ