বিশ্ব ইজতেমার হাঁড়ির খবর

ধারাবাহিক:  হাঁড়ির খবর —এর একটি পর্ব

বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণের জন্য ট্রেনযোগে গমনরত মুসলমানরা (ছবি: লেখক)
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণের জন্য ট্রেনযোগে গমনরত মুসলমানরা (ছবি: লেখক)

বিশ্ব ইজতেমা বা বিশ্ব ইজতিমা মানে হলো সারা বিশ্বের সমন্বয়ে আয়োজিত যেকোনো বড় সমাবেশ। কিন্তু আমরা সাধারণত বাংলাদেশে, তাবলিগ জামাতের বার্ষিক বৈশ্বিক সমাবেশকে বিশ্ব ইজতেমা বলে জানি। আমার জানামতে আরো বিভিন্ন বেদ’আতপন্থী দল বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন করে থাকে, তাদের নিজস্ব মতাদর্শীয় লোকদের একত্র করতে। যাহোক, তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা সম্পর্কে আপনারা এই নিবন্ধ^ থেকেই বিস্তারিত জানতে পারবেন। যেসব কথা সচরাচর আলোচনা হয় না, সেগুলো বরং এখানে লিখি:

  • এই পুরো সমাবেশটি বাংলাদেশের লোকজন আয়োজন করে থাকেন, এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিহারী প্রতি বছর বিদেশী মেহমানদের খাবারের আয়োজন করে থাকেন সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত তহবিল থেকে। এই ব্যাপারটা আমি আব্বার কাছে শুনেছি, সত্যতা নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তবে ঐ ব্যক্তির সাথে কুশল বিনিময় করেছিলাম আমি একবার। অনেক মোটা, অনেক অনেক মোটা ঐ ব্যক্তি। দুই পা ছড়িয়ে বসে কাজ তদারকি করছিলেন।
  • বিদেশী মেহমানদের খাবার পরিবেশনের জন্য আলাদা একটা ক্যান্টিন এলাকা আছে। সেখানে দায়িত্বে নিয়োজিত হোন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্ররা, কারণ তারা বিভিন্ন ভাষা, বিশেষ করে ইংরেজি দিয়ে বিভিন্ন ভাষী মানুষদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন।
  • সমাবেশের ভিতরে কোথাও কোনো মুভি ক্যামেরা ঢুকতে দেয়া হয় না। টিভিতে যেসব দৃশ্য দেখা যায় সেগুলো নদীর এপার থেকে কিংবা মাঠের রাস্তা থেকে।
  • সমাবেশের নিরাপত্তার জন্য আয়োজনকারীদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কোনো সহায়তা চাওয়া হয় না, তবু সরকার নিজ দায়িত্বে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, আনসার, ও র‌্যাবের সম্মিলনে নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়। কারণটা আর কিছু না, [আল্লাহ না করুক] কোনো অঘটন ঘটে গেলে তখন সবাই সরকারকে দায়ী করবে, কেন সরকার বৈশ্বিক এই আয়োজনে নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা করেনি?
  • যে বিশাল মাঠটিতে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়, তা সমাবেশ বাদে বাকি সময়টুকুতে গোচারণভূমি থাকে। এমনকি বন্যার সময় পানির নিচে ডুবে যায়। তারপর প্যাঁচপ্যাঁচে কাদায় গরু চরাণোর কারণে পায়ের খুরের দাগ, মানুষের পায়ের দাগ মাটিতে দেবে বসে যায়। যদিও ইজতেমা আয়োজনের সময় স্বেচ্ছাসেবীরা মাটিকে যথাসম্ভব সমান করার চেষ্টা করেন, কিন্তু অনেক স্থানেই তবুও উঁচু-নিচু থাকে মাটি। ফলে বিছানা নরম হলে সেসব গর্তে শরীর পড়লে ব্যাথাও লাগে। কেউ কেউ বিছানা পাতার সুবিধার্থে গর্তগুলো নিজ দায়িত্বে ভরাটও করে থাকেন।
  • প্রতিবছরই ইজতেমা ময়দানে কিছু মানুষ মারা যান, তাঁদের জানাযাও সেখানে হয়। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই বয়স্ক ব্যক্তি।
  • প্রতিবছরই বেশ কিছু বিয়ে ইজতেমা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। শুধু বর ইজতেমা ময়দানে কবুল বলার মাধ্যমে নিজের সম্মতি জ্ঞাপন করেন। কনের সম্মতি তাঁর ঘর থেকে কাজি সংগ্রহ করে থাকেন। বিয়েগুলো ইজতেমার প্রথম দুই দিন আসরের নামায শেষে মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়।
  • এই মূল মঞ্চটা আসলে একটা ঘরের ছাদ, যে ঘরটা হলো পাওয়ার সুইচিং হাউজ। এখান থেকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
  • তাবলিগ জামাতে সাধারণত মুহাম্মদের [স.] মূল সুন্নতের অনুগামী থাকার চেষ্টা করা হয়, যাতে সেই সময়কার স্বাদটা উপহার দেয়া যায়। এজন্য নামায আর আযানের ব্যবস্থাটি হয় কোনো মাইকের ব্যবহার না করে। এজন্য মূল মঞ্চের একটু সামনে অস্থায়ী মিহরাবে ইমাম দাঁড়ান। তিনি তাকবির দেয়ার সাথে সাথে মূল মঞ্চের উপরে দাঁড়ানো একঝাঁক জিম্মাদার তখন সমস্বরে চিৎকার করে তাকবির পুণর্বার আওড়ান। তাঁদের আওয়াজ উড়ে যায় বিভিন্ন খিত্তার দায়িত্বে থাকা আরো অনেক অনেক জিম্মাদারের কাছে। সেখানে তাঁরা আবার সেই আওয়াজ পুণরাবৃত্তি করেন। এভাবেই পুরো মাঠের সর্বত্র আওয়াজ পৌঁছে যায় ইমাম সাহেবের, আর সেই আওয়াজে মুক্তাদিরা নামায আদায় করেন। আযানের সময় প্রত্যেক খিত্তার জিম্মাদার আলাদা আলাদাভাবে আযান দিয়ে থাকেন।
  • আখেরি মোনাজাতের দিন কিংবা শেষের দুই দিন মূল মিহরাবটি সরিয়ে রাস্তা পার করে তুরাগ নদীর অপর পাশে, রাস্তার ঢালে নিয়ে যাওয়া হয়, যাতে অতিরিক্ত মানুষদের সংকুলান করা যায়, আর সবার সামনে ইমামের অবস্থান থাকে। কেননা ঐসময় এতো বেশি মানুষ জমায়েত হয় যে, ইমাম আগের জায়গায় দাঁড়ালে তাঁর সামনে কিছু মানুষকে দাঁড়াতে হবে, অথচ ইমামকে সবার সামনে দাঁড়াতে হয়।
  • প্রচুর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রচার-প্রসারের স্বার্থে কিংবা শ্রেফ জনসেবার জন্য সমাবেশে আগত মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ প্রদান করে থাকে। রেডক্রিসেন্ট অবশ্য সেবার স্বার্থেই সেখানে যায়।
