বাংলায় নমুনা লেখা (Bangla Lorem Ipsum) তৈরির পেছনের কথা

আমার পেশাগত কাজেই ওয়েব ডিযাইন, কিংবা ওয়েব ডেভলপমেন্টের সময় আমরা যখন প্রয়োজনীয় লেখার যোগান পেতাম না, তখন লাতিন হরফের lorem ipsum দিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করতাম। তখন বাংলায় বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ওয়েবপোর্টাল তৈরি করবার সময় লোরেম ইপসামের মতোই কিছু একটার খুব অভাব অনুভব করি। তখন তো লোরেম ইপসাম জেনারেটর তৈরির জ্ঞানগম্যি ছিলো না বলে সাহিত্যজ্ঞান দিয়ে তৈরি করি “অর্থহীন লেখা”। সেটাই একটা ব্লগের মাধ্যমে প্রকাশ করি ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে। সেসময় অনেকেই এর উপকার ভোগ করেছেন, অনেক ওয়েবসাইটে এখনও ‘অর্থহীন লেখা’র অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

দীর্ঘদিন থেকে ব্লগটা বন্ধ ছিলো বলে ২০২৩-এ এসে আমি একটা বাংলা লোরেম ইপসাম জেনারেটর তৈরির পরিকল্পনা করি। প্রথমত সেখানে আমার সেই ‘অর্থহীন লেখা’টা থাকবে, আর সাথে মানুষের নাম তৈরি করবার যন্ত্রও থাকবে। ঠিক তখনই সাইফুল ইসলাম রাসেল-এর তৈরি BanglaLorem-এর কাজটা দৃষ্টি আকর্ষণ করলো আমার, যা মূলত Corporate Ipsum-এর আদলে তৈরি করা। সেখানে কোডগুলো অবশ্য অগোছালো ছিলো, আর বেশ কিছু deprecated কোডও ছিলো। ঠিক করলাম, তাঁর এই কাজটাকেও পুণর্জীবিত করা যেতে পারে। তখন এই তিনটে জিনিসকেই একত্র করে কাজে হাত দিলাম।

কী আছে এতে?

আমার কাজের ডিযাইন হিসেবে আমি Corporate Ipsum Chromium Extension-এর ডিযাইনটাকে প্রাথমিক আদল হিসেবে নিয়ে কাজ শুরু করলাম। প্রথমেই নাম তৈরির কাজটি করতে শুরু করলাম। এই নাম তৈরির ধারণা আমি প্রথম পেয়েছিলাম Laravel-এর Faker প্যাকেজ থেকে। সেই ধারণা নিয়েই বাঙালি মানুষের নামের “শুরুর অংশ” আর “শেষাংশ” জোড়া লাগিয়ে কাজে হাত দিলাম। জাভাস্ক্রিপ্ট দিয়ে খুব দ্রুত একটা বানিয়েও ফেললাম।

কিন্তু শুরুতেই ঘটলো বিপত্তি!

যে নামগুলো তৈরি হচ্ছে, তা খুবই বিদঘুটে শোনাচ্ছে। যেমন ধরা যাক, রবীন্দ্রনাথ খাতুন, বনলতা আলম কিংবা মোহাম্মদ রোজারিও। ঠিক করলাম এর একটা বিহীত করা দরকার। বুঝলাম বাংলাতে যেমন নামের প্রশ্নে ধর্মের একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব আছে, তেমনি লিঙ্গের প্রভাব আছে। তাই বাধ্য হয়ে নামের অংশগুলোকে ধর্ম আর লিঙ্গে ভাগ করতে বাধ্য হলাম। খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, মুসলমান, হিন্দু – এই চার ধর্মের মানুষের নাম খুঁজে নামের দুটো অংশ বসালাম। তার মধ্যে আবার পুরুষ আর নারীর নাম আলাদা করলাম। তারপর এগুলোর সমন্বয় করে নাম তৈরি করলাম। সহজ কাজটা একটু জটিল হলো বটে, তবে এবারে নামগুলো বাস্তবসম্মত হয়ে উঠলো।

