সংযোজন ২৬ আগস্ট ২০১৫: এই লেখাটি নিয়ে পাঠকের বিপুল অভিযোগ। একটা বিষয় একটু জেনে নেয়া দরকার: আমি ক্যালিগ্রাফি বিষয়ে কিছুই জানি না। একজন সাধারণ দর্শকের অবস্থান থেকে পুরো লেখাটা লেখা। মনে রাখতে হবে, একজন সাধারণ দর্শক ক্যালিগ্রাফির একটা ক্যালেন্ডার কিনে এনে ক্যালিগ্রাফি শেখার বই নিয়ে ক্যালিগ্রাফির জ্ঞান আহরণ করতে বসেন না, বরং প্রচণ্ড ধর্মানুরাগ থেকে ঘরের মধ্যে টাঙিয়ে ধার্মিক হবার চেষ্টা করেন। লেখাটি লেখার সময় কয়েকটি ভুল হয়েছে, ভুলগুলোর সংশোধনী লেখার শেষে যোগ করা হয়েছে, পাঠককে লেখাটি পড়া শেষে সেগুলো অবশ্যই দেখে নেবার অনুরোধ করবো। আর, কারো লেখা পড়ার সময় নিজের বিশ্বাসের প্রতিফলন দেখবার জন্য পড়বেন না, দয়া করে – নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে পড়ুন, ভুল থাকলে ধরিয়ে দিন।
প্রতিবছর বিভিন্ন সংগঠন ক্বোরআনের আয়াত দিয়ে লেখা সুন্দর সুন্দর ক্যালিগ্রাফি দিয়ে ক্যালেন্ডার বের করে, একজন মুসলমান হিসেবে ঘরে শেয়াল-কুকুরের ছবি ঝোলানোর চেয়ে এরকম একটা ক্যালিগ্রাফি করা ক্বোরআনের আয়াত সম্বলিত ক্যালেন্ডার ঝোলানো অনেকেই পছন্দ করেন… আমি করি না।
![১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের "গুপী গাইন ও বাঘা বাইন" চলচ্চিত্রের জন্য ক্যালিগ্রাফি [উৎস: http://blog.rarh.in]](https://nishachor.com/wp-content/uploads/2014/11/1968_Goopy-Gyne-Bagha-Byne-300x125.png)
ক্যালিগ্রাফি মানে আঁকাবাঁকা করে সুন্দর করে হরফগুলো লেখা, এটা যেকোনো ভাষায়ই হতে পারে, ইংরেজি, বাংলা, হিব্রু – এরকম প্রায় সকল ভাষাভাষিরাই নিজের ভাষার হরফগুলো সুন্দর থেকে সুন্দরতর করে লেখাকে হরফবিদ্যা বা টাইপোগ্রাফির অংশ করে নিয়েছে। তেমনি আরবিতেও ক্যালিগ্রাফি করা হয়। আরবিতে ক্যালিগ্রাফি করে ক্বোরআনের আয়াত (বাক্য কিংবা বাক্যসমষ্টি) লেখার ইতিহাস কবেকার, সে জানি না, ঘাঁটাঘাটির ইচ্ছেও নেই, তবে সেটা যে ইসলাম আসার পরে, তা তো বোঝাই যায়। যাহোক, এখন যেসব আরবি ক্যালিগ্রাফি পাওয়া যায়, সেগুলো কিরকম একটু দেখা যাক-
![আরবিতে "বিসমিল্লাহ..."র ক্যালিগ্রাফি [উৎস: arabic-calligraphy.net]](https://nishachor.com/wp-content/uploads/2014/11/islamic-vector-88-300x300.jpg)
খুব পরিচিত ক্যালিগ্রাফির মধ্যে আছে “আল্লাহ”, “মুহাম্মাদ”, কোনো কোনো মসজিদে গেলে আবার “আলী”, “ফাতেমা”, “হাসান”, “হোসেন”…। যাহোক, এছাড়া দেখা যায়: “বিসমিল্লাহির রাহ্বমা-নিররাহ্বীম”, সূরা ইয়াসীন, সূরা আররাহ্বমান, আয়া-তুল কুরসি (সূরা বাক্বারার একটি পূর্ণাঙ্গ আয়াত), সূরা ফাতিহা ইত্যাদি। ছোট ছোট সূরা প্রায় পূর্ণাঙ্গই থাকে, বড় সূরা কখনও পূর্ণাঙ্গ, কখনও হয়তো এক রুকূ ইত্যাদি। এছাড়াও মসজিদের বিভিন্ন মাসনূন দু’আ বা নিত্যকার প্রার্থণাগুলো যেমন: মসজিদে ঢোকার দু’আ, মসজিদ থেকে বেরোবার দু’আ ইত্যাদি; কবরস্থানে কবরবাসীর জন্য দু’আ ইত্যাদি টাইল্সের মধ্যে লিখা থাকে কখনও ক্যালিগ্রাফিক ঢঙে, আঁকাবাঁকা হরফে, প্যাঁচিয়ে, সুন্দর করে।