  • কোনো কোনো সংগঠন কিংবা পত্রিকা ইজতেমার বিভিন্ন অংশের মানচিত্র ছাপায়। লিফলেট আকারে ছাপানো মানচিত্রগুলো আবার বিনামূল্যে বিতরণও করা হয়। রাস্তায় রাস্তায় “বিশ্ব ইজতেমা সফল হোক” লিখে ব্যানার টাঙানো হয় -মূল উদ্দেশ্য দোয়া করা নয়, প্রচার।
  • আগে গণমাধ্যম এই সমাবেশে সরাসরি সংশ্লিষ্ট না হলেও এখন অনেক গণমাধ্যমই সমাবেশের আখেরি মোনাজাত সরাসরি সম্প্রচার করে। তবে টিভি-রেডিও কেউই মাঠের ভিতরে যায় না, দূরের উঁচু বিল্ডিং থেকে রাস্তায় কিংবা আশপাশে জমায়েত মানুষদের ভিডিও করে, ছবি তোলে। আর রাস্তায় লাগানো মাইকের আওয়াজ থেকেই মোনাজাত সম্প্রচার করে।
  • বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে সমাবেশস্থলে আমন্ত্রণ জানানো হয় না, কিন্তু দেশের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি সেখানে আখেরি মোনাজাতে, এবং কখনও জুমার নামাযে, নিজস্ব নিরাপত্তা প্রটোকলে অংশগ্রহণ করেন। আমি নিজে ভিতরে থেকে দেখেছি, বয়ান চলছে, রাষ্ট্রপতি এলেন, তাঁর সম্মানটুকু শুধুমাত্র তাঁর প্রটোকলের সৈন্যদের কাছেই, আর কেউ ঘুরেও তাকাচ্ছে না তাঁর দিকে। তিনি গিয়ে মাওলানাদের পাশে মঞ্চে উঠলেন, চেয়ারও রাখা হয়নি তাঁর জন্য, কোনো আয়োজনই নেই, তারপর চেয়ার দিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হলো তাঁর।
  • ইজতেমা ময়দানে একটা অলিখিত নিয়ম সব তাবলীগিরা মেনে চলার চেষ্টা করেন, নিজের ডানদিকে চলি। সর্বত্রই স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতিনিয়ত এই কথাটা আওড়াতে থাকেন, আর সাথে এও আওড়ান: যিকিরে ফিকিরে চলি। যিকির হলো আল্লাহর স্মরণ আর ফিকির হলো ধ্যান -এমন ধ্যান যে কিভাবে ইসলাম সারা বিশ্বব্যাপী মানুষের অন্তরে ছড়িয়ে পড়বে। চলার পথে স্বীয়-ডান-নীতি অনুসরণের ফলে ধাক্কাধাক্কি হয় না প্রায়, মানব জটও কম লাগে। কিন্তু যারা হুজুগে আগ্রহী হয়ে সেখানে যান, তারা এই নিয়মটা জানেন না, বাইরে থেকে গিয়ে অংশগ্রহণ করে চলে আসেন। তখন তাদের মুখে নানারকম কুৎসা শোনা যায় -এতো এতো মানুষের যাতায়াতের কোনো নিয়ম নেই। আসলে নিয়ম আছে, মানুষ জানে না বলে মানে না। রাস্তায় নিজের ডানদিকে চলা সুন্নত।
  • ইজতেমা ময়দানে যেখানে পুরুষরা দলবদ্ধ হোন, তখন মহিলারা যারা তাবলিগের কাজে বেরোন, তারা স্থান নেন নিকটবর্তি কোনো তাবলিগী সাথীর বাড়িতে। সেখানেই থাকেন তারা।
  • ইজতেমা ময়দানে আগত বিদেশীদের নিজেদের পাসপোর্ট জমা রাখতে হয় একজন জিম্মাদারের কাছে আয়রন সেফে। কারো কারোটা জমা রাখা হয় কাকরাইল মসজিদে।
  • যেহেতু শীতের সময়ে ইজতেমার আয়োজন করা হয়, তাই বিদেশী মেহমানদের বিশেষ সুবিধা দিতে বিশাল বিশাল পানির ট্যাংকের নিচে ফুলের মতো করে পাইপ লাগিয়ে বিশেষভাবে বানানো গ্যাসের চুলা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে উত্তপ্ত করা হয় পানি। কিন্তু এতো মানুষ ওযু করতে থাকে, যে একদিকে পানি এসে পড়তে থাকে ট্যাংকে, আরেক দিকে বেরিয়ে যেতে থাকে ওযুখানায়, পানি অতি উত্তপ্ত হওয়ার সুযোগই পায় না, হালকা কুসুম গরম পানি পরিবেশিত হয়।
  • বিদেশী মেহমানদের পরিবহনে বিশেষ স্টিকার দেয়া গাড়ি ব্যবহৃত হয়। স্বেচ্ছাসেবকরা এইসব গাড়ি চালিয়ে থাকেন, এজন্য না কোনো পারিশ্রমিক চান, আর না জ্বালানী খরচ। তবে ড্রাইভাররা স্ব স্ব মালিকের থেকে বেতন নিয়ে থাকেন।
  • প্রতি বছর মাঠের নির্দিষ্ট স্থানে অস্থায়ী সেনিটারি পায়খানা তৈরি করা হয় রিংস্ল্যাব আর স্ল্যাব-কমোড বসিয়ে, চটের বেড়া দিয়ে। সমাবেশ শেষ হলে গর্তগুলো আবার মাটি ভরাট করে রেখে দেয়া হয়। পরের বছর আবার মাটি খুঁড়ে নতুন করে স্ল্যাব বসানো হয়।
  • চটে ঘেরা সেসব পায়খানা ব্যবহার করার রীতিটাও চমৎকার: ভিতরে যিনি আছেন, তিনি অযাচিত অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কিছুক্ষণ পর পর কাশি দেন কিংবা গলা দিয়ে আওয়াজ করে নিজের অবস্থান জানান দেন। আর বাইরে যিনি আছেন, তিনি ভিতরে যাবার আগে আঙ্গুল চটের গায়ে টোকা দেন, এতে পটপট আওয়াজ হয়, ফলে ভিতরের ব্যক্তিটি সে অনুযায়ী নিজের অবস্থান জানান দেন। কেউ না থাকলে ভেতর থেকে আওয়াজ আসে না, তখন আগন্তুক ভিতরে চলে যান।
  • শীতের সময় আয়োজিত হয় বলে বৃষ্টি সাধারণত হয় না সেখানে। কিন্তু কখনও কখনও হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টি এসে ঝামেলায় ফেলে দেয় সবাইকে। কারণ পুরো মাঠটাই চটের ছাউনিতে ঢাকা থাকে, যা বৃষ্টি আটকাতে পারে না। তখন অংশগ্রহণকারী সাথীরা দ্রুততার সাথে পলিথিন কিনে নিজেদের মূল্যবান জিনিসপত্র নিরাপদ করে থাকেন। ইদানিং কেউ কেউ বড় পলিথিন সঙ্গে করে নিয়ে আসেন।
  • কিন্তু ২০‌১০-এর ইজতেমায় বাংলাদেশে দেখা দেয় নিম্নচাপ, আর তার প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি হতে থাকে সমাবেশ প্রাঙ্গনে। সেবারই প্রথম, তিনদিনের বদলে, আলোচনাসাপেক্ষে (মাসওয়ারা করে) দ্বিতীয় রাতেই আকষ্মিকভাবে আখেরি মোনাজাত করে সেবারের মতো সমাবেশের ইতি টানা হয়, যাতে অংশগ্রহণকারীরা দ্রুত বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট কষ্ট থেকে কাঙ্ক্ষিত স্থানে আশ্রয় নিতে পারেন।
  • অনেকেই, বড় জামাতের সাথে জুম’আর নামায আদায় করার জন্য ইজতেমা ময়দানে ছুটে যান শুক্রবারে। কিন্তু সেটা একটা উন্মুক্ত মাঠ, কোনো মসজিদ নয়, ফলে বড় জামাতের সওয়াব পেলেও অংশগ্রহণকারীরা মসজিদে নামায আদায়ের জন্য অতিরিক্ত সওয়াবটুকু পান না। কেউ কেউ হুজুগে নামাযে যান বলে কোথায় দাঁড়াচ্ছেন, কিভাবে দাঁড়াচ্ছেন, তার হিসাব করেন না, ফলে অনেক সময়ই কাতার বা সারি ঠিক না করার কারণে শাস্ত্রীয়ভাবে নামাযই হয় না (অবশ্য আল্লাহ ক্ষমা করে দিলে ভিন্ন কথা)।

