ধারাবাহিক: ইংরেজিভীতি থেকে ইংরেজিপ্রীতি —এর একটি পর্ব
আমরা দেখেছিলাম, ভাষাশিক্ষার জন্য ব্যাকরণ হচ্ছে সবচেয়ে পরের জিনিস। আর লুবাব সাহেবের অন্তর্দৃষ্টি অনুসারে ভাষা শিক্ষার দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে “ভাষাকে শুনতে শেখা”। আজ আমরা এই দ্বিতীয় ধাপ নিয়েই আলোচনা করছি:
যাদের ইংরেজিতে দুর্বলতা আছে, ছিল, স্কুল-কলেজ-জীবনে তারা ইংরেজি শিক্ষকের কাছে ধর্ণা দেননি এমন ইতিহাস নেই। আর ইংরেজি শিক্ষকের প্রত্যেকটা কথা আপ্তবাক্য হিসেবে মানতেও তাদের কমতি ছিল না। আর সেসকল ইংরেজি শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের যে সহজ আর সুন্দর পরামর্শটা অনায়াসে দেন, সেটা হলো:
- “বেশি বেশি বিবিসি দেখবা”
- “প্রতিদিন ডেইলি স্টার পড়বা”
আর তাদের মধ্যে গুটিকয়েক শিক্ষক বলেন:
- “ইংলিশ মুভি দেখবা”
[ad 3]
আর যারা ইংরেজি শিখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে, তারা এই সিলেবাস পেয়ে যার-পর-নাই খুশি হয়, এবং পরদিন থেকেই ডেইলি স্টারের বিক্রী, আর বিবিসি’র টিআরপি বেড়ে যায়।
কিন্তু আখেরে যেই লাউ, সেই কদুই থেকে যায় – লাভের খাতায় শূণ্য। ইংরেজি আর শেখা হয় না।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন?
বলছি… ধরা যাক, আজকে ওমুক জায়গায় একটা দুর্ঘটনা ঘটলো, কিংবা আমেরিকায় টুইন টাওয়ারে হামলা হয়েছে। আপনি খুব উন্মুখ হয়ে আছেন খবর শোনার জন্য। চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা সংবাদ চ্যানেল আপনি দেখছেন?
কেন? কেন দেখছেন?
কেন আবার? খবরটা জানার জন্য। এতোগুলো মানুষ মরলো? কিভাবে কী হলো, সেটা জানার একটা আগ্রহ আছে না?
গুড। তারমানে আপনি এই চ্যানেলগুলো ‘বাংলা’ ভাষা শোনার জন্য আর ‘বাংলা’ ভাষা শেখার জন্য দেখেননি, তাই না?
না তো, প্রশ্নই উঠে না।
ঠিক তাই। অথচ, আপনি যখন বিবিসি খুলে বসেছিলেন, আপনি খবরের দিকে মনোযোগী ছিলেন না, সিরিয়ায় কী ঘটছে, ইযরাইলে কী ঘটছে, অলিম্পিকে ফেল্প্স আরেকটি স্বর্ণ জিতলেন কি না, উসাইন বোল্ট এবারও কি মাত করতে পারবেন – এসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের মত কী – এসবে আপনি কান দেননি। আপনার খেয়াল ছিল, ঐ খবর পাঠক/পাঠিকা কিভাবে ইংরেজি উচ্চারণ করছেন? কিভাবে তিনি “ঔলিম্পিক গেইম্স” (Olympic Games) উচ্চারণ করছেন – এটা আপনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
Water | Wotah |
Night | Noit |
Liar | Layah |
What | Whoat |
Tuesday | Chusdei |
Harry Potter | Herwi Potah |
ডেইলি স্টার খুলে বসে আপনি দাঁত ভাঙ্গা ইংরেজি শব্দের কী মানে, সেটা ডিকশোনারি থেকে মেলাতে বসে গিয়েছিলেন, কিংবা নিদেনপক্ষে ইংরেজি শেখার চেষ্টা করেছেন – ভুলেও আপনি খবরটা জানার চেষ্টা করেননি, জানার চেষ্টা করেননি, সিদ্দিকুর রহমান কিভাবে ওলিম্পিকে অটোসিলেক্টেড হলেন… অথচ আপনি খবরটা পড়েছেন…
সমস্যাটা সেটাই।
আপনি বন্ধুর থেকে ধার করে হলিউডের মুভি এনেছেন, বন্ধু আপনাকে দারুণ একটা মুভি দিয়েছে, আপনিও মুভিটা দেখেছেন, আর ডায়লগগুলো থেকে ইংরেজি উচ্চারণশৈলী আর অর্থ ধরার চেষ্টা করেছেন… মুভিটা উপভোগ করতে চেষ্টাও করেননি…
সমস্যাটা সেটাই।
আমি লিখে দিতে পারি, যাদের ইংরেজিতে দুর্বলতা আছে, তারা এই লেখার আর কিছু মনে রাখতে পারুন না পারুন, ডানদিকের এই টেবিলটার কিছু উচ্চারণ তারা ঠিকই রপ্ত করে ফেলবেন।
সমস্যাটা সেটাই।
চিন্তা করে দেখুন তো, আপনি ছোট থাকাকালীন যখন মা-বাবার মুখ থেকে ভাষা শুনছিলেন, শুনতে শিখছিলেন, তখন কি আপনি তাদের উচ্চারণশৈলী নিয়ে গবেষণা করেছিলেন? ডিকশোনারি বের করে অর্থ বের করার চেষ্টা করেছিলেন? শ্রেফ শুনেছেন, শ্রেফ শুনেছেন। আপনার বাবা/মা যখন আপনাকে বলেছিলেন, “এদিকে এসো…” তখন কি আপনি তাদের উচ্চারণশৈলী নিয়ে গবেষণা করেছিলেন? নাকি ডিকশোনারি এনে শব্দগুলোর অর্থ খুঁজেছিলেন? বরং মা-বাবা মুখের ভাষা দিয়ে কী বোঝাতে চাইছিলেন, সেটা ধরতে চেষ্টা করেছিলেন মাত্র। আর এটাই হলো চাবিকাঠি।
ভুলে যান আপনি ইংরেজি শুনছেন, কী বোঝানো হচ্ছে, সেদিকে নজর দিন।
খবরটা বুঝুন, খবরের পাঠশৈলী না।
গল্পটা বুঝুন, মুভির ডায়লগ না।
ভাষা আপনা-আপনি আপনার মধ্যে জায়গা করে নিবে।
যদি এই ধারাবাহিক ঠিকমতো বুঝে থাকেন, তাহলে এ পর্যন্ত আপনি ভাষাকে দেখতে শুরু করে দিয়েছেন, আর এখন ভাষাকে শুনতেও শুরু করে দিয়েছেন। আপনি ভাষা শিক্ষার পথে অর্ধেক পথ পাড়িই দিয়ে দিয়েছেন। সত্যি বলছি।
সাথে থাকুন… বাকিটাও পাড়ি দিবো ইনশাল্লাহ।
(চলবে…)
– মঈনুল ইসলাম