২০০৯ সালে আর-সব বন্ধু-বান্ধবদের মতোই আমার মাথায় ইংল্যান্ডে যাবার ভূত সওয়ার হলে IELTS করার চিন্তা করছিলাম (মনে রাখবেন, শব্দটা আই-ই-এল-টি-এস; আয়েল্ট্স নয়)। তার কিছুদিন আগেই আমার এক প্রতিবেশী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষক জনাব মোস্তাফিজুর রহমান উচ্চতর ডিগ্রি নেবার জন্য বিদেশ যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি, আমার আগেই IELTS পরীক্ষা দিয়েছিলেন, এবং দুবার দিয়েছিলেন, কারণ প্রথমবার তিনি বুঝতেই পারেননি পুরো পদ্ধতিটা। যাহোক, তাঁর কাছে ধরণা দিলাম কী করা যায়। তিনি আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন।
আমার আর IELTS পরীক্ষা দেয়া হয়নি, কারণ ইংল্যান্ডে তখন খুব বাজে অবস্থা, আয়-রোজগারের পথ প্রায় বন্ধ ছিল, বাবার পয়সায় শিক্ষা-বিলাস করতে যাওয়াটা ঠিক মানানসই ছিল না আমার জন্য। আর সবচেয়ে বড় কথা, আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্য করেন: এর কিছুদিন পরেই ব্রিটিশ অ্যাম্বেসী ঘোষণা করলো তারা ভিসা দেয়া বন্ধ রাখবে। আমি তখন নিশ্চিত, প্রক্রিয়াধীন থাকতাম এবং খাঁটি একটা ধরা খেতাম। …যাহোক, আমার সংগৃহীত সেসব পরামর্শগুলো আপনাদের উপকারার্থে দিলাম, আপনাদের কাজে লাগলে আমার ভালো লাগবে। আর অবশ্যই মোস্তাফিজ স্যারের প্রতিও কৃতজ্ঞতা। (তিনি তাঁর দুটো বই আমাকে দিয়ে গিয়েছিলেন, যার সদ্ব্যবহার করতে পারিনি আজও):
পরিচিতি
তিনি আমাকে বলেছিলেন, IELTS-এর ৪টা পার্ট বা অংশ:
- Listening,
- Reading,
- Writing, আর
- Speaking।
Listening
আপনাকে একটা প্যাসেজ (passage) ইংরেজিতে বাজিয়ে শোনানো হবে, আর সামনে থাকবে প্রশ্নপত্র, কী শুনলেন তার ভিত্তিতে আপনাকে উত্তর করতে হবে, কী বোঝানো হয়েছে ঐ অডিও টেপে।
Reading
সবগুলো পার্টের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন পার্ট (আমার আরো দুই বন্ধুও এব্যাপারে একমত)। Reading-এ পরীক্ষা করা হয় একটা প্যাসেজ পড়ে বোঝার ক্ষমতা। আপনাকে বিশাল বিশাল তিন-চারটা প্যারাগ্রাফ দেয়া হবে, তার থেকে আপনাকে অত্যন্ত সাধারণ সাধারণ উত্তর দিতে হবে। কিন্তু ঐ সাধারণ সাধারণ উত্তরগুলো আপনি সহজে পারবেন না, যদি না আপনি প্যাসেজটা ঠিকমতো বুঝতে পারেন। প্যাসেজটা আপনি ঠিকমতো বুঝতে হলে আপনাকে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হবে, আর তাহলে বাকি প্যাসেজে সময় কমে আসবে। এভাবেই এই সহজ পরীক্ষাটা সব পরীক্ষার্থীর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ এই পরীক্ষায় আপনি যদি কিছু কৌশল রপ্ত না করে চলে যান, তাহলে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পারবেন না, সে আপনি যতই কনফিডেন্ট হোন না কেন? (অবশ্য ইংরেজি মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরা ব্যতিক্রম হতে পারেন)
Writing
