এলইডি বাল্ব দিয়ে ঘরের আলোর চাহিদা পূরণের ধারণাটি যে অধুনা বেশ সামনে চলে এসেছে, তা জানতে পারি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের মাধ্যমে; তাও ভারতীয় নয়, ইউরোপীয়। ভারতীয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে শ্রেফ ওয়াইল্ড লাইফ দিয়ে মানুষকে ভুলিয়ে রাখছে। ইউরোপীয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় দেখায়, যা আমরা বাঙালিরা দেখতে পারি না।
যাই হোক, আমার বন্ধু নাকিবের বড় ভাই (নিসার ভাই) পুরোন ফেলে দেয়া এনার্জি সেভিং বাল্বের (CFL Bulb) খোলস ব্যবহার করে, তাতে অনেকগুলো এলইডি বাল্ব বসিয়ে তার আলোকশক্তি কাজে লাগাতে জানেন। আমি তাঁর সেই কাজকেই আরেকটু উন্নত করতে চাই। তাই আমি কিছু রিফ্লেক্টর বা প্রতিফলক ব্যবহার করে সেই স্বল্প আলোকেই দ্বিগুণ করার চিন্তা করি। যারা এলইডি বাল্ব কী জিনিস চিনতে পারছেন না, তাদের অবগতির জন্য বলছি, আপনার টিভির, মনিটরের ছোট্ট যে বাতিটা জ্বললে আপনি বুঝতে পারেন ঐ যন্ত্রে বিদ্যুত এসেছে, সেই ছোট্ট বাল্বগুলো হলো এলইডি বাল্ব, LED কথাটির ইলেবরেশান বা বিস্তৃত রূপ হলো: Light Emitting Diode। আপাতদৃষ্টিতে এই বাল্বগুলোর আলো খুব কম, তবে কয়েকটি সাদা এলইডি বাল্ব একত্র করলে তার আলো হয় যথেষ্ট। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল (ইউরোপ)-এর মাধ্যমে জানি যে, এখন এলইডি টিউবলাইটও পাওয়া যায়। এলইডি বাল্ব তুলনামূলক যথেষ্ট কম বিদ্যুত ব্যবহার করেই অনেক আলো দিতে পারে, কারণ এই বাল্ব বিদ্যুতের সবটুকু দিয়েই আলো তৈরি করে, কোনো তাপ তৈরি করে না, তাই এলইডি বাল্ব নতুন প্রজন্মের আলোর চাহিদা পূরণে যথেষ্ট সহায়ক উপাদান।
যাহোক, নিসার ভাইয়ের এলইডি বাল্বগুলোর আলো বাড়িয়ে নেবার জন্য আমার ধারণাটি অনেকটা আয়নাঘরের মতন। আমি ছয়টি ষড়ভূজাকৃতির আয়না (চিত্রণ ক) ব্যবহার করে একটি রিং তৈরি করার চিন্তা করছি, যা এলইডি বাল্বগুলোর আলোকে প্রতিবিম্বিত করে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিবে। বাল্ব লাগানোর পরে আয়নাগুলোকে পেছন দিকে ছড়িয়ে দিতে হবে, এতে বাল্বটাকে দেখতেও বেশ সুন্দর লাগবে।
আমার নকশানুযায়ী বাল্বের সামনের অংশে, যে তলে এলইডিগুলো বসানো হবে, সেখানে একটি চকচকে প্রতিফলক বসানো যেতে পারে, অথবা পারদের প্রলেপ দেয়া যেতে পারে, এতে আলো প্রাথমিকভাবে বিবর্ধিত হবে। তারপর যে আলোর কণাগুলো চারপাশে চলে যেতে চাইবে, আমি সেই আলোগুলোকে বিবর্ধিত করবো আমার প্রতিফলক বেষ্টনী দিয়ে। বাল্ব লাগানোর পরে প্রতিফলকগুলোকে পিছন দিকে ছড়িয়ে দিতে হবে (চিত্রণ গ)।
চিত্রণ ক-তে স্বাভাবিকভাবে যে অবস্থা দেয়া আছে, তা দেখতে যতটা সুন্দর, বাস্তবে ততটা সুন্দর কাজ করে না। তবে ফুলের মতো বন্ধ করা, খুলে দেয়ার কাজটি আপাতত আমার নকশায় নেই। আমি স্থায়ীভাবে চিত্রণ খ-এর মতো ৪৫° [ডিগ্রী] কৌণিক দূরত্বে বসিয়ে দেয়ার পথ বাতলে দিতে পারি। এজন্য চিত্রণ ক-তে – – – – – এরকম দাগ দিয়ে যে কৌণিক দূরত্ব দেখানো হয়েছে, সে অনুপাতে প্রতিফলক টুকরোগুলোকে কাটলে তা ফুলের মতো সামনে-পিছনে ৪৫° [ডিগ্রী] কৌণিক দূরত্বে পৌঁছতে পারবে। পেছনদিকে ৪৫° [ডিগ্রী] কোণে একটা করে প্লাস্টিকের টুকরো বসালে প্রতিফলকগুলো সহজে ঠেক দিয়ে বসতে পারবে (চিত্রণ গ)।
চিত্রণ ক-তে লাল রং দিয়ে সম্ভাব্য জোড়া লাগানোর ক্ষেত্রগুলো দেখানো হয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় ভেতরের ষড়ভূজাকার সার্কিট বোর্ডের সর্বকোণে জোড়া লাগাতে হবে। তারপর বাল্ব সকেটে বসিয়ে প্রতিফলককে প্লাস্টিকের টুকরোতে ঠেলে দিয়ে বাইরের লাল চিহ্নিত স্থানে জোড়া লাগাতে হবে।
আর সম্পূর্ণ ব্যাপারটা আরো সহজ হয়ে যাবে, যদি প্রতিফলক বোর্ডে বাল্বগুলো বসানো হয়, আর প্রতিফলক আয়নাগুলো পেছনদিকে ৪৫° [ডিগ্রী] বাঁকানো অবস্থায় একত্র করে বাজারে পাওয়া যায়। বাল্ব সকেটে লাগিয়ে গলায় মালা পরানোর মতো করে প্রতিফলক বেস্টনীকে ঢুকিয়ে দিতে হবে বাল্বের গলায়, যেন চিত্রণ খ-তে দেখানোমতে পুরো প্রতিফলক বেস্টনী বসে।
এই পুরো লেখনীটি শ্রেফ আমার ধারণা অনুযায়ী সত্যি। বাস্তবে এখনো কাজে লাগাইনি। তবে বাজারে এলইডি বাল্ব ব্যবহার করে যেসব ছোট্ট টেবিল ল্যাম্প পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোতে প্রতিফলক ব্যবহারের নানা পন্থা কাজে লাগানো হয়েছে। কারো মাথায় যদি এর চেয়ে ভালো কোনো পন্থা আসে, কিংবা এই পন্থার ফাঁক খুঁজে পান, দয়া করে মন্তব্য অংশে জানাবেন।
– মঈনুল ইসলাম
সেপ্টেম্বর ১৯, ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