বাংলালোরেম-এর জেনারেটর নিয়ে কাজ করবার সময় আমি বাংলাদেশের পল্লীকবি জসিমউদ্দীনের “তরুণ কিশোর” কবিতাটি ব্যবহার করলাম। কবিতাটি এই প্রথম বোধহয় দেখলাম কিংবা এই প্রথম মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। কবিতাটি আমার মনে ধরলো বেশ (ঈশ্বরের কাছে তাঁর আত্মার শান্তি কমনা করি)। এই কবিতাটি ব্যবহার করবার সময় গদ্য-বাক্য তৈরি করবার সুবিধার্থে কবিতার কয়েকটা চরণকে একত্রে জুড়ে নিতে বাধ্য হলাম অবশ্য। তবে আশানুরূপ ফলাফল পেয়ে ভালো লাগলো।

টেক্সট জেনারেটরটির বাংলা নাম দিলাম “রচনাযন্তর”। ইংরেজি ‘generator’ শব্দটির বাংলা দেখলাম ‘উৎপাদক’। নামটা কেমন জানি বিশ্রী শোনাচ্ছিলো আমার কানে। তাই আমি নাম দিলাম “রচনাযন্ত্র”, একটু সাবলীল করে করলাম “রচনাযন্তর”। কিন্তু রচনাযন্তরটিতে লক্ষ করলাম, মূল কবিতার বিভিন্ন hyphen ‘শব্দ’ তৈরির সময় বিশ্রীভাবে শেষে দেখা দিচ্ছে। তাই তারও বিহীত করলাম।

দেখতে কেমন?

পেশায় ডিযাইনার হওয়ায় বেশ কয়েকবার ডিযাইন বদল করলাম। সবশেষে তিনটি tab-এ তিনটি ফিচার আলাদা করে মনে হলো, এবারে কিছুটা গোছানো হয়েছে কাজটা। তাই শেষ পর্যন্ত প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিলাম…

কী কী করা যাবে?

এই যন্ত্রটি দিয়ে যে কাজগুলো করা যাবে:

  1. রচনাযন্তর দিয়ে
    • বাংলা অনুচ্ছেদ তৈরি করা যাবে (সর্বোচ্চ ১০০ অনুচ্ছেদ)
    • বাংলা বাক্য তৈরি করা যাবে (সর্বোচ্চ ১০০ বাক্য)
    • বাংলা শব্দ তৈরি করা যাবে (সর্বোচ্চ ১০০ শব্দ)
    • অনুচ্ছেদ, বাক্য, কিংবা শব্দ সম্পূর্ণটুকু এক ক্লিকে কপি করা যাবে
  2. নাম হিসেবে
    • ধর্মনির্বিশেষে পুরুষের নাম পাওয়া যাবে
    • ধর্মনির্বিশেষে নারীর নাম পাওয়া যাবে
    • তৈরিকৃত প্রতিটা নামের উপর ক্লিক করলে ঐ নামটি কপি হয়ে যাবে
    • তৈরিকৃত সকল নাম একত্রে এক ক্লিকে কপি করা যাবে
  3. একটি পূর্ণাঙ্গ নমুনা লেখা হিসেবে “অর্থহীন লেখা” পাওয়া যাবে
    • পূর্ণাঙ্গ লেখাটি এক ক্লিকে কপি করা যাবে

কোথায় পাওয়া যাবে এই যন্ত্র?

যন্ত্রটি নিচের লিংক থেকে যে-কেউ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। ভালো লাগলে Github-এর কোড রেপোযিটোরিতে ⭐ Star দিয়ে ভালোবাসা প্রকাশও করতে পারবেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল প্রকাশ করা হবে না

আপনি এই HTML ট্যাগ এবং মার্কআপগুলো ব্যবহার করতে পারেন: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

*