রাবার ব্যান্ড

“টানলে বাড়ে” বলুন তো সেটা কী? উত্তরটা হলো ‘রাবার ব্যান্ড’। এই রাবার ব্যান্ড আমরা বিভিন্নভাবে চিনে থাকি। মেয়েরা রাবার ব্যান্ড দিয়ে চুল বাঁধেন, রাবার ব্যান্ড দিয়ে ব্যাংক টাকার বান্ডিল বেঁধে দেয়। রাবার ব্যান্ডের বিশেষত্ব হলো, একে টেনে অনেক বড় করলেও, ছেড়ে দিলে আবার তা আগের অবস্থায় ফিরে আসে। নমনীয় এই বিশেষ বস্তুটি কিভাবে তৈরি হয়?

“রাবার ব্যান্ড বানানোর ব্যাপারটা অনেকটা পাউরুটি বানানোর মতোই।” আরকানসাসের (Arkansas) ‘অ্যালায়্যান্স রাবার কোম্পানি’ তাদের ওয়েবসাইটে এমনটাই লিখে রেখেছে। শুনে মনে হচ্ছে, আমাদেরকে রাবার চিবানোর জন্য পাউরুটির মতোই জিহ্বা বের করে উউম্‌ম বলতে হবে- যেন বেক করা রাবারের সুগন্ধ কতইনা স্বাদের!

আসলে অ্যালায়্যান্স সেটা বুঝাতে চাচ্ছে না। কোম্পানিটি বিস্তারিতভাবে জানাচ্ছে, প্রথমে গাছ থেকে সংগৃহীত রাবারের সাথে কিছু শুকনো উপাদান মেশানো হয়; যেমন রং, প্রিযারবেটিভ (সংরক্ষক দ্রব্য) এবং অতি জরুরিভাবেই সালফার। সালফার মেশানোতে রাবারের মধ্যে একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া ঘটে, যাকে বলা হয় ভালকানাইযেশন (Valcanisation)। ভালকানাইযেশন, রাবারের অণুকে একটি জটিল চক্রে নিয়ে যায়, যা রাবারকে বিস্তারণ ক্ষমতা (টানলে বড় হবার ক্ষমতা) এবং মজবুতি এনে দেয়।

এই শুকনো উপাদানগুলো রাবারের মণ্ডের সাথে একটি বিশাল মিক্সচার মেশিনের মধ্যে মেশানো হয়। এই মিশ্রণে উপাদানগুলো মেশানোর জন্য তাপ বাড়ানো  হয়। বের হয়ে আসা একেকটি প্রায় ৫০০ পাউন্ডের রাবারের মণ্ড এরপর পাঠিয়ে দেয়া হয় একটি বিশাল যন্ত্রে, যা একটি [রুটি বানানোর] বেলনার মতো কাজ করে। কিছু রাবারের রুটির চাদর তৈরি হয়। বেলনা দিয়ে বানানো রাবারের রুটিগুলো আলাদা আলাদা ফালিতে ভাগ করা হয়, যেগুলো একটি চাপ-দেয়া যন্ত্রে দেয়া হয়।

যা বেরিয়ে আসে, তা দেখতে বাগানে পানি ছিটানোর পাইপের মতো ‘রাবার টিউব’। ভালকানাইযেশন প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ হিসেবে এই টিউবকে গরম করা হয়, ধোয়া হয় এবং ঠান্ডা করা হয়। তারপর এই টিউব থেকেই খুব দ্রুততার সাথে চোখের পলকে একটি যন্ত্রে রাবার ব্যান্ড কাটা হতে থাকে। ব্যাপারটা এতো দ্রুত হয় যে, এক মিনিটে ৩,০০০-এর বেশি রাবার ব্যান্ড তৈরি হয়ে যায়।

অণুকথা:

  • ক্যারিবীয় এলাকায় গিয়ে ক্রিস্টোফার কলম্বাস এবং তাঁর সহযাত্রীরা আশ্চর্য হয়েছিলেন একটি বেঢপ বল লাফাচ্ছিল দেখে। তাঁরা জানতে পারেন, এটি রাবার গাছ থেকে বের হওয়া আঁঠালো রসে তৈরি।
  • রাব (rub) বা ঘষার মাধ্যমে দাগ তুলে ফেলার ক্ষমতা থেকে এই বস্তুটির রাবার (rubber) নামটির উৎপত্তি হয়েছে।
  • দিলাওয়্যারের (Delaware) জন বেইন (John Bain) দাবি করেন, তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ রাবার ব্যান্ড বল তৈরি করেছেন এবং গীনেয বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডয তা স্বীকার করেছে। বলটি ৩,১২০ পাউন্ডেরও বেশি ওজনের; ৫ ফুট লম্বা এবং বলটি ৮,৫০,০০০ রাবার ব্যান্ড দিয়ে বানানো হয়েছিল। এটি বানাতে বেইনের ৫ বছর সময় লেগেছিল।
  • গণিতে টপোলজি (Topology) নামে একটি শাখা রয়েছে, যা মূলত জ্যামিতির এমন সব কাঠামোর ব্যাখ্যা দেয়, যা আকৃতি কিংবা গঠনগত পরিবর্তনে বিশেষ পরিবর্তিত হয় না। এই টপোলযি শাখাকে কেউ কেউ রাবার-ব্যান্ড; রাবার শীট কিংবা রাবার-স্থানিক জ্যামিতি বলে থাকেন।
  • ফরাসি আবিষ্কারক এ্যালফনসে পেনৌড (Alphonse Pénaud) সর্বপ্রথম উড়োজাহাজের এমন একটি মডেল তৈরি করেন, যাতে শক্তিদানকারী হিসেবে প্যাঁচানো রাবার ব্যান্ডকে ব্যবহার করেন।

-মঈনুল ইসলাম

________

এটি একটি ভাবানুবাদ (সময়: নভেম্বর ৮, ২০০৭; রাত ১:৩২)। মূল লেখাটি Jeff Elder-এর; Gulf News পত্রিকার সাপ্তাহিক প্রকাশনা Friday-তে প্রকাশিত ২১-২৭ এপ্রিল ২০০৬ খ্রিস্টাব্দ। এর সাথে আরো তথ্য যোগ করে নিবন্ধটি আরো তথ্যবহুল করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল প্রকাশ করা হবে না

আপনি এই HTML ট্যাগ এবং মার্কআপগুলো ব্যবহার করতে পারেন: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

*