শুয়ান ৎসাং-এর অলৌকিক ঘটনা

“শুয়ান ৎসাং” নামটা শুনে আপনি হয়তো থমকে যাবেন। কিন্তু আমি যদি “হিউয়েন সাঙ” বলি তাহলে হয়তো তাঁকে কেউ কেউ চিনেও থাকতে পারেন, নিদেনপক্ষে পাঠ্যবইতে কোনো না কোনো সময় পড়ে থাকবেন তাঁর নাম। তিনি হলেন বিখ্যাত চীনা পর্যটক, একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু, যিনি মুহাম্মদ [স.]-এর মৃত্যুর বছরদুয়েক আগে, ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের কোনো এক সময়ে ভারতে এসেছিলেন শ্রেফ বৌদ্ধ পুঁথি সংগ্রহ করবার জন্য, বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা করবার জন্য। কিভাবে এসেছিলেন, তা বিশাল গল্প – সে অন্যসময় করা যাবে। আজ শুনি তিনি ভারত আসার পরে কী ঘটেছিলো।

সেই সুদূর চীন থেকে ভারত আসতে, পথে বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা বার কয়েক ডাকাতের খপ্পরে পড়েছিলেন; কিন্তু শুধু ভারতেই তাঁরা ডজনখানেকবার ডাকাতির সম্মুখিন হয়েছিলেন। একবার তো প্রাণ নিয়ে বেঁচে ফিরেছেন কোনোমতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। গঙ্গা’র তীরে এসে কোনো একসময় তিনি ধরা পড়ে গেলেন আরেকদল ডাকাতের হাতে। এরা আবার দেবী দূর্গার উপাসনা করে, আর দূর্গার জন্য নরবলী দেয়াতে বিশ্বাস করে। তারা বিশ্বাস করতো, দেবী দূর্গার প্রাসাদ হলো এই গঙ্গার উজানে, বরফে ঢাকা পর্বতের কোথাও…। শুয়ান ৎসাং-কে শান্তশিষ্ট মানুষ দেখে তাদের বিশ্বাস জন্মালো, যদি এঁকে দেবীর জন্য বলী দেয়া যায়, তাহলে দেবী তাদের প্রতি সদয় হবেন। শুয়ান ৎসাং বুঝে গেলেন, এখানেই ইতি ঘটতে চলেছে তাঁর কাঙ্ক্ষিত ভারত ভ্রমণের… তাঁর আর বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা করা হবে না…

ডাকাতেরা যখন বলি দেয়ার মোক্ষম সময়ের অপেক্ষা করছে, শুয়ান ৎসাং তখন জীবনের মায়া ছেড়ে দিয়ে, একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে শান্তশিষ্ট হয়ে বসে, ধর্মে শেখা বিভিন্ন শ্লোক যপ করতে থাকলেন একমনষ্ক হয়ে…

সময় যায়… শুয়ান ৎসাং-এর মৃত্যুর ঘন্টা বাজতে থাকে…

কিন্তু শুয়ান ৎসাং-এর প্রার্থণা কাজে লাগে – একসময় তীব্র বাতাস বইতে শুরু করে… বাতাসের তোড়ে গাছ ভেঙে পড়তে থাকে… নদীতে ডুবে যায় নৌকা…

ডাকাতেরা ভয় পেয়ে যায় যে, দেবী বোধহয় রুষ্ট হয়েছেন তাদের কাজে; আর মুক্তি পেয়ে যান শুয়ান ৎসাং।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: বৌদ্ধধর্মে কোনো ঈশ্বর ধারণা নেই। কোনো ধর্মকে হেয় করা এই পোস্টের উদ্দেশ্য নয় – এটা শুয়ান ৎসাং-এর জীবনী থেকে পাওয়া একটা ছোট্ট ঘটনামাত্র। জানে বেঁচে গিয়ে শুয়ান ৎসাং-এর পরের গন্তব্য নালন্দা মহাবিহার… সে গল্প আরেকদিন…

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল প্রকাশ করা হবে না

আপনি এই HTML ট্যাগ এবং মার্কআপগুলো ব্যবহার করতে পারেন: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

*