বিশ্ব ইজতেমা সম্পর্কে মিডিয়া একটা কথা খুব বেশি প্রচার করে থাকে যে, হজ্জ্বের পরে এই সমাবেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত। দাবিটা যাচাই করার কোনো উপায় নেই, সেরকম কোনো স্ট্যাটিস্টিক্স নেই। এই কথাটা কিন্তু তাবলিগের কোনো কর্তৃপক্ষ কক্ষণোও বলেননি। কিন্তু মিডিয়া এই কথাটা খুব ফলাও করে প্রচার করে। সমস্যা হলো আমি আশংকা করছি যে, এভাবে চলতে চলতে একসময় কথার বিবর্তনে কথাটা যা হবে: বিশ্ব ইজতেমা হলো দ্বিতীয় হজ্জ্ব। তারপর সেই কথাটা আরেকটু রঙিন হয়ে হয়ে যাবে: এটা হজ্জ্বের বিকল্প। ইজতেমায় অংশগ্রহণ করলেই হজ্জ্ব হয়ে যাবে। …তাহলে বুঝুন সমস্যাটা কত প্রকট হবে তখন? তাই ভবিষ্যতে রং চড়িয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থ ধারণ করতে পারে যে কথাটা, সেই কথাটা আমি গণমাধ্যমকে দৃঢ়ভাবে পরিহার করতে অনুরোধ করবো।