ডানদিকে সেরকমই একটা ক্যালিগ্রাফি দেয়া হলো, যেখানে আরবিতে “বিসমিল্লাহির রাহ্বমা-নির রাহ্বীম” লেখা রয়েছে। এই ক্যালিগ্রাফিটি এতোটাই পরিচিত আর সমাদৃত যে, অনেকেই এটা দেখেছেন, কেউ হয়তো কোনো ইসলাম-বিষয়ক বইয়ের শুরুতে যোগও করে নিয়েছেন। এবারে আসল কথায় আসা যাক-
আপনি “বিসমিল্লাহ…” পারেন না। জেনেশুনে নিজেকে সে অবস্থায় নিয়ে যাওয়া খুব কষ্টের, জানি… তবু নিয়ে যান। আপনি কেবলই আরবি পড়তে পারেন। এবারে ডানদিকের এই লেখাটা পড়ুন, দেখুন তো এভাবে পড়া যায় কিনা- “লিল্লাহু বিসমি হ্বামরি হ্বারলাত লানা…” আলিফগুলো কোথায় পড়বো আল্লা’ মালুম। কেন এরকম পড়লাম?
নিচের তিনটে বাংলা ক্যালিগ্রাফি দেখুন তো…
আপনি কিভাবে পড়েছেন?
১. “আমি বাংলায় ভালোবাসি”
২. “বাং আমি ভালোবাসি লায়”
৩. “আমি ভালো বাংলায় বাসি”
আপনার পঠনে খানিক ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু এটা নিশ্চিত, প্রথমটা আপনি অবশ্যই “আমি বাংলায় ভালোবাসি” কথাটিই পড়েছেন। কিন্তু পরেরগুলোতেও তো একই কথাই লেখা আছে, কিন্তু আপনি কেন সেভাবে পড়লেন না? আপনি তো “আমি বাংলায় ভালোবাসি” কথাটা অবশ্যই জানেন, তবে কেন? কারণ অক্ষরের অবস্থান, অক্ষরের আকার, অক্ষরের ক্রম আপনাকে ওভাবে ভিন্নার্থে পড়তে বাধ্য করেছে। আপনি যদি টাইপোগ্রাফি নিয়ে পড়ালেখা করতেন, তবে এই বিষয়গুলোই খুব যত্ন করে আপনাকে শেখানো হতো। কিন্তু টাইপোগ্রাফি না জেনেই সাধারণ মনুষ্যপ্রবৃত্তি থেকেই এভাবে পড়েছেন আপনি।

এই উদাহরণটা এজন্য আপনাদের দিলাম যাতে আপনারা উপলব্ধি করেন, বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা হবার কারণে আমরা ফট করে পড়ে ফেলি না, বরং একটু বুঝেশুনে পড়ি। অথচ ভিনভাষী হরফ অনেক সময়ই আমরা আন্দাজে পড়ে ফেলি, কিংবা একটু হিন্ট বা সূত্র নিয়েই বাকিটা পড়ে ফেলার চেষ্টা করি। বাম দিকের এই লেখাটা অধিকাংশ লোকই ভুল করে পড়েন: “I Love Paris in the SpringTime” – আসলে তা ঠিক নয়, এবং আরো কয়েকবার দেখলেই বিষয়টা স্পষ্ট হবে আপনার কাছে।

যাহোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি – আরবি ক্যালিগ্রাফি। আরবি ক্যালিগ্রাফিতেও বিষয়টা তা-ই হওয়া উচিত, অক্ষরের ক্রম হবে এমন, যেভাবে সাজালে পাঠক সঠিক অর্থে লেখাটা পড়বে, উল্টাপাল্টা করে ডিযাইন বা নকশা আমি করতেই পারি, কিন্তু সেটা তো অর্থবোধক হবে না। নিরর্থক একটা লেখা প্যাঁচিয়ে লিখে আসলে আমরা কী করতে চাচ্ছি?