বেশ সহজ। কারণ যারা এসএসসি-এইচএসসি পাশ করে গেছেন, তারা সহজে বিভিন্ন বিষয়ের উপরে প্যারাগ্রাফ লিখতে পারবেন বানিয়ে বানিয়ে। এখানে যাচাই করা হয় আপনি কতটুকু কল্পনাশক্তি খাটাতে পারেন এবং একটা বিষয়ের উপরে লিখতে পারেন।
Speaking
এখানে কোনো লেখালেখি নেই। আপনাকে নির্দিষ্ট দিনে পরীক্ষাস্থলে (সাধারণত ব্রিটিশ কাউন্সিলে) যেতে হবে। সেখানে দু-তিনজন পরীক্ষকের সামনে আপনাকে বসতে হবে। তাঁরা আপনাকে বিভিন্নভাবে ইংরেজিতে প্রশ্ন করবেন, আপনি তাঁর উত্তর দিবেন। প্রাথমিকভাবে Hello, How are you টাইপের প্রশ্ন। আর তাত্ত্বিক প্রশ্নের ক্ষেত্রে আপনাকে দেয়া হবে Cue-card। কিউ-কার্ডে লেখা থাকবে কোন বিষয়ে আপনাকে বলতে হবে। তারপর মিনিট তিনেক বা মিনিট পাঁচেকের জন্য আপনাকে ঐ বিষয় সম্পর্কে বলতে হবে সম্পূর্ণ ইংরেজিতে। (আমার এক বন্ধুকে বলা হয়েছিল Suppose, you have visited a Pharmaceutical company. Now would you please explain what did you see there?-মার্কা একটা প্রশ্ন)
এখানে অফ-দ্যা-রেকর্ডে যে কথাটা খুব প্রচলিত, সেটা হলো: সিলেট শহরের যে ব্রিটিশ কাউন্সিল, সেখানে গিয়ে Speaking টেস্ট দিলে নাকি ভালো নাম্বার পাওয়া যায়। সত্যটা মুস্তাফিজ স্যারও জানেন না, তিনিও পরস্পর থেকে শুনেছেন। তবে ধারণা করা যায়, ঢাকা শহরের শিক্ষার্থীদের থেকে সিলেটের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি বলতে পারার দক্ষতা তুলনামূলক কম। তাই তাদেরকে একটা স্বাভাবিক ছাড় দেয়া হতে পারে। সত্যটা কেউ জানলে জানাতে পারেন।
এবারে প্রস্তুতির পরামর্শ
মুস্তাফিজ স্যার আমাকে কয়েকটি বইয়ের কথা বলেছিলেন, আমি সেগুলো তুলে ধরছি।
Listening
লিসেনিং-এর জন্য Cambridge-এর সিরিজ আছে। খুব ভালো। তবে প্রথম দুটো (মানে 1 এবং 2 খুব সাধারণ মানের) । ভালো কিছু শেখা যাবে 3, 4, 5, 6 -এই বইগুলো থেকে। এই বইগুলো CD-সহ কিনতে হবে। অথবা কারো থেকে পেনড্রাইভে সফ্ট কপিও সংগ্রহ করে নিতে পারেন।
Reading
রিডিং-এর জন্য Saifur’s-এর বইটা সহজ এবং বোধগম্য; আর মূল কথায় ভরপুর। বেশ কার্যকরী।
Writing
রাইটিং-এর জন্য ভালো বই হচ্ছে Moniruzzaman’s IELTS Writing বইটি। উল্লেখযোগ্য সহায়তা পাওয়া যাবে।
Speaking
স্পীকিং-এর জন্য Khan’s Cue-Card 1 এবং 2 বেশ কার্যকরী।
এই সহজ সাজেশনটুকুই আশা করি উপকার দিবে যে-কাউকে। তো, যদি IELTS দিতেই হয়, তাহলে আর দেরি কেন? ঝটপট বইগুলো সংগ্রহ করে নেমে পড়ুন যুদ্ধে। আর কিছু হোক বা না হোক, ইংরেজিটা খানিকটা ঝালাই হয়ে যাবে, এবং কোনো কিছু পড়ার সময় চোখ-কান খুলে যাবে অনেকটা।
একটা কথা মনে রাখবেন: ইংরেজি শিখতে বসেছি, ইংরেজি শিখবো– এধরণের মানসিকতা রাখবেন না। ইংরেজি দেখছি, ইংরেজি শুনছি, আচ্ছা, দেখা হলো, শোনা হলো– টাইপের মানসিকতা রাখুন। একসময় দেখবেন আপনার ইংরেজি শেখা হয়ে গেছে -এটা আমার কথা।
১ thoughts on “IELTS-এর প্রস্তুতি”