প্রসঙ্গত একটা কথা বলি: আমরা সবাই জানি বাংলাদেশে, ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ময়দানে। এখন সেটাও মিডিয়াকে আকর্ষণ করেছে। মিডিয়া ঐ নামায-খুৎবা সরাসরি সম্প্রচার করে। ভালো কথা। কিন্তু সমস্যাটা হলো সেদিন, যেদিন একুশে টিভির সাংবাদিক ক্যামেরার সামনে বললেন, কথিত আছে এই ময়দানে নামায আদায় করলে একটি কবুল হজ্জ্বের সওয়াব পাওয়া যায়। আশা করছি বিষয়টা সবাই বুঝতে পারছেন যে, এই ময়দানকে মুহাম্মদ [স.] চিনতেনই না, কোনো হাদিসে তিনি এমন কথাও বলে যাবার প্রশ্নই তাই উঠেনা; পুরো ব্যাপারটাই বানোয়াট, হুজুগে বাঙালির প্রবোধ। এমনকি আমি এমনও মানুষ দেখেছি, ঈদের রাতে (অনেকেই যাকে চাঁদ রাত বলে) গাড়ি ভাড়া করে শোলাকিয়া যাবার প্রস্তুতি নেন অনেকে। এসব যে হুজুগ, তা আর বলে বোঝানো লাগে না। সমস্যা হলো এই হুজুগ কোনো একটা বিষয়ের, এমনকি ইবাদতের মূল অংশটি নষ্ট করে লৌকিকতা এনে দেয়।

