বাংলাদেশের কৃতিত্ব: শয়তান ভাইরাসের মুখোশ উন্মোচন - নিশাচর

বাংলাদেশের কৃতিত্ব : শয়তান ভাইরাসের মুখোশ উন্মোচন

ছোটবেলায় ভাইরাস আর ব্যাক্টেরিয়ার কথা যখন পড়তাম, তখন শুধু বুঝতাম এরা খুব ছোট একপ্রকারের জীব, যাদেরকে দেখার জন্য অণুবীক্ষণ যন্ত্রের দরকার হয়। এছাড়া আর কিছু বুঝতাম না। তবে আরেকটা বিষয় মনে ঠিকই গেঁথে গিয়েছিল যে, ব্যাক্টেরিয়ারা বেশ উপকারী জীব আর ভাইরাসগুলো হলো বদের হাড্ডি। কারণ বইতে, ভাইরাসের উপকারিতা এবং অপকারিতার উল্লেখ থাকলেও কখনোই ব্যাক্টেরিয়ার অপকারিতার উল্লেখ থাকতো না। বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক পড়ে বড় হওয়া আমার মাথায় যদি এই কথাটি ঢুকে থাকতে পারে তাহলে আমারই উচিত সারা বিশ্ববাসীর আগে এই ভাইরাসের শয়তানীর মুখোশ উন্মোচন করা আরো ব্যাপকভাবে। …মজার ব্যাপার হলো হয়েছেও তাই:

ভিব্রিয় কলেরী বংশের এক নিরীহ ব্যাক্টেরিয়া মনের আনন্দে ঢাকা শহরের রাস্তায় উড়ে উড়ে হাওয়া খাচ্ছিল। বেচারা এক্কেবারে নিরীহ, কারো সাথেও নাই, পাছেও নাই। কিন্তু পথ কি আর নিরাপদ? হঠাৎই তার পথ আগলে দাঁড়ায় এক শয়তান ভাইরাস। নাম তার টিএলসি ফাজ। এই শয়তান ভাইরাস মদ খেয়ে মাতাল হয়ে আছে তো তাই কী করছে কিছুই বুঝতে পারছে না, এসে হামলে পড়লো বেচারা ব্যাক্টেরিয়ার উপর। ও বেচারা প্রাণপণ চেষ্টা করেও পারলো না এই পাড় মাতালের হাত থেকে রক্ষা করতে নিজেকে। টিএলসি ফাজ ক্ষতবিক্ষত করে ফেললো ব্যাক্টেরিয়াকে, এমন গভীর ক্ষত দেখা দিলো যে, একেবারে ক্রমোযোমশুদ্ধ উলট-পালট করে ফেললো। রাস্তায় আহত অবস্থায় পড়ে কাতরাতে থাকলো ব্যাক্টেরিয়া।

দূর থেকে ব্যাপারটা দেখছিল আরেক ভাইরাস, নাম তার সিটিএক্স ফাজ। সে এগিয়ে এলো। তাকে দেখে কাতরাতে থাকা ব্যাক্টেরিয়ার আশার সঞ্চার হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তার চোখে উল্টো দেখা দিলো মৃত্যুভয়। কারণ সে জানে, শয়তান ভাইরাসগোষ্ঠীর আরেক সদস্য এই সিটিএক্স ফাজ সাক্ষাৎ ডাকাত, একেবারে বিষাক্ত ডাকাত যাকে বলে। এই ব্যাটা এসেই কাতরাতে থাকা ব্যাক্টেরিয়ার পকেট হাতড়ে টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন, ক্রেডিট কার্ড সব নিয়ে নিলো। তারপর ব্যাক্টেরিয়াকে হাসপাতালে পাঠানো তো দূরের কথা, উল্টো আরো ছুরিটা নিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়ে গেলো আগে থেকেই আহত ব্যাক্টেরিয়াটাকে।

বেচারা ব্যাক্টেরিয়া বিনা কারণে দী-র্ঘ-দি-ন যন্ত্রণায় ভুগলো। এই যন্ত্রণা তাকে করে তুললো প্রতিশোধপরায়ণ: ভাইরাসের গুষ্টি কিলাই। নিতান্ত নিপাট ভদ্রলোক (নাকি ভদ্রব্যাকটেরিয়া) হয়ে উঠলো কুখ্যাত আরেক ডাকাত, যে বলেকয়ে এসে হানা দেয় ঘরে ঘরে। আজ তাকে আমরা খুব ভালোভাবেই চিনি: তার নাম “কলেরা”।

এই পুরো ব্যাপারটিই আবিষ্কার করতে সমর্থ হয়েছেন বাংলাদেশেরই একদল গবেষক। এটা বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের একটি মৌলিক আবিষ্কার। ৩ বছর ধরে চলা এই গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচার-এ বিগত ২১ অক্টোবর ২০১০ তারিখে। গবেষণার সেই মহান ব্যক্তিরা হলেন:
  • শাহ এম ফারুক (ICDDR,B-র বিজ্ঞানী)
  • ফায়জুল হাসান (ICDDR,B-র বিজ্ঞানী)
  • এম কামরুজ্জামান (ICDDR,B-র বিজ্ঞানী)
  • জন ম্যাকালানোস (হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের বিজ্ঞানী)
এই আবিষ্কারের দ্বারা কলেরা ও ডায়রিয়ার কার্যকর টীকা আবিষ্কার করা যেমন সম্ভব হবে, তেমনি এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অন্য রোগের জীবাণুর গতি-প্রকৃতিও নির্ণয় করা যাবে ইনশাল্লাহ।
-মঈনুল ইসলাম
_______________
তথ্যসূত্র:
“একাধিক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ব্যাকটেরিয়া কলেরার জীবাণু হয়”, শিশির মোড়ল; দৈনিক প্রথম আলো; ২ নভেম্বর ২০১০; পৃষ্ঠা ২৪।

প্রকাশ করেছেন

মঈনুল ইসলাম

An ex-Notre Damian, a Graphics, UI Design & Web Development professional, seeking truth in modern world using his interests in theology, theosophy, occult, psychology, cultures, linguistics, noetics, material science and logic.

মন্তব্য করুন