আর ক্বোরআন কিংবা ক্বোরআনের অংশবিশেষ নিয়ে এরকম খামখেয়ালিপনা আসলে ধর্মীয় অনুভূতি জাগ্রত করা নয়, বরং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করারই নামান্তর (একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে আমার কাছে অন্তত সেরকম মনে হয়)। ডান দিকে সূরা আল-ইনশিরাহ সম্পূর্ণই রয়েছে। আপনি হরফ ধরে ধরে পড়ে যেতে পারবেন? কোথা থেকে শুরু করবেন পড়া? কোথায় গিয়ে থামবেন? মনে রাখবেন, আপনি সূরা আল-ইনশিরাহ মুখস্ত না জেনে অক্ষর ধরে ধরে পড়ে যাবেন, যেমনটা ক্বোরআন শরীফ খুলে কোনো সূরার হরফ ধরে ধরে উচ্চারণ করে করে ক্বোরআন তেলাওয়াত করেন।
অর্থ বিকৃতির চূড়ান্ত
![আরবিতে পেপসি'র লগো - লেখা "বেবসী" [উৎস: 1389blog.com]](https://nishachor.com/wp-content/uploads/2014/11/pepsi-logo-arabic-260x300.png)
আরো মারাত্মক অর্থ বিকৃতির কথা বলি- আরবি যারা ব্যাকরণ জানেন, বা ভাষা হিসেবে লেখেন, তারা যের-যবর (আরবিতেকাসরা-ফাতহ্বা) ইত্যাদি নিয়ে অত মাথা ঘামান না, কারণ বাক্যই বলে দেয়, কোথায় যের হবে কোথায় যবর। বামে বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড Pepsi’র লগো দেয়া হলো, দেখুন নিচে লেখা “বেবসী” (বা-ইয়া-বা-সিন-ইয়া) – কারণ আরবিতে “প” উচ্চারণ করার মতো কোনো হরফ নেই, আর তা লেখা হয়েছে যের-যবর ছাড়া, মানে আকার-ইকার ছাড়া। কিন্তু যের-যবর ছাড়া লেখা হলেও আরবিতে তাশদীদ (অনেকটা দেখতে ত্রিশূলের মতো, হরফের উপরে থাকে) খুব গুরুত্বপূর্ণ – বিশেষ করে সাধারণ্যের জন্য যখন কোনো লেখনী লেখা হবে। উদাহরণ দেয়া যাক-
ধরা যাক, আরবিতে আমি “মুহাম্মাদ” (শেষ নবীর [স.] নাম) শব্দটা লিখি যের-যবর ছাড়া, তাহলে লিখতে হবে: মিম-হ্বা-মিম-দাল (ﻣﺤﻣﺪ)। ব্যস, এতটুকু লিখেই যদি রেখে দিই, আপনি কী পড়বেন? আপনি আপত্তি করবেন, ভাই, যা সহজেই পড়া যাচ্ছে, যা তা নিয়ে কেন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন? এটা তো অবশ্যই “মুহ্বাম্মাদ”। …ভালো বলেছেন, আমি যদি পড়ি এটা “মাহ্বমুদ”। এই বিভ্রান্তি কিছুটা হলেও দূর করার জন্য দরকার ঐ তাশদীদের। যদি দ্বিতীয় মিম-এর উপর তাশদীদ থাকতো, তাহলে একে “মাহমুদ” পড়া যেত না। (সংশোধনী দ্রষ্টব্য)
![বেহেমথ - Baphomet - দেবতা (এটা অবশ্য এলিফাস লেভী ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে আঁকেন) [উৎস: উইকিমিডিয়া কমন্স]](https://nishachor.com/wp-content/uploads/2014/11/Baphomet-204x300.png)
