একজন য়িন য়্যুজান আর সর্ববৃহৎ মরু জঙ্গল

শুভ সকাল পৃথিবী!

ধুলি ধুসরিত ভূমির উপর দাঁড়িয়ে চীনের উত্তরে গবি মরুভূমির বাসিন্দারা যখন দেখেন, মরু শুধু মরুই নয়, সেই মরু দিনের পর দিন শুধু বড়ই হচ্ছে, আর গ্রাস করে নিচ্ছে নিজেদের সবকিছু… দিনে দিনে শুষে খেয়ে ফেলছে বেঁচে থাকার সব রসদ… তখন তাদের মাঝেই একজন দাঁত কিড়মিড় করে বেঁকে বসলেন: নাহ, আর নয়, উষর মরুকে করিবো উর্বর!

এশীয় ধুলিঝড়, এশিয়া, আফ্রিকা ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় আমেরিকা অবধি (ছবি: নাসা)

য়িন য়্যুজান নিজের গবাদি পশু বিক্রী করে ৬০০ চারা কিনে মরুভূমির বুকে গাছ লাগানোর এক অকল্পনীয় যজ্ঞ শুরু করে দিয়েছিলেন। তাঁর স্বামীর সহায়তায় গাছ লাগাতে পারলেও মরুর ধুলিঝড়ে শেষ পর্যন্ত মাত্র ১২টি গাছ টিকতে পেরেছিলো। ঐ ১২টি গাছকে সম্বল করে বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে তার বিনিময়ে গাছের চারা নিয়ে ৩০ বছর ধরে মরুর জলহীন নড়বড়ে, অস্থির বালুতে লাগিয়ে গেছেন গাছ। শুরুতে তিনি Willow আর Poppler লাগালেও এদের আয়ুষ্কাল কম হওয়ায় পরবর্তিতে উনি পাইন গাছ লাগাতে শুরু করেন।

য়িন য়্যুজান-এর এই যজ্ঞ বৃথা যায়নি; তাঁর কাজ সরকারকে আকৃষ্ট করেছে। তারা বুঝতে পারলো মরুকেও জঙ্গল বানানো যায়। ১৯৭৮ সালে “থ্রি নর্থ শেল্টার ফোরেস্ট প্রোগ্রাম” নামক ২০৫০ সাল অবধি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বনায়ন কার্যক্রম হাতে নিলো সরকার। ২০০৯ সাল অবধি ৫,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে মানুষ মরুকে জঙ্গলে রূপান্তর করতে পেরেছে। কোটি কোটি চারা রোপনের মাধ্যমে মরুভূমিকে জঙ্গলে রূপান্তরের এই মহাযজ্ঞ এখনও চলছে সেই দেশে।

যেহেতু মরুতে গাছ গজানোটা প্রাথমিক লক্ষ্য, তাই এখানে আসলে মনোকালচার করা হচ্ছে: মানে একজাতের গাছ দিয়েই জঙ্গল তৈরি করা হচ্ছে। আদর্শ প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরিতে এটা আবার অতোটা সহায়ক না; গাছ, ফুল-ফলের বৈচিত্র্য না থাকায় এসব জায়গায় পাখি বাস করতে চায় না। তাছাড়া মরুতে মাটির নিচের পানি যাও আছে, এসব আগ্রাসী গাছ তা শুষে আরো নিঃশেষ করে দিতে পারে বলেও অনেকে ক্রিটিসাইয করেছেন এই প্রকল্পকে।

কিন্তু দিন শেষে, জঙ্গল যে জল ধরে রাখে, জমিকে উর্বর করে, আর এই জঙ্গল সাফ করে মনোকালচার থেকে বেরিয়ে এসে অন্য গাছের বৈচিত্র্য দিয়ে নতুন জঙ্গল তৈরি করার একটা রাজপথ তৈরি করে দিচ্ছে এই উদ্যোগ – তা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না।

এই মহাযজ্ঞ সম্বন্ধে জানা যাবে রয়টার্স-এর এই ভিডিও থেকে…

মঈনুল ইসলাম

তথ্য-উৎস

  • বিভিন্ন বার্তা-সংস্থার ইউটিউব ভিডিও এবং প্রতিবেদন
  • মূল বিষয়বস্তু: https://en.wikipedia.org/wiki/Great_Green_Wall_(China)
  • য়িন য়্যুজান-এর উইকিপিডিয়া নিবন্ধ: https://en.wikipedia.org/wiki/Yin_Yuzhen

প্রচ্ছদের ছবি: china.org.cn

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল প্রকাশ করা হবে না

আপনি এই HTML ট্যাগ এবং মার্কআপগুলো ব্যবহার করতে পারেন: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

*