মুভি রিভিউ: দেবী

হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলী’র দেবী উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত “দেবী” চলচ্চিত্রটা দেখলাম। দেখার আগেই মানুষের মিশ্র প্রতিক্রীয়া পেয়েছিলাম: একজন বলেছে, “শেষটা বুঝি নাই”, আরেকজন বললো, “ভালো মুভি”।

আমি আমার স্বভাবসুলভ নজরে দেখা শুরু করলাম, এবং শুরুতেই একটা অসঙ্গতি চোখে পড়লো:

পিছনে এসে দেখলাম, ঠিকই দেখেছি: জল্লাদের কল্লা ধুপ করে পড়ে গেলো, তারপর মুণ্ডুহীন দেহটা স্লো-মোশনে মাটিতে আছড়ে পড়ছে, পড়ছে, পড়ছে… শেষ মুহূর্তে দেখি ওপাশের হাতের কব্জিটা মুন্ডুহীন ব্যাকগ্রাউন্ডের আড়ালে হালকা হারিয়ে গেলো… যেহেতু ঐ দৃশ্যে মূল আকর্ষণ ঐ মুণ্ডুহীন ধড়, সেখানে ভিডিও এডিটর এই ছোট্ট খুঁত কিভাবে রাখলেন, বুঝে আসে নাই। …অবশ্য একই দৃশ্য শেষাংশে আরেকবার দেখানোর সময় ঠিকই সে অংশ আসার আগে সীন কেটেছেন সম্পাদক।

চরিত্রের মধ্যে আনিসের (অনিমেষ আইচ) অভিনয় আমার ভালো লাগেনি। প্রথমবার মিসির আলীর অদ্ভুত ঘরে বসে একটা মানুষের উৎসুক চোখ থাকা উচিত ছিল আশেপাশে, অনিমেষ ছিলেন নির্বিকার (বলতে পারেন, স্ত্রীর চিন্তায়… আমি অস্বীকার করবো)। ঘরে অশরীরির অস্তিত্ব টের পেয়ে ঘেঁটে দেখার জন্য অনিমেষ ডান হাত পকেটে ঢুকিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন – এরচেয়ে বিদঘুটে দৃশ্য আর হতে পারে না।

জয়া’র অভিনয় টীপিক্যাল জয়া – তবে মন্দ হয়নি। শবনম ফারিয়া যথেষ্ট ভালো অভিনয় করেছেন। আনুফা চরিত্রে ইন্দ্রাণী ঘটক নামক ব্যক্তির অভিনয় মোটেই ভালো লাগেনি – মিসির আলীর মতো অপরিচিত একজন মানুষ তার পিছন দিকে গিয়ে ব্যাগ খুলে খাতা বের করছেন নাকি ছুরি বের করছেন – তা ঘাঢ় ঘুরিয়ে দেখা উচিত ছিল – নারীর সহজাত প্রবৃত্তি অনুপস্থিত ছিল অভিনয়ে – যেন বড্ড বেশি চিনেন তিনি এই প্রথম দেখা মিসির আলীকে।

ইরেশ জাকের প্রেমিক হিসেবে যতটা রিফ্রেশিং লুকে ছিলেন, ভিলেন হিসেবে এই রিফ্রেশিং লুকটা কেন জানি তাকে মেকি মেকি করে তুলেছিল – ভিলেনের চেহারার মালিন্য, কাঠিন্য তার চেহারায় দেখা যাচ্ছিল না। স্কিযোফ্রেনিয়াক কিলাররা অবশ্য খুবই স্বাভাবিক থাকেন – সে হিসেবে মাফ করা যায় – তবে আরো অন্ধকার সেট তৈরি করে ইরেশের ভিলেনত্ব তুলে ধরা যেত।

সবশেষে মিসির আলী চরিত্রে দ্যা গ্রেট চঞ্চল চৌধুরী যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পরিচালকের বলা উচিত ছিল – মিসির আলী এতো দ্রুত প্রত্যুত্তর দেন না। মিসির আলী হিমুর মতো প্রত্যুৎপন্নমিত্ব ধারণ করেন না – তিনি ভেবে দেখেন, খতিয়ে দেখেন, তারপর বলেন। মিসির আলীর প্রত্যেকটা জবাব একটা পরিবেশ তৈরি করে।

সিয়াম রূপালী ফন্টের ANSI ভার্ষণ ছাড়া বোধহয় After Effects-এ বাংলা লেখা দুষ্কর। তাই অ্যানসি ভার্ষণের বেমানান দাঁড়িটা (আসলে পাইপ) বড্ড দৃষ্টিকটু লাগছিলো ম্যাসেঞ্জারের টেক্সট-এ। যারা জানেন না, তাদের জ্ঞাতার্থে লিখছি, সিয়াম রূপালীর অ্যানসি’র চেয়ে বিজয়ের KarnaphuliMJ এক্ষেত্রে ভালো ফন্ট।

ক্যামেরার কাজ মন্দ লাগেনি, এডিটিং ভালো ছিল। শেষে ভাসমান পেরেকের আদিভৌতিক দৃশ্যটা অপূর্ব ফুটিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। মিসির আলীর ঘরটাও বেশ ছিল।

সব মিলিয়ে মন্দ লাগেনি… তবে যারা মিসির আলী পড়েন না, তাদের জন্য শেষটা আরো একটু বোল্ড করে শেষ করা যেত – তাহলে “শেষে কিছুই বুঝি নাই” – অনুভূতিটা তৈরি হতো না বলেই আমার মত। সাধারণ দর্শক কিছুই বুঝেনি কিভাবে “রানুর চেহারা নিলুর চেহারায় ফুটে উঠলো”, তারা দেখলো, এতোক্ষণ যে নিলুকে দেখছিল, শেষেও সেই নিলুর চেহারাই… একটা ফ্ল্যাশ দিয়ে নিলু-রানু ট্রানযিশন দেখিয়ে মিসির আলীর বিষ্ময়টা দর্শকের কাছে ফাঁস করা যেত।

তবু, গুড অ্যাটেম্প্‌ট!

প্রচ্ছদের ছবি: ডেইলি স্টার

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল প্রকাশ করা হবে না

আপনি এই HTML ট্যাগ এবং মার্কআপগুলো ব্যবহার করতে পারেন: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

*