ঠিক এমনটাই ইজতেমায় যান অনেকে হুজুগে। গাড়ি ভাড়া করে আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করে কোন বেহেস্ত যে কামান, আল্লাহই জানেন। আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে ফযরের-যোহরের নামায না পড়ে কিংবা কা’যা করে আসলেই কি তারা বেহেস্ত পান কিনা তাও আল্লাহই জানেন। তাই হুজুগ নয়, বুঝে যেকোনো কাজ করার অনুরোধ সকলের প্রতি। তাবলিগের মূল উদ্দেশ্য বুঝে তাবলিগের প্রতি সমর্থন কিংবা বিরোধিতা প্রকাশ করুন। হুজুগ দিয়ে সবকিছুর মূল আবেদন নষ্ট করে লাভ কিছুই হয় না, হুজুগ শেষ হলে সব হারিয়ে যায়। একদিনের ধার্মিক হওয়ার চেয়ে সবসময়ের ধার্মিকই কিন্তু বেশি দামি।

-মঈনুল ইসলাম

বিশেষ দ্রষ্টব্য: উইকিপিডিয়ার নিবন্ধটা আসলে আমারই শুরু করা, তাই অনেক কিছুই ওটার সাথে মিলে যাবে, আপনারা আবার নকল ভাববেন না। 🙂

_________________________

প্রচ্ছদের ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেয়া (মূল ছবি^)। ছবিটি তুলেছেন উইকিপিডিয়ান জুবায়ের (Jubair1985)। আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল প্রকাশ করা হবে না

আপনি এই HTML ট্যাগ এবং মার্কআপগুলো ব্যবহার করতে পারেন: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

*