এই তাশদীদ না থাকাটা যে আরেকদিকে চরম ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটা এবারে দেখা যাক। নাইট টেম্পলাররা ১৪শ অব্দের দিকে “বেহেমথ” (ব্যাফোমেত, Baphomet) নামক এক শয়তান-দেবতার পূজা করেন বলে অভিযোগ আছে। এই ব্যাফোমেত নামোচ্চারণটা, আধুনিক গবেষকদের মতে, তৎকালীন ফরাসি অপভ্রংশ থেকে এসেছে, যা আসলে আরবি’র অপভ্রংশ ফরাসি উচ্চারণ। গবেষক পীটার পার্টনার এবং ম্যালকম বার্বার এই মত দিয়েছেন যে, ব্যাফোমেত আসলে আরবি “মুহাম্মাদ” শব্দের অপভ্রংশ:
ব্যাফোমেত < ম্যাহোমেত < মুহাম্মাদ
তো, এবারে একটু দেখুন তো, আমি যদি যের-যবর ছাড়া আরবিতে মিম-হ্বা-মিম-দাল (ﻣﺤﻣﺪ) লিখি, তাহলে তাকে “মেহ্বোমেদ” পড়া যায় কিনা? সত্যি বলতে কি, আমি একটা মসজিদে টাইল্সের মধ্যে “আল্লাহ” আর “মুহাম্মদ” লেখা দেখেছি, যেখানে তাশদীদ ছিল না। আপনার ইচ্ছা হলে ওটাকে “মেহ্বোমেদ” পড়ে নিন…। (সংশোধনী দ্রষ্টব্য)
বিধর্মী আচার লালন
বামের লেখাটি পড়ুন। এতক্ষণে কিছুটা সচেতন হয়ে গেছেন, তাই না? সাধারণ যে কেউ এই লেখাটা কোথাও দেখলে, একটা ইসলামিক ক্যালেন্ডারে দেখলে, যত্ন করে ঝুলিয়ে রাখবে। বছর শেষে ফ্রেম করে রাখলেও আশ্চর্য হবার কিছুই নেই – কারণ তিনি পড়েছেন, এখানে লেখা: “আল্লাহ মুহাম্মাদ”।

ভুল। এটা আসলে বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টের জন অধ্যায়ের অধ্যায় ৪-এর ৮ নম্বর পংক্তি (যাচাই করুন^), এখানে লেখা আছে “God is Love”, আরবিতে লিখলে লিখতে হয় “আল্লাহ মুহাব্বাত” (পড়তে হবে “আল্লাহ মুহাব্বাহ্”)। ঈশ্বর বা পরমেশ্বরকে (The God) বোঝাতে বাংলা ভাষায় আমরা আরবি থেকে “আল্লাহ” শব্দটিকে নিয়ে এসেছি। কিন্তু বাংলাতেই ঈশ্বরের জন্য “ঈশ্বর” শব্দটা রয়েছে। আরবিতে তেমনি ঈশ্বরকে বোঝাতে একটাই শব্দ আছে “আল্লাহ” – অন্তত বর্তমান আরবে। তাছাড়া একটু বিশ্রী শোনা গেলেও, মিশনারীগণ প্রচলিত ধারণা দিয়ে ঘোল খাইয়ে বাইবেল-কে মুসলমানদের জীবনযাত্রায় ঢুকিয়ে দেয়ার একটা চেষ্টা করছে – এটা মসজিদের হুযুররা প্রায়ই বলেন, আর আমরা শুনতে শুনতে বিরক্ত, আর মনে করি, হুযুররা খালি খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে কথা বলে। কিন্তু বাস্তবতা সত্যিই তাই। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ, কোনো একদিন আলোচনা করা যাবে।
এভাবেই আরো আছে – আব্বানা… দিয়ে শুরু করা আরবি ক্যালিগ্রাফি – যেখানে আসলে লেখা বাইবেলের মথি (৬:৫-১৩) আর লুক-এ বর্ণিত যিশু কর্তৃক শেখানো প্রার্থণা (পড়া যাবে উইকিপিডিয়ায়^)। আপনি হয়তো ভুল করে পড়েই ফেললেন – “রাব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হ্বাসানা…”। পড়লে দোষের কী? …আমার কথা হলো, না বুঝে পড়ারই দরকারটা কী?
