ঈদের দুয়েকদিন পরে ট্রেনে বাড়িতে যাচ্ছিলাম। ভৈরব আর ব্রাহ্মণাবাড়িয়ার মানুষ বরাবরের মতোই ঘাঢ়ের উপর। আমার ঘাঢ়ের উপর এক যুবক, সবাইকে হেল্পও করছে যথাসাধ্য। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। তার পাশেই আরেকজন বয়স্ক মানুষ দাঁড়ানো। দুজনেরই লম্বা পথ দাঁড়িয়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে। বয়স্ক লোকের অনুযোগ শুনে যুবক তার নিজের গল্প বললো এবারে:
আমি আজকে ৩ দিন থেকে না ঘুমিয়ে আছি। এখন মালয়েশিয়া থেকে আউট হয়ে দেশে আসছি।
বিদেশ-ফেরত যুবক আমার ঘাঢ়ের উপরেই পাশের ব্যক্তির সাথে বাতচিৎ চালিয়ে যাচ্ছে। পুরো ঘটনার সারমর্ম বলি:
- যুবক ৫ লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়া গিয়েছিলো
- এক জঙ্গলের মধ্যে কাঠের কারখানাতে কাজ করতো তারা। কারখানাটা কোনো এক চীনার (Chinese) ছিলো
- কারখানায় চোখের সামনে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতেও দেখেছে সে। এক ব্যক্তির হাত কাটা গেছে, কাঠ চিরে পেটে ঢুকে গেছে, কিন্তু চীনা মালিক গা করেনি, হাসপাতাল নেয়নি। কারণ এই কর্মীরা অবৈধ। হাসপাতালে নিলে এর কাগজপত্র দেখানো যাবে না। শেষে ঐ ব্যক্তি মারাত্মক ক্ষত নিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন অবশ্য। কাউকে সে মরতেও দেখেছে সেখানে
- গত ২৫-৩০ বছর ধরে ঐ কারখানাতে রেইড হয় না, কিছুদিন আগে রেইড দিয়ে পুলিশ চারপাশ ঘিরে তাদের সবাইকে ধরে ফেলে
- পরে চীনা মালিকের মধ্যস্থতায় আর অর্থ ব্যয়ে তার আর হাজত খাটতে হয়নি অবশ্য; তবে সোজা বাংলাদেশে চলে আসতে হয়েছে
- জেল খাটতে হয়নি বলে সে আল্লাহ’র শুকরিয়া আদায় করছিলো, কারণ জেলখানায় যেখানে খাওয়া, সেখানেই প্রশ্রাব, সেখানেই শোয়া
- মালয়েশিয়া গিয়ে বাড়িতে ১ টাকাও পাঠাতে পারে নাই সে (বোঝাই যাচ্ছে, এই চিত্র ঐ কারখানায় কাজ করা প্রতিজন কর্মচারীরই)
- উল্টো বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে চলতে হয়েছে তাকে
আজকে বিদেশ থেকে কপর্দকহীন সে দেশে ফিরেছে।
৫ লাখ টাকার কী হবে— সে আমি জানি না।