নোনা পানিতে চিংড়ি চাষে লাখ টাকা – এবার টাকা চিবিয়ে খাও

একবার যে বাঁধ দেয়া হয়েছিলো নোনা পানি ঠেকানোর জন্য, পরে সেই বাঁধই কেটে নোনা পানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরেও চিংড়ি চাষ ছিলো, তবে তা হতো বাঁধের বাইরে। কিন্তু কাচা টাকার গন্ধে ১৯৮২-৮৩ থেকে শুরু হয় বাঁধের ভিতরের অংশেও। প্রথমদিকে জমি দখল আর নিপীড়ন ছিলো ভয়াবহ।

চিংড় চাষ হচ্ছে, কাচা টাকায় মো মো করছে – সবই ভালো ছিলো। কিন্তু কেউ কি চিন্তা করেছিলো প্রকৃতির বিরুদ্ধে গেলে প্রকৃতিও তার বদলা নেয়? নোনো পানি আটকে চিংড়ি চাষ করায় সেই নোনা পানি মাটির গভীরে যাবার সুযোগ পেয়েছে, আর সেজন্য এই এলাকার মাটিও হয়ে পড়েছে লবণাক্ত। এখন তাই অতি লবণাক্ততার জন্য সেখানে আর কৃষিকাজ হয় না।

যে লোকটা চিংড়ি চাষ করতে চায়নি, কৃষকাজ করতে চেয়েছিলো (সেটা হতে পারে সবজি ক্ষেত, একটা শিমের লতা কিংবা একটা পেয়ারা গাছ…), তার পাশের জমিতে চিংড়ি চাষ হওয়ায় তার জমিও নোনতা হয়ে পড়ে, পড়ছে। নোনা বাড়তে বাড়তে পরের বছর ঐ জমিতেও আর চিংড়ি চাষ করা ছাড়া গত্যান্তর থাকে না।

লবণাক্ততা বাড়ায় ধানের উৎপাদন যেমন কমেছে, তেমনি খড়-কুটো, ঘাস ইত্যাদি উৎপাদনও কমে গিয়ে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলের খাবারেরও তীব্র আকাল দেখা দিয়েছে। মানুষই মরে যাচ্ছে, আর গরু-ছাগল!

কৃষি উপযোগী জমি নেই…
মানে গাছ-খড়কুটো নেই…
মানে ঘর ছাওয়ার ছনও নেই…
মানে পোল্ট্রি কিংবা গরুর খামার নেই…
মানে গোবর, বিষ্টাও নেই…
মানে দুগ্ধজাত খাবার কিংবা মিষ্টি, দইও নেই…
মানে আমিষ নেই…
মানে এসব পেশার মানুষও নেই…

এই লবণাক্ত জমি থেকে লবণাক্ততা দূর কি করা যাবে না?

যাবে, তবে সেজন্য কম হলেও সময় লাগবে ১ বছর; তাও শর্ত আছে। ঐ এক বছর কেউ বাঁধ কেটে লবণ পানি এনে চিংড়ি চাষ করবে না, আর ঐ এক বছর প্রচুর প্রচুর প্রচুর বৃষ্টিপাত হতে হবে, যাতে বৃষ্টির মিঠা পানি জমে থাকতে থাকতে মাটির নিচে গিয়ে নোনতা মাটিকে পরিশুদ্ধ করতে পারে।

কাচা টাকার গন্ধ পাওয়া মানুষ কি পারবে ১ বছর না খেয়ে থাকতে?

প্রাকৃতিক জমিতে নোনা চিংড়ি চাষ একটা ‘ভয়াবহ’ দুষ্ট চক্র! শুরু করেছো তো মরেছো!!
নিজেই শুধু না, আশপাশের সবাইকেও মেরেছো।

পড়ছিলাম: “সুন্দরবন উপকূলের কথকতা” – গৌরাঙ্গ নন্দী
ছবি: Meraz Mostafa, ICCCAD

মন্তব্য করুন