তো, বুঝে কি না বুঝে ইসলাম আর ক্বোরআনের প্রতি মমত্ব দেখিয়ে আপনি আসলেই আরো খানিকটা ধার্মিক হচ্ছেন? নাকি ধর্মের নামে মশকরা করে ধর্মকে নিয়ে খেলা করছেন? আপনি কোন ধর্মের অনুসারী, কোন ধর্ম পালন করবেন, তা আপনার বিষয়। কিন্তু যে ধর্মই পালন করুন না কেন, ধর্মের নামে মশকরা করার অধিকার আপনার নেই।
একটাই মাত্র ভালো দিক
আরবি এসব ক্যালিগ্রাফির একটাই মাত্র ভালো দিক আমি দেখতে পাই – ঈশ্বরের স্মরণ। একটা ঘটনা বলি:
১৯৯৭’র দিকের কথা, আমাদের ঘরে আম্মার বিছানার সামনে একটা রট-আয়রনের রেকে বই রাখা ছিল আমার, আমার গ্রন্থাগার। সেখানে একটা বই, রেকের শেষ মাথায় ছিল, সেটা ছিল একটা ক্যাটালগ। সেটা ছিল Ebert নামক একটা কোম্পানীর পণ্যের ক্যাটালগ, যার কভারটা ছিল হলুদ রঙের, আর তার উপরে লাল রং দিয়ে লেখা ছিল Ebert। আমরা যখনই ঐ বিছানায় শু’তাম কিংবা বিছানা থেকে উঠতাম, তখনই ঐ বইটার দিকে আমাদের নজর যেত, আর আমরা মনের অজান্তে একবার ই-বার্ট লেখাটা উচ্চারণ করতাম, মনে মনে, কিন্তু উচ্চারণ করতাম নিশ্চিত। আমিও করতাম, আম্মাও, আব্বাও… কেউ কাউকে কিচ্ছু বলিনি। একদিন আব্বাই প্রথমে বিষয়টা নজরে আনলেন, তখন সবার সাথে মিলে গেল। সত্যিই সবাই একবার হলেও বিছানা থেকে ইবার্টের যিকির করতাম।
তাই, একটা গ্রামের দৃশ্য, কিংবা একটা ফুলের দৃশ্যের চেয়ে যদি একটা ক্যালিগ্রাফি আপনাকে একবারের জন্যও ঈশ্বরের স্মরণ দেয়, কিংবা মনে মনে একবার “ইয়া-সীন” উচ্চারণ করেন – কিছু হয়তো হয় না, তবুতো ঈশ্বরের স্মরণ হলো…।
এই একটা, মাত্র একটা, ভালো দিক ছাড়া তথাকথিত, প্রচলিত সকল আরবি ক্যালিগ্রাফির আমি কোনো ভালো দিক তো পেলাম না।
শেষ কথা
আরবি ক্যালিগ্রাফির বিরোধী আমি নই। আমি নিজেও একজন ডিযাইনার, টাইপোগ্রাফি, ক্যালিগ্রাফি’র গুরুত্ব আমি বুঝি। কিন্তু ক্যালিগ্রাফির ব্যাকরণ জেনে আপনি যে ক্যালিগ্রাফিটা করেছেন, একজন সাধারণ মানুষ সেই ব্যাকরণ না জেনেই সেটার মর্মোদ্ধারের চেষ্টা করছে – এটা অস্বীকার করবার উপায় নেই।
না বুঝে আল্লাহ-যপ করার চেয়ে বুঝে করলে তা যে কোটিগুণ বেশি কাজের, তা বোধকরি আর হাদিস-ক্বোরআন খুঁজে দেখাতে হবে না। তাই না বুঝে অবোধগম্য ক্যালিগ্রাফি দিয়ে ঘর না সাজিয়ে বুঝে ধর্ম পালন করি… বুঝে ক্বোরআন পড়ি…। ঈশ্বর আমাদেরকে “সিরাতুল মুসতাক্বিম”-এর উপর চলা সহজ করে দিন – প্রভু আমায় জ্ঞান দিন।
-মঈনুল ইসলাম
____________________________________
লেখাটিতে, সহকর্মী মোহাম্মদ সোহাগ হোসাইন আমাকে আরবি ভাষা নিয়ে ছোট ছোট বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন, আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। প্রচ্ছদের ছবির কারিগর zArtandDesign, ডেভিয়্যান্টআর্ট থেকে নেয়া।
____________________________________
সংশোধনী (আগস্ট ২৬, ২০১৫)
সহকর্মী সোহাগই লেখাটা প্রকাশের ক’দিন পরে আমাকে জানান, আসলে আরবিতে ‘মাহ্বমুদ’ লিখতে হলে একটা ‘ওয়াও’ জরুরি: মিম-হ্বা-মিম-ওয়াও-দাল (محمود)। তাহলে ‘মুহাম্মদ-কে মাহ্বমুদ পড়া যাবে’ – কথাটা আসলে আমি ভুল বলেছিলাম। কিন্তু আরবি-বিষয়ক অজ্ঞ কেউ আমারই মতো ভুল করতেই পারেন – এটা হয়তো আমি ভুল বলিনি। যাহোক, মিম-হ্বা-মিম-দাল দিয়ে ‘মাহ্বমুদ’ হয় না – এটা নিশ্চিত।