আমার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে এমন একটা দল আছেন (সবাই নন), যাঁদের মধ্যে আত্মীয়ের সাথে আত্মীয়ের বিয়ে দেয়ার গভীর রেওয়াজ আছে। নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়েকে ইংরেজিতে “consanguineous marriage” (কনস্যানগুনিয়াস ম্যারিয়েজ) বলে।
তাঁদের এই রেওয়াজ এমনই গভীর যে, আপনি হয়তো কোনো বাড়িতে গেলেন, আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে, “ইনি হলেন চাচী, আবার ইনি আরেক সম্পর্কে মামীও হোন” কিংবা “ইনি আমাদের এই সম্পর্কে চাচা তো ঐ সম্পর্কে দুলাভাই”। মাঝে মাঝেই আমি এই জটিল হিসাব-নিকাশ মিলাতে না পেরে ঈশ্বরকে মনে রাখার দায়িত্ব দিয়ে দেই।
সমস্যা কোথায়?
সমস্যা অনেক গভীরে…
সমস্যা হলো, এই গোত্রের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে রোগ-বালাই একেবারে চিরস্থায়ী বাসা বানিয়ে রেখেছে।
তার কারণ হলো,
পরিসংখ্যান বলে, নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়েতে জন্মানো সন্তানের মধ্যে জিনগত বৈচিত্র্য (genetic diversity) কম থাকে, যা কোনো ক্ষেত্রে আরো মারাত্মক হয়ে তৈরি করে জিনগত খুঁত (genetic defect)।
জিনতত্ত্বে (genetics) recessive gene বা দুর্বল জিনের কারণে বাবা-মায়ের কোনো বৈশিষ্ট্য আপনার মধ্যে সুপ্ত থাকে কিংবা হারিয়ে যায়, আবার dominent gene বা প্রভাবশালী জিনের বৈশিষ্ট্যের কারণে বাবা-মায়ের কোনো বৈশিষ্ট্য আপনার মধ্যে বড় আকারে ধরা পড়ে। সেকারণে বাবা’র কোনো জিনগত বৈশিষ্ট্যে ত্রুটি থাকলে মায়ের সবল জিনের কারণে আপনি পার পেয়ে যেতে পারেন কিংবা মায়ের দুর্বল জিনগত বৈশিষ্ট্য বাবার সবল জিনের কারণে চাপা পড়ে যেতে পারে।
কিন্তু সমস্যা বাঁধে নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়েতে। যেহেতু এদের মধ্যে জিনগত বৈচিত্র্য কম থাকে, তাই বাবার যেখানে ত্রুটি থাকে, দেখা যায় হয়তো মায়েরও সেখানেই ত্রুটি। ফলে ঐ জায়গাটায় সন্তানের জিন ত্রুটিপূর্ণই থেকে যায়, অভাব পূরণের সুযোগ থাকে না।
আর জিনগত সেই দুর্বলতার জায়গাতেই বাসা বাঁধে রোগ, এমনকি বিকলাঙ্গতাও দেখা দিতে পারে।
তাই বলে কি সব নিকটাত্মীয়ের বিয়েই এই পরিণতির দিকে যাবে?
এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
তবে ব্যাখ্যাটা যদি বুঝে থাকেন, তাহলে নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়েতে যে এই ঝুঁকিটা শ্রেফ বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে— তাতে তো কোনো সন্দেহ নেই।
– মঈনুল